দেশজুড়ে

কৃষকের পোষায় না, মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভ করেন কেজিতে ২০ টাকা!

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার তারাকান্দি পাইকারি বাজার থেকে শহরের খুচরা বাজারের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। অথচ এই দূরত্ব অতিক্রম করলেই সবজির দাম কেজিতে বেড়ে যাচ্ছে ৩০-৪০ টাকা। এতে কৃষকরা ঠকলেও পকেট ভারী হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের। বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা। এ অবস্থায় নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

সরেজমিন দেখা গেছে, জেলা সদরের বড় বাজারসহ আশপাশে পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন নানান শাকসবজি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এলেও বাজারগুলোতে বেশিরভাগ সবজির জোগান আসে তারাকান্দি ও বাজিতপুরের পিরিজপুর থেকে। তবে বাজারগুলোতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের টানিয়ে রাখা মূল্য তালিকা অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে না বেশিরভাগ সবজি।

দেখা গেছে, কাঁচা মরিচের দাম তারাকান্দি বাজারে যেখানে ১১০ টাকা, শহরের বাজারে তা ১৪০-১৬০ টাকা। ৬০-৬৫ টাকার শিম ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৬০-৬৫ টাকা কেজির ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। দামের এ তারতম্যের কারণ জানতে চাইলে যাতায়াত, পাইকারি পর্যায়ে বেশি দামে কেনাসহ নানান অজুহাত দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে দেশে ফিরে কৃষিকাজে আত্মনিয়োগ করেছেন হোসেনপুর উপজেলার চরজামাইলের কৃষক কুতুব উদ্দিন। নিজের এবং অন্যের জমি লিস নিয়ে আবাদ করছেন নানান ধরনের শাকসবজি। ভোরবেলায় টাটকা সবজি তুলে তিনি যান পাকুন্দিয়ার তারাকান্দি বাজারে। আশা থাকে ন্যায্যমূল্য পাবেন। কিন্তু প্রায়ই ন্যায্য দাম পান না বলে জানান তিনি।

Advertisement

কুতুব উদ্দিন যে বেগুন পাইকারি বাজারে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করেন, সেই বেগুন খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৮০ টাকায়। বাজারের এমন তারতম্যের জন্য মাঝেমধ্যে হতাশ হয়ে কৃষিকাজ ছেড়ে দিতে মন চায় বলে জানালেন তিনি।

কৃষক মোফাজ্জল হোসেনের ভাষ্য, সার, কীটনাশক ও তেলের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে কিন্তু আমাদের কষ্টের ফসলের দাম বাড়ে না। আমরা যে দামে সবজি বিক্রি করি তাতে আমাদের পোষায় না। আবার যখন বাজার থেকে সবজি কিনতে যাই, ডাবল দাম দিয়ে কিনতে হয়।

তারাকান্দি পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন মানিক মিয়া। তিনি বলেন, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ, মাঝেমধ্যে কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাওয়া—এসব কারণেই আমরা কেজিতে সর্বোচ্চ ১০ টাকা লাভে বিক্রি করি।

কিশোরগঞ্জ শহরের বড়বাজারের পাইকার সাজু শেখ বলেন, ‘তারাকান্দি ও পিরিজপুর বাজার থেকে পাইকারি দরে সবজি কিনে এনে এখানে পাইকারি বিক্রি করি। পরিবহন খরচ, দোকান খরচ ও আমার পরিশ্রম খরচও রয়েছে। এজন্যই আমাদের কেজিতে ২০ টাকা লাভে বিক্রি করতে হয়। আবার আমাদের কাছ থেকে যারা কিনে একটু দূরে খুচরায় বিক্রি করেন, তারা আরও ২০ টাকা লাভ বিক্রি করেন। অনেক সময় কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। এসব কারণে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’

Advertisement

কিশোরগঞ্জ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবু সালেহ হাসান সারোয়ার। তিনি বলেন, কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী সবজিতে খুচরা বিক্রেতারা ৩০ শতাংশ লাভ করতে পারবেন। কৃষি বিপণন আইনে যে মুনাফা দেওয়া রয়েছে তা লঙ্ঘিত হলে জরিমানা করা হয়। এরইমধ্যে শহরের বড় বাজারে দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ অফিসের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বনিক বলেন, বাজার তারতম্যের বিষয়টি আমরা তদারিকের আওতায় নিয়ে এসেছি। প্রতিনিয়তই আমাদের মনিটরিং অভিযান চলমান রয়েছে। অযৌক্তিকভাবে কেউ যদি ১০ টাকার পণ্য ৩০ টাকায় বিক্রি করেন, তাহলে অবশ্যই আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।

গত মৌসুমে জেলায় শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ১৯০ মেট্রিক টন। এবার পাঁচ হাজার মেট্রিক টন বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ১৯০ মেট্রিক টন।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, কৃষক যদি বারবার ন্যায্যমূল্য না পান তাহলে তারা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। এটা হলে উৎপাদন কম হবে। পরবর্তী সময়ে দাম আরও অনেক বেড়ে ক্রাইসিস দেখা দেবে।

তিনি বলেন, হাত বদলের কারণে কৃষক পর্যায়ে দাম কম এবং ভোক্তা পর্যায়ে অনেক বেশি থাকে। এই হাত বদলের সংখ্যা যদি কমানো যায়, ভোক্তা ও কৃষক উভয়ই সুফল পাবেন।

এসআর/জেআইএম