অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। মৌসুম ছাড়াও পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে সেখানকার বিভিন্ন পর্যটন স্পট। তার মধ্যে অন্যতম হলো আকিলপুর সমুদ্রসৈকত। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে ছুটে যান শতাধিক পর্যটক। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না থাকায় দোকানপাট তেমন নেই সেখানে।
Advertisement
বিপুল সম্ভাবনাময় হলেও এখনো স্থানটি বাণিজ্যিকভাবে উন্নত নয়। ফলে সরকার একদিকে যেমন রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে অপরূপ লীলাভূমি সমুদ্রসৈকতটি দেশ-বিদেশে পরিচিতি হওয়া থেকেও ক্রমশ বঞ্চিত হচ্ছে।
তবে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের আগমন ঘটলেও সম্প্রতি সময়ে সবচেয়ে বেশি পর্যকটদের আগমন ঘটেছে আকিলপুর সমুদ্রসৈকতে। এই আকর্ষণীয় সমুদ্রসৈকতে লোকমুখে শুনে এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশ-বিদেশের অনেক ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে সমুদ্রসৈকতটি।
এছাড়া সৈকত ভ্রমণের পাশাপাশি সেখানকার ইকো-পার্ক, বোটনিক্যাল গার্ডেনও ভ্রমণ করতে পারবেন। উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের খেলা, সারি সারি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ গাছালি, উড়ন্ত পাখিদের কলতান, সমুদ্রের হিমেল হাওয়া, সব মিলিয়ে মনকে একবার হলেও দোলা দিয়ে যাবে।
Advertisement
এছাড়া পূর্বে সুউচ্ছ পাহাড় ও পশ্চিমে হাতিয়া দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৈকতকে আরও আর্কষণীয় করে তোলে। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এ উপজেলায় সুউচ্চ পাহাড় ও সাগরের হাতছানিতে মুগ্ধ হয়ে ভিড় করছেন আকিলপুর সমুদ্রসৈকতে।
সুযোগ পেলেই এ সমুদ্রসৈকতে পরিবার পরিজন নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে অতি কাছ থেকে নিবিড়ভাবে সূর্যাস্ত উপভোগ করার জন্য ছুটে আসেন পর্যটকরা। তেমনই একজন চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ এলাকার মো. জানে আলম মুকতার। তিনি জানান, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কয়েকবার এই আকিলপুর সৈকতে ভ্রমণে এসেছেন তিনি।
আরও পড়ুন স্মৃতির পাতায় মহেরা জমিদার বাড়ি পিনাং থেকে ঢাকার বদলে কলকাতা?তিনি আরও বলেন, আসলেই চট্টগ্রামে অবস্থিত এ সৈকতটি খুব সুন্দর। এখানে এলে সমুদ্রের এলোমেলো হাওয়াতে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। পরিবারের সবাই সুযোগ পেলে এখানে ছুটে আসেন।
তবে বিপুল সম্ভাবনাময় থাকা সত্ত্বেও সরকার এ সমুদ্রসৈকতের প্রতি নজর না দেওয়ায় এটি পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি এখনো। সৈকতে কাদা-মাটি থাকলেও সামান্য একটু সমুদ্রের ছোঁয়া নিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শতশত শিক্ষার্থী ও ভ্রমণবিলাসী প্রকৃতিপ্রেমীদের মৌসুম ছাড়াই আগমন লক্ষ্য করা গেছে।
Advertisement
সৈকতে বেড়াতে আসা দর্শনাথীদের অনেকেই জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম শহর থেকে খুবই কাছে ও সুন্দর আকিলপুর সমুদ্রসৈকত। আর এখানে এমন একটি সমুদ্রসৈকত আছে তা অনেকের হয়তো জানা নেই। তবে সৈকতে শত শত পর্যটক দেখা গেলেও সে হারে তেমন দোকানপাট গড়ে ওঠেনি এখনো।
সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র থেকে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসতে হয়। কারণ সমুদ্রসৈকত সড়কে বাতির ব্যবস্থা না থাকায় অনেক পর্যটককে একাধিকবার বিপদে পড়তে হয়েছে। সরেজমিনে সমুদ্রসৈকত ঘুরে দেখা গেছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন না থাকায় দোকানপাটও তেমনই গড়ে ওঠেনি।
সড়কের অবস্থাও খুবই নাজুক। এ সড়কের কিছুটা পড়েছে বাঁশবাড়িয়া আর কিছুটা পড়েছে কুমিরা ইউনিয়ন এলাকায়। অর্থাৎ দু’ভাগে বিভক্ত সৈকতে যাওয়ার সড়কটি। দীর্ঘদিন ধরে সড়কের কোনো সংস্কারের কাজ হয়নি বলে স্থানীয়দের দাবি।
তাই সঠিক প্রচারের অভাবে এই অবহেলিত সমুদ্রসৈকতটি। তেমন করে পিকনিক স্পট হিসেবেও পরিচিতি লাভ করতে পারেনি। তবে পর্যটকরা এ সমুদ্রসৈকত দর্শন করার জন্য আসেন প্রতিদিনই। তাই সরকার আকিলপুর সমুদ্রসৈকত উন্নয়নে সঠিক সিন্ধান্ত গ্রহণ করলে অচিরে অপরূপ লীলাভূমি সমুদ্রসৈকতটি দেশ-বিদেশে পরিচিতি লাভ করবে।
তার পাশাপাশি প্রতিবছর এ খাত থেকে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে বলে মনে করছেন এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। এ স্পটে দেশের যে কোনো স্থান থেকেই আসা যাবে।
এটি বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন এলাকায় অবস্থান হলেও প্রথমে গাড়ি থেকে ছোট কুমিরা বাস স্টেশনে নামতে হবে। তারপর সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে কম সময়ে ও খুব সহজে আকিলপুর সমুদ্রসৈকতে পৌছাঁনো সম্ভব।
জেএমএস/এএসএম