গণমাধ্যম

‘হাসপাতালে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে কান্নায় আপ্লুত হয়ে পড়েন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। তিনি বলেন, এখানকার পরিবেশ খুবই বেদনার। খুবই কঠিন মুহূর্ত; যখন পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য তারা তাদের জীবন দিয়েছেন।

Advertisement

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত সাংবাদিকদের স্মরণ এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া উপলক্ষে হাসিনা সরকারের পতনে সাংবাদিক সমাজের ভূমিকা ও বর্তমান করণীয় শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংগঠন লাভ শেয়ার বিডি-ইউএস। জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং সাংবাদিকদের পেশাগত অধিকার বিষয়ক সংগঠন জার্নালিস্ট ফর জাস্টিস এর সহযোগিতা করে।

অর্থ সহযোগিতা হিসেবে ঢাকা টাইমস-এর সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়, গাজীপুর ভিত্তিক দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার সাংবাদিক শাকিল হোসেন, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার সিলেট প্রতিনিধি আবু তাহের মো. তুরাব এবং দৈনিক খবরপত্র-এর রায়গঞ্জ প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার ভোমিকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। সভার সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ।

Advertisement

হাসাপাতালের চিকিৎসারত চিত্র তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন আনসারী। তিনি বলেন, আপনারা হয়তো এখানে বসে অনেক কথা বলছেন, অনেকের মনে সুপ্ত বাসনা পূরণ করতে চেষ্টায় আছেন। আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। দেখে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না। হাত, পা নেই, অঙ্গহানি ও পঙ্গু হয়েছে অনেক ছাত্র-জনতা। দু পা নেই, কেটে ফেলতে হয়েছে, ওপর হয়ে শুয়ে আছেন। উল্টে উঠে একটি হাসি দিয়ে বললো, ব্রাদার উই আর মেরিট। দেশের প্রতি কী ভালবাসা, কী প্রেম তাদের দেশের প্রতি।

প্রত্যেক শহীদ ও আহতদের পরিবারের জন্য সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে, প্রয়োজনে হাসপাতালে যারা কাতরাচ্ছেন তাদের বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারের পক্ষ থেকে। দেশের জন্য যারা রক্ত দিয়েছেন তার পরিবার আবার টাকা দিয়ে ওষুধ কিনবে এটা মেনে নেওয়া হবে না।

নিহত গাজীপুর ভিত্তিক দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার সাংবাদিক শাকিল হোসেনের বাবা বলেন, আমার ছেলের মরদেহ দিতে চায়নি, পরে দেয় কিন্তু জানাজার জন্য সময় দিতে চায়নি। পরে জনগণের চাপে সময় দিতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন।

নিহত ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদীর বাবা তার ছেলের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, আপনাদের মতো আমার ছেলেও সাংবাদিক ছিল। আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ।

Advertisement

বিএফইউজের সাবেক সভাপতিও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এত কম সময়ে, এত জীবন দান পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। স্বৈরাচারের সময় প্রতি মাসে ২৫-৩০ জন করে সাংবাদিক নির্যাতন ও নিগৃহের শিকার হয়েছেন।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, ডিআরইউ সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী, ডিইউজের সহ সভাপতি মোহাম্মদ বাছির জামাল প্রমুখ।

কেএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস