বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
Advertisement
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে সোমবার (১৮ নভেম্বর) মামলাটি দায়ের করেন চট্টগ্রাম নগরের নন্দনকাননের বাসিন্দা কফিল উদ্দিন। কফিল যুবলীগের সদস্য এবং তিনি নিজেও ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলা সংক্রান্ত মামলার আসামি, যা ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রায়ান বাদী হয়ে গত ১০ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ২৩ নম্বর আসামি হিসেবে কফিলের নাম রয়েছে।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় অস্ত্র ও মাদকসহ দুটি মামলা এবং আনোয়ারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। কফিল একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন।
Advertisement
সূত্র জানায়, কফিল উদ্দিন রাজনৈতিকভাবে যুবলীগের সঙ্গে যুক্ত এবং তিনি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের সমর্থক বলে জানা গেছে।
কফিল উদ্দিনের পক্ষে চট্টগ্রাম আদালতে মামলাটি করেন তার আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী বলেন, আমি বাদীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মামলা করেছি। এর বেশি কিছু জানি না।’
কফিলের দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আবদুল্লাহ আল মামুন এবং ২৬ পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৮৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ছাত্র আন্দোলনে আহত ও মামলার বাদী রায়ানকে অভিযুক্তদের একজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা বিক্ষোভ চলাকালীন গুলি এবং ককটেল বোমার বিস্ফোরণের মাধ্যমে এক যুবককে আহত করার সঙ্গে জড়িত।
Advertisement
যুবলীগের সঙ্গে তার অতীত সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত করে কফিল উদ্দিন বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি এক সময় যুবলীগের অংশ ছিলাম। বাবর ভাইয়ের সঙ্গে রাজনীতি করতাম। তবে ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে হামলা আমাকে আহত করেছে। সেজন্য আমি প্রতিবাদে যোগ দিয়েছি। আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি,’- বলেন তিনি।
কফিলের দাবি, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমনকি তিনি অভিযোগ করেন, ‘রায়ানকে প্ররোচিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
কফিল রায়ানের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে রায়ানের কোনো দোষ নেই। তাকে ব্যবহার করা হয়েছে।’
কফিলের অভিযোগের বিষয়ে রায়ান বলেন, ‘৪ আগস্ট, কফিল সরাসরি নিউ মার্কেটে হামলায় অংশ নিয়েছিল। ওই হামলায় আমি গুরুতর আহত হয়েছিলাম, আমার চোখে ও হাতে বন্দুকের গুলি লেগেছিল। আমাকে ফাঁসানোর জন্য পাল্টা মামলা করা হয়েছে।’
এদিকে কফিলের দায়ের করা মামলায় ২৬ পুলিশ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই ঘটনার সময় অন্য এলাকায় কর্মরত ছিলেন। তাদের একজন হলেন চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন, যিনি ঘটনার দিন ঢাকার তেজগাঁও থানায় কর্মরত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কফিল দাবি করেন, ‘এই পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হামলা হয়েছে। সে কারণেই তাদের আসামি করা হয়েছে।’
এএজেড/এমএএইচ/জিকেএস