কৃষি ও প্রকৃতি

ধান ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ, দুশ্চিন্তায় কৃষক

চলতি মৌসুমে চাঁদপুরের মতলব উত্তরে মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কৃষকেরা নানা প্রতিকূলতা পার করে রোপণ করেছেন আমন ধানের চারা। এরই মধ্যে ধান ক্ষেত সবুজ আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যেই কিছু সংখ্যক ক্ষেতে শুরু হয়েছে ‘পাতা ব্লাস্ট’ রোগের আক্রমণ। এতে সবুজ ক্ষেত ধীরে ধীরে হলদে থেকে বাদামি রঙে পরিণত হচ্ছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।

Advertisement

সরেজমিনে মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় বেশকিছু মাঠে দেখা গেছে, আমন ধানের ক্ষেতে পাতা ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত। কেউবা বলেছেন, এটি খোল পেড়া বা পঁচা রোগ। ফলে ধানের পাতা পচে বিনষ্ট হচ্ছে। এ রোগ প্রতিরোধে কীটনাশক প্রয়োগ করেও কাজে আসছে না বলে জানান কৃষকেরা।

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে ৮ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জেলার শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ জনসাধারণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি ফসল ঘরে তুলে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে চেষ্টা করে। এসবের মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক ফসল হচ্ছে আমন ধান। আমন চারা রোপণের সময় প্রত্যেক বছরে বন্যা দেখা দিলেও এ বছরে তেমনটা প্রভাব পড়েনি।

আমন চারা রোপণের বেশিরভাগ সময়ে খরার কবলে পড়তে হয়েছিল। অধিকাংশ কৃষক বাড়তি খরচে সেচ দিয়ে রোপণ করেছেন এই ধানচারা। এবার বেশি ফলনের আশায় এরই মধ্যে পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ শেষের দিকে। ধান ক্ষেত সবুজ রং ধারণ করায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছিল। এই মুহূর্তে সেই হাসি যেন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বেশকিছু মাঠে দেখা দিয়েছে পোকামাকড়ের আক্রমণসহ পাতা ব্লাস্ট বা খোল পঁচা রোগের প্রাদুর্ভাব। এ কারণে ধান ক্ষেত এখন হলদে থেকে বাদামি রঙে পরিণত হয়েছে। কৃষকের স্বপ্নের ক্ষেত বিনষ্টের আশঙ্কায় মাথায় বাজ পড়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুনকিশোরগঞ্জে আগ্রহ বাড়ছে বস্তায় আদা চাষেরফসলের ক্ষতিকারক পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ছে

ছেংগারচর পৌরসভার আধুরভিটি গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, ‘এবার আমি ৪৫ শতাংশ জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। এর শুরুতে খরার কবলে সেচ দিয়ে চারা রোপণ করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত দামে শ্রমিক ও চারা কেনাসহ সার প্রয়োগ করেছি। এখন সেই ক্ষেত পচা রোগ দেখা দিয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে কীটনাশক প্রয়োগ করেও কাজে আসছে না।’

আরেক কৃষক আব্দুস সোবহান ও নাসার উদ্দিন জানান, ধান ক্ষেতে রোগবালাই দেখা গেলেও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না কৃষি কর্মকর্তাদের। তাই দোকানিদের পরামর্শে কীটনাশক কিনে প্রয়োগ করছি।’

মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এটি ধানের ব্লাস্ট রোগ নয়, এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। পানি জমে থাকার কারণে হয়তো এ সমস্যা বেশি হয়েছে। বীজবাহিত সমস্যার কারণে এটি হতে পারে। যেখান থেকে এই বীজটা সংগ্রহ করেছে, ওই বীজে যদি পূর্বে রোগটি থেকে থাকে তাহলে এটি হতে পারে। এই রোগ বেশিরভাগ বিআর-১১ ধানের জমিতে হয়ে থাকে। আমার কৃষকদের প্রতি পরামর্শ থাকবে, আপনারা বিআর-১১ ধান না করে আমনের বেশকিছু ভালো জাত রয়েছে, যেমন বিআর-৮৭, ৯২, ৯৫। এ ধানগুলোতে আক্রমণ কম হয়।’

তিনি বলেন, ‘চারা অবস্থা থেকে ধান পাকার আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় এ রোগের আক্রমণ দেখা যায়। এ উপজেলার কিছু স্থানে এরই মধ্যে এ রোগে আক্রমণের কথা জানতে পেরে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ধানে আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে কৃষকদের সর্তক করা হচ্ছে।’

Advertisement

শরীফুল ইসলাম/এসইউ/জেআইএম