ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সব খাত থেকে ফ্যাসিস্টদের সরানোর দাবি উঠেছে। অনেক জায়গায় রদবদলও এনেছে সরকার। দীর্ঘদিন একচ্ছত্র টেন্ডারবাজি করা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কালো তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ এখনো আওয়ামী লীগের দোসরদের দখলে। সিন্ডিকেট করে বই ছাপার কাজ এখনো নিজেদের কব্জায় রেখেছেন তারা।
Advertisement
তেমনই একজন মো. রাব্বানী জব্বার। তিনি আনন্দ প্রিন্টার্স লিমিটেডের মালিক এবং বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান। তিনি সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের ছোট ভাই। তাছাড়া রাব্বানী ২০২১ সালে নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, চলতি বছর প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির দুই লটে (৪৯-৫১) তিন লাখ বই ছাপার কাজ পেয়েছেন রাব্বানী জব্বার। মানিকগঞ্জের সিংগাইরের বিনোদপুরে তার ছাপাখানা। বই ছাপার কাজ শুরুর পর এনসিটিবির পরিদর্শন টিম সেখানে গিয়ে নানা অনিয়ম পেয়েছেন। এ কারণে গত ২১ নভেম্বর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে এনসিটিবি। নোটিশের কপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে।
শোকজ নোটিশের একটি কপি জাগো নিউজের হাতে এসেছে। তাতে এনসিটিবি উল্লেখ করেছে, মানিকগঞ্জের সিংগাইরের বিনোদপুরে আনন্দ প্রিন্টার্স লিমিটেডের ছাপাখানায় গত ১৯ নভেম্বর সরেজমিন পরিদর্শনে যান এনসিটিবির টিমের সদস্যরা। সেখানে গিয়ে বাঁধাই করা ২০ হাজার বইয়ে নানা অনিয়ম ও ত্রুটি পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১০ হাজার বইয়ের কাটিং নিয়ে সমস্যা। বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো এলোমোলো হয়ে বেরিয়ে আছে। দুটি পৃষ্ঠা পুরোপুরি বেরিয়ে আসছে, অর্থাৎ খোলা।
Advertisement
উপজেলা নির্বাচনে রাব্বানী জব্বারের প্রচারণায় পোস্টার
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রথম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের বাইন্ডিং ঠিক নেই। বইয়ের সামনের ও পেছনের মলাট খুলে যাচ্ছে। তাছাড়া বই ছাপার ক্ষেত্রেও নানান অনিয়ম দেখা গেছে।
শোকজ নোটিশ পাওয়ার পর পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে বইয়ের এসব ত্রুটি ও অনিয়মের বিষয়ে যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে টেন্ডারের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছে এনসিটিবি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘বই ছাপা ও বাঁধাইয়ে কোনো অনিয়ম হলে এবার কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অন্যান্যবারের চেয়ে ইনস্পেকশন টিম এবার বেশি তৎপর থাকবে। কেউ নিম্নমানের বই দিলে বিলতো পাবেই না, উল্টো কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।’
Advertisement
বই ছাপার কাজ আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা পেলেন কীভাবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মুদ্রণ শিল্প সমিতিতে একটি সিন্ডিকেট আছে। সেটা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের দখলে। সেটা যেহেতু একটি সমিতি, সেখানে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এবার তড়িঘড়ি টেন্ডার হওয়ায় নানাভাবে সর্বনিম্ন দরপত্র দিয়ে তারা কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। আগামীতে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুধু একটি ছাপাখানা বা প্রতিষ্ঠান নয়, সব জায়গায় তদারকি করা হচ্ছে। যেখানেই অনিয়ম পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই এনসিটিবি ব্যবস্থা নেবে।’
অভিযোগ বিষয়ে জানতে আনন্দ প্রিন্টার্স লিমিটেডের মালিক রাব্বানী জব্বার সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। দুই দফায় পরিচয় ও অভিযোগের বিষয় উল্লেখ করে এসএমএস করলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
এএএইচ/এমআইএইচএস/এএসএম