১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের লক্ষ্য থেকে সরে আসছে সরকার। বিদ্যুৎ, গ্যাস, অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংখ্যা পাঁচ অথবা দশটি হবে। কবে নাগাদ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবকাঠামো নিশ্চিত করা হবে তারও একটি টাইমলাইন দেওয়া হবে।
Advertisement
‘বাংলাদেশের ব্যবসা পরিবেশ এবং প্রক্রিয়া; অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এজেন্ডা’ শিরোনামের এক সংলাপে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ অনুষ্ঠানে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে নিজের ভাবনার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
রোববার (১৭ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর হোটেল ব্র্যাক ইনে এ আয়োজনে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সরকারের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা ও দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সংলাপ পরিচালনা করেন।
গত এক দশকে প্রায় ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৬৮টি গড়ে তোলার কথা সরকারের এবং ২৯টি গড়ে তুলবে বেসরকারি খাত। এগুলো গড়ে তোলার প্রাথমিক সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০৪১ সাল। তবে গত এক দশকে মাত্র ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু করা গেছে। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর এসব অঞ্চলগুলোর ভাগ্য সুতোয় ঝুলছিল।
Advertisement
সিপিডির অনুষ্ঠানে আশিক চৌধুরী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে পাঁচটি বিষয় উন্নয়নের চেষ্টা করছি। প্রথমেই আমরা সেবার মান বাড়ানোর চেষ্টা করছি। সেখানে ব্যবসায়ীদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। বিডা, বেজা বেপজা, হাইটেক পার্ক সব কিছুকে একীভূত করার চেষ্টা করছি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলছি; তাদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইকোনমিক জোনে ব্যবসায়ীদের অবকাঠামো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। কিন্তু সেগুলো দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ১০০ ইকোনমিক জোন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা এটা কমাবো। কতগুলো ইকোনমিক জোন হবে সেটার ঘোষণা হবে। কিন্তু সেটা ১০ এর কম হবে বা ৫ হতে পারে। সেখানে সকল অবকাঠামো নিশ্চিত করা হবে। ব্যবসায়ীরা কবে সেই অবকাঠামো পাবে সেই টাইমলাইন দেওয়া হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, প্রয়োজনে বিজনেস রেগুলেটরি রিফর্ম কমিশন গঠন করা হবে। সরকারের উচ্চপর্যায় পর্যন্ত স্বার্থের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা সরকারের কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনছি। আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর বলেন, ইলন মাস্ক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিবেক রামাস্বামীকে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’এর দায়িত্ব দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদি বলা আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে এ ধরনের দায়িত্ব দেওয়া হত; আমি ঠিক জানি না আমরা সেটাকে কীভাবে নিতাম। আমলাতন্ত্রের বাইরে গিয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সত্যিকারের সংস্কার করতে হলে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।
Advertisement
ব্যবসায় প্রবেশের ক্ষেত্রে নানান বাধা বিপত্তির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কেনো পাঁচ লাখ টাকার বাৎসরিক রেভিনিউ ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিমাসে ভ্যাট-ট্যাক্স রিটার্ন দিতে হয়। প্রথম থেকেই ব্যবসা বান্ধব শুরু করা প্রয়োজন। প্রত্যেকটি ব্যবসায় প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। কিন্তু ব্যবসার শুরুতেই অনেক বাধা বিপত্তি থাকে।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালে আমরা জাতীয় পরিচয়পত্র করলাম। অন্যদিকে ভারত ২০০৮ সালে করলো আধার কার্ড। এখন এই আধার কার্ডের ওপর ভিত্তি করে তারা প্রত্যেকটি সেবা দিচ্ছে। আমরা আগে করেও সেই সুবিধাটা দিতে পারলাম না। এসব কারণে আমরা পিছিয়ে থাকছি।
ফিকি সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আনলে দেশের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে হবে। বিদেশে বিনিয়োগ আসলে শুধু অর্থ নয়, সেখানে জ্ঞান, প্রযুক্তি আসে। এই জ্ঞান, প্রযুক্তি সুরক্ষায় নীতিমালা প্রয়োজন। সুরক্ষা দিতে না পারলে বিনিয়োগ আসবো না। বছর শেষে কর হারের পরিবর্তন হয়, এটা কোথাও হয় না।
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, স্বাস্থ্য সেবা নিতে প্রতি বছর তিন বিলিয়ন ডলার চলে যায় দেশের বাইরে। দেশে হেলথ ইনস্যুরেন্স প্রয়োজন। দক্ষতা বাড়াতে ব্যবসায়ী সংগঠন, প্রতিষ্ঠান কে নীতিমালায় সংযুক্ত করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা দুর্নীতি। কীভাবে দুর্নীতি কমানো যায় এটা নিয়ে কাজ করা দরকার। আমাদের ঘুসের ওপর ঘুস দিতে হয়। সব ব্যবসায়ীর এনবিআর নিয়ে অভিযোগ আছে। পুরো এনবিআরকে নতুন করে সাজাতে হবে। এটা হলে দুর্নীতি ৫০ শতাংশ কমে যাবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের প্রধান সমস্যা দুর্নীতি। বাণিজ্য বাড়াতে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে অটোমেশন প্রয়োজন।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। অন্তর্বর্তী সরকার সব সংস্কার করতে পারবে না। রাজনীতি ও অর্থনীতিকে আলাদা করা যাবে না। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে একটি বিশেষ গোষ্ঠী তাদের সুবিধা নিয়েছে। এই অবস্থায় সবার আগে রাজনীতির সংস্কার করতে হবে। সরকারকেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
এসএম/এমআরএম