বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে অটোমেশন পদ্ধতি চালু হয়েছিল ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে। আগের এক দশকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর এ পদ্ধতি চালু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ পদ্ধতির ফলে মেধাতালিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা পছন্দের প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে পারেন। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন খুশি, অভিভাবকরাও সন্তুষ্ট।
Advertisement
তবে এমন পদ্ধতি রাখার পক্ষে নন বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে তারা মন্ত্রণালয়ে চিঠি ও চাপ প্রয়োগসহ নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। যদিও মেডিকেলে ভর্তির এ পদ্ধতি থেকে ‘সরে আসার সম্ভাবনা নেই’ বলছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবার অটোমেশন পদ্ধতিতে রাজধানীর গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান হাসিব। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, অটোমেশন পদ্ধতি থাকায় আমি এখানে ভর্তি হতে পেরেছি। যাদের টাকা আছে তারা আগে নানা রকম লবিং ও চাপ প্রয়োগ করে ভালো বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি হয়ে যেতো। ফলে মেধা অনুযায়ী সবাই ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেতো না। আমরা এই ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে খুবই খুশি।
আরও পড়ুন
Advertisement
অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল চেয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে চিঠি দেয় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন। চিঠিতে সংগঠনটির সভাপতি এম এ মুবিন খান ও সাধারণ সম্পাদক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, অটোমেশন একটি বৈষম্যমূলক পদ্ধতি, এটি বাতিল করতে হবে। অটোমেশনের কারণে অর্থ থাকলেও পছন্দের কলেজে অনেকেই ভর্তি হতে পারছেন না।
প্রথম থেকেই এই ব্যবস্থা নিয়ে চাপ ছিল, যা সবসময়ই থাকে। তবে এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা মেধার ভিত্তিতে পছন্দের মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারে। পদ্ধতিটি নিয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার সন্তুষ্ট।- ডা. মুজতাহিদ মুহাম্মদ হোসেন
অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল করে আগের ব্যবস্থায় ফিরে গেলে শিক্ষার্থী ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সুবিধা হবে বলে মনে করছে অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়া পদ্ধতিটি বাতিল চেয়ে নিয়মিত সভা, সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতিও প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
অটোমেশন পদ্ধতি চালুতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) ডা. মুজতাহিদ মুহাম্মদ হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে জানান, অতীতে অনেক অনিয়মের অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই অটোমেশন পদ্ধতি চালু করেছি।
Advertisement
‘প্রথম থেকেই এই ব্যবস্থা নিয়ে চাপ ছিল, যা সবসময়ই থাকে। তবে এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা মেধার ভিত্তিতে পছন্দের মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারে। পদ্ধতিটি নিয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার সন্তুষ্ট।’
বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কর্তৃপক্ষ কেন এ পদ্ধতির বিরোধিতা করছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকে বলেন তাদের আসন পরিপূর্ণ হচ্ছে না। এজন্য তারা অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল চান। তবে এটিও ঠিক যে, যেসব মেডিকেলের মানহীন অবস্থা সেখানে শিক্ষার্থীরা কম ভর্তি হতে চাইবে সেটা স্বাভাবিক। এছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে একটা কোটা থাকে, সেখানেও প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারছেন না। এ কারণেও আসন খালি থাকছে। অনেক ক্ষেত্রে পুনরায় আবেদনের মাধ্যমে ফাঁকা আসনগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে হয়।
ডা. মুজতাহিদ মনে করেন, প্রতিষ্ঠানের সার্বিক মানোন্নয়ন হলে শিক্ষার্থী ভর্তি হবেই। এত টাকা খরচ করে মানহীন প্রতিষ্ঠানে কেউ পড়তে যেতে চায় না। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও সেটি চান না।
অটোমেশন পদ্ধতি চালুর ফলে এখন শুধু টাকা থাকলেই পছন্দের মেডিকেল কলেজে ভর্তি সুযোগ পাওয়া যায় না, থাকতে হয় মেধার যোগ্যতাও
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে সামনের সারিতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির জন্য বরাবরই শিক্ষার্থীদের চাপ থাকে। অনেক সময় এমন জায়গা থেকে তদবির করা হতো যা প্রতিষ্ঠানগুলোও উপেক্ষা করতে পারতো না। আবার অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা দিয়েও ভর্তির বিষয় থাকতো। মেধাতালিকার সামনের দিকে থাকা অনেক শিক্ষার্থীকে ‘আসন শেষ’ বলে কর্তৃপক্ষ স্বজন কিংবা অর্থের বিনিময়ে অন্যদের ভর্তি করিয়ে দিতো। অটোমেশনের কারণে এসব অনিয়ম বন্ধ হয়েছে। ফলে এ পদ্ধতিটি বাতিল বা পরিবর্তন করা উচিৎ হবে না বলে মনে করছেন তারা।
আরও পড়ুন
মেডিকেল শিক্ষায় স্বায়ত্তশাসন চান চিকিৎসকরামেডিকেল ভর্তিতে এগিয়ে ছাত্রীরাসংশ্লিষ্টরা জানান, অটোমেশন পদ্ধতির ফলে এখন শুধু টাকা থাকলেই পছন্দের মেডিকেল কলেজে ভর্তি সুযোগ পাওয়া যায় না, থাকতে হয় মেধার যোগ্যতাও। সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির পরীক্ষা একই দিনে এবং একই মানে হয়ে থাকে। সেখানে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রথমে সরকারি মেডিকেলে ভর্তি হয়, এরপর তারা মেধাতালিকা অনুযায়ী নিজেদের পছন্দের বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি হতে পারে।
বর্তমানে দেশে মেডিকেল কলেজ আছে ১১০টি। এরমধ্যে সরকারি ৩৭টি এবং বাকি ৬৭টি বেসরকারি। আর্মড ফোর্সের মেডিকেল কলেজ আছে একটি এবং আর্মি মেডিকেল কলেজ আছে পাঁচটি। সেনাবাহিনীর অধীনে ও তত্ত্বাবধানে এসব মেডিকেলে পৃথক ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে।
অটোমেশন পদ্ধতি বাতিল হবে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. সাজেদ আব্দুল খালেক জাগো নিউজকে বলেন, আমরা অটোমেশনের বিষয়ে বৈঠক করেছি। এ পদ্ধতি বাতিল করা যাবে না মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে সবাই একমত হয়েছি। এরপর বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কর্তৃপক্ষ এটি নিয়ে নানা তৎপরতা শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আবারও আলোচনায় বসি। সেখানেও অটোমেশন পদ্ধতির পক্ষে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। এ পদ্ধতি বাতিল করার কোনো সুযোগ নেই।
এএএম/এমকেআর/জেআইএম