অর্থনীতি

শ্রমিক অসন্তোষে অনুপ্রবেশকারীদের হাত রয়েছে

শ্রমিক অসন্তোষে অনুপ্রবেশকারীদের হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, এ অবস্থা উত্তরণে শ্রমিক-মালিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে হবে।

Advertisement

শনিবার (৫ অক্টোবর) মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, মেট্রোপলিটন চেম্বারেরর সাবেক সভাপতি নাসিম মঞ্জুর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান ও শামস মাহমুদ।

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এরই মধ্যে শ্রমিকদের বেশকিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি শ্রমিকদের যেকোনো যৌক্তিক দাবি বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ ইতিবাচকভাবে মেটাতে বদ্ধপরিকর। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডসমূহ ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্যের যৌক্তিক মূল প্রাপ্তির ওপর তিনি জোর দেন, যার মাধ্যমে শ্রমিক স্বার্থ আরও সুসংহত করা সম্ভব হবে। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কনফিডেন্স বাড়ানোর ওপর আরও অধিক হারে গুরুত্ব দেন তিনি।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, খেলাপি ঋণ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের কারণে দেশের অধিকাংশ উদ্যোক্তাদের খেলাপি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে শিল্পখাতে গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করার ওপর জোর দেন।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সমস্যা সমাধানে আমরা গত দুই বছরে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছি, যার প্রভাব বর্তমান সময়ে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের আস্থার পরিবেশ উন্নয়নে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে শিল্পখাতের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে মাঠপর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, যেটি মোটেই কাম্য নয়, সরকারকে এ বিষয়টিতে নজর দেওয়া জরুরি। এছাড়াও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, এসএমইখাতে অর্থায়ন ও উন্নয়ন কার্যকর নীতি সহায়তা প্রদান একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

মাসরুর রিয়াজ আরও বলেন, ঋণপত্র খোলাসহ আর্থিকখাতের অন্যান্য সমস্যা সমাধানে রিজার্ভে আরও ৬-৮ বিলিয়ন ডলারের সংযোজন ঘটাতে হবে, সরকারকে এ ব্যাপারে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া আবশ্যক, ফরেন এক্সচেঞ্জ ও ব্যালান্স অব পেমেন্টের সুসংহত করাও জরুরি।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা আরো ভয়াবহ হবে, তাই সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনার ওপর আমাদের আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

Advertisement

সূচনা বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, কোভিড পরবর্তী সময় হতে আমরা নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তবে সাম্প্রতিক সময়ে শিল্প-কারখানায় অসন্তোষের কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনার অস্থিতিশীলতার কারণে বেসরকারিখাত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, অর্থনীতির সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বিচার বিভাগ, এনবিআর এবং বাংলাদেশে ব্যাংকের কার্যক্রমে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়েছে, যা আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়। তবে বর্তমান সময়ে তৈরি পোশাক খাতের জুট ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে শিল্প-কারখানায় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়, যেকোনো মূল্যে এ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশ বৈশ্বিকভাবে ইমেজ সংকটে পড়তে পারে।

ইএআর/এসএনআর/এমএস