প্রবাস

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং কিছু কথা

রাকেশ রহমান, লন্ডন

Advertisement

সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান একজন মহান নেতা ছিলেন কিন্তু রাজনীতিবিদ ছিলেন না। বাংলাদেশের উন্নয়নে ও মানব অধিকার রক্ষায় আমরা তার মতো একজন মহান নেতা চাই, আর কোনো রাজনীতিবিদ চাই না।

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশপ্রেমের প্রতিফলনের একটি উদাহরণ। দেশপ্রেম একদিনে হঠাৎ করে কারো ওপর ভর করে না। এই প্রেমের অনুভূতি ধীরে ধীরে জাগ্রত হয় তবে এই দেশপ্রেম যখন কারো ওপর জাগ্রত হয় তখন তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বহুভাবে। যেভাবে জিয়াউর রহমানের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিলো। প্রথমত; তিনি শত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে নাম লিখিয়েছিলেন তৎকালীন সেনাবাহিনীতে। অনেইকেই জানেন; যখন কেউ সুযোগ পায় সেনাবাহিনীতে যোগদানের তখন তাদের একটি ফরমে সই দিতে হয় এই মর্মে যে যদি তারা যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হন তাহলে তাদের মরদেহ ফেরত দিতে সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে না। অতএব শুরুতেই জীবনের শেষ অবস্থানের কথা মাথায় রেখে সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে হয়। অর্থাৎ দেশপ্রেম ছাড়া কেউই সেনাবাহিনীকে পেশা হিসেবে বাছাই করে না।

তারপর জিয়াউর রহমানের পরিবার তৎকালীন সময়ে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিল। সুতরাং জিয়াউর রহমান জীবিকা নির্বাহের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগদান করেননি বরং মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুদ্ধফেরত তার চাচা ক্যাপ্টেন ড. মোনতাজুর রহমানকে দেখে সামরিক বাহিনী নিয়ম-কানুন শৃংঙ্খলা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মহান আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে নিয়ে সেনাবাহিনীর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। দ্বিতীয়ত; মেধাবী এই জিয়াউর রহমান হয়ে উঠে প্রথম থেকেই তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে আলোচিত একটি নাম। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা ওই সময় বাংলাদেশি সেনাবাহিনীদের অবহেলা ও হীনভাবে দেখতো। জিয়াউর রহমানকে এই অবহেলা নাড়া দিত। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন জিয়াউর রহমান। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন প্রাপ্ত হন। সামরিক বাহিনীতে তিনি একজন সুদক্ষ প্যারাসুটার ও কমান্ডো হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন এবং স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। করাচীতে দুই বছর চাকরি করার পর ১৯৫৭ সালে তিনি ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি হয়ে আসেন। তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে একটি কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে খেমকারান সেক্টরে তিনি অসীম বীরত্বের পরিচয় দেন। যুদ্ধে দুর্ধর্ষ সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য যেসব কোম্পানি সর্বাধিক বীরত্বসূচক পুরস্কার লাভ করে, জিয়াউর রহমানের কোম্পানি ছিল এদের অন্যতম। এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য পাকিস্তান সরকার জিয়াউর রহমানকে হিলাল-ই-জুরাত খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করার পর থেকেই একের পর এক সুদক্ষ বীরত্বের পরিচয় দেন।

Advertisement

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে পাকহানাদার বাহিনী যদি বাংলাদেশিদের ওপর হানা না দিতো আর ১৯৭১- এর ২৬ শে মার্চ নিজ উদ্যোগে মেজর জিয়াউর রহমান যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিতেন এবং পরবর্তীতে শেখ মুজিবর রহমানের দাবিগুলো যদি পাকিস্তান মেনে নিত তাহলে আর যাইহোক ওই যাত্রায় বাংলাদেশ আর স্বাধীন হতো না।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়েই মূলত বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পূর্ণতা অর্জন করে উন্নতির দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।

১৯৭৬ সালের অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাক্ষাৎকার নিতে আসলেন এক সাংবাদিক কেভিন র্যাফাটি। কেভিন পুরো বাংলাদেশকে দেখলেন যেই দেশটি মাত্র এক বছর আগে এক দুর্ভিক্ষে বিধস্ত হয়ে পড়েছিলো। যেই দেশে অর্থনীতি বলতে কিছুই ছিল না। সবই চলতো বিদেশি সাহায্যে। যেই দেশে ক্ষমতায় অধিষ্টিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে ডেথ স্কোয়াডের সামনে দাঁড়ানো। সেই দেশে এসে তিনি জিয়াউর রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়ে জানলেন তার কর্ম পরিকল্পনা।

মাত্র এক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিশ্বয়কর অগ্রগতি নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশকে ‘এশিয়ার চ্যাম্পিয়ান’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এই এক বছরে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিক থেকে দেশটি পেছনে ফেলে দিয়েছে জাপান, সিঙ্গাপুর, মালায়েশিয়াকেও। সেই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান অন্য গরিব দেশগুলোর মতো সাহায্যের আশায় বসে থাকে না। তিনি বাংলাদেশের মানবসম্পদ কাজে লাগাতে চান। আরববিশ্বের দেশগুলোতে মানবসম্পদ রপ্তানি করার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সৌদি আরবসহ বহু আরব দেশে মানবসম্পদ রপ্তানি শুরু করতে সফল হন।

Advertisement

‘বাংলাদেশের মানুষ ভিক্ষা করে নয় বরং কাজের বিনিময়ে অর্থ আদায় শুরু করে। এই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ভর করে উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ।’

রাজনৈতিক কোনো নেতা ছিলেন না জিয়াউর রহমান তবে নিজের দল জাতীয়তাবাদী দলকে গড়ে তুলেছিলেন জনপ্রিয় দল হিসেবে যে জনপ্রিয়তা আজও রয়ে গেছে বাংলাদেশে। আশাকরি বর্তমান ও ভবিষ্যতে বাংলাদেশের তরুণরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অনুসারী হয়ে দেশ ও জাতিকে উন্নতি বয়ে এনে দেবে।

এমআরএম/এমএস