ধর্ম

জুলুম সমর্থনকারীদের হাশর হবে জালিমের সাথেই

ইসলামে বৈষম্য, অন্যায় ও জুলুমের কোনো স্থান নেই। পৃথিবীতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা ইসলামের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। মুসলমানদের একটি প্রধান ও আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য ন্যায়পরায়ণতা। আল্লাহ কোরআনে ন্যায় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে বলেন,

Advertisement

اِنَّ اللّٰهَ یَاۡمُرُکُمۡ اَنۡ تُؤَدُّوا الۡاَمٰنٰتِ اِلٰۤی اَهۡلِهَا وَ اِذَا حَکَمۡتُمۡ بَیۡنَ النَّاسِ اَنۡ تَحۡکُمُوۡا بِالۡعَدۡلِ اِنَّ اللّٰهَ نِعِمَّا یَعِظُکُمۡ بِهٖ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ سَمِیۡعًۢا بَصِیۡرًا

নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, হকদারদের হক তাদের কাছে পৌঁছে দিতে। তোমরা যখন মানুষের মাঝে বিচার করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদের কত উত্তম উপদেশই না দিচ্ছেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন। (সুরা নিসা: ৫৮)

জুলুমের শাস্তি দুনিয়াতেই পেতে হয়। আখেরাতেও জালিমদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ আজাব। আল্লাহ যে জালিমদের কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে গাফেল নন, প্রতিটি জুলুমের শাস্তি আখেরাতে ভোগ করতে হবে- তা ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা বলেন,

Advertisement

وَ لَا تَحۡسَبَنَّ اللّٰهَ غَافِلًا عَمَّا یَعۡمَلُ الظّٰلِمُوۡنَ اِنَّمَا یُؤَخِّرُهُمۡ لِیَوۡمٍ تَشۡخَصُ فِیۡهِ الۡاَبۡصَارُ مُهۡطِعِیۡنَ مُقۡنِعِیۡ رُءُوۡسِهِمۡ لَا یَرۡتَدُّ اِلَیۡهِمۡ طَرۡفُهُمۡ ۚ وَ اَفۡـِٕدَتُهُمۡ هَوَآءٌ

আর জালিমরা যা করছে, আল্লাহকে তুমি সে বিষয়ে মোটেই গাফেল মনে করো না, আল্লাহ তো তাদের অবকাশ দিচ্ছেন ওই দিন পর্যন্ত যে দিন চোখ পলকহীন তাকিয়ে থাকবে। তারা মাথা তুলে দৌড়াতে থাকবে, তাদের দৃষ্টি নিজদের দিকে ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে শূন্য। (সুরা ইবরাহিম: ৪২, ৪৩)

জুলুম যেমন অপরাধ, জুলুমে কোনোভাবে সাহায্য করাও অপরাধ, জুলুম সমর্থন করাও অপরাধ। কেউ নিজে জুলুম না করেও যদি জুলুম সমর্থন করে, জুলুমের পক্ষে বলে বা লেখে, সেও আল্লাহর দরবারে জালিম বিবেচিত হবে এবং তার হাশর জালিমের সাথেই হবে। জুলুমের সহযোগী ও সমর্থকদের পরিণতিও জাহান্নাম। কোরআনে আল্লাহ তাআলা জালিমদের সমর্থন করতে নিষেধ করে বলেন,

وَ لَا تَرۡكَنُوۡۤا اِلَی الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَ مَا لَكُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مِنۡ اَوۡلِیَآءَ ثُمَّ لَا تُنۡصَرُوۡنَ

Advertisement

যারা জুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না; অন্যথায় আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না। তারপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না। (সুরা হুদ: ১১৩)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

منْ أعانَ ظالمًا ليدحضَ بباطلهِ حقًّا، فقدْ برئتْ منهُ ذمةُ اللهِ و رسولِهِ

যে ব্যক্তি অসত্যের মাধ্যমে সত্যকে খণ্ডন করে কোন জালিমকে সাহায্য করে, তার ওপর থেকে আল্লাহ ও তার রাসুলের দায়িত্ব উঠে যায়। (তাবরানি ফিল আওসাত)

আরেকটি হাদিসে এসেছে,

من أعان على قتل مؤمن بشطر كلمة - لقي الله عز وجل مكتوب بين عينيه آيس من رحمة الله

যে ব্যক্তি কোন মুমিন ব্যক্তিকে হত্যার ব্যাপারে অর্ধেক শব্দ বলেও সাহায্য করবে, আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময় তার দুই চোখের লেখা থাকবে ‘আয়িস মিন রাহমাতিল্লাহ’ অর্থাৎ এই ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ বা বঞ্চিত। (সুনানে ইবনে মাজা)

তাই কেউ যখন জুলুম করে, ক্ষমতা থাকলে হলে তার জুলুম থামিয়ে দিতে হবে, প্রতিহত করতে হবে, তা সম্ভব না হলে মুখে প্রতিবাদ করতে হবে, তাও সম্ভব না হলে অন্তরে জালিম ও তার জুলুমকে অপছন্দ করতে হবে, ঘৃণা করতে হবে। কোনোভাবেই জুলুমের সহযোগী হওয়া যাবে না, জালিমকে সমর্থন করা যাবে না।

ওএফএফ/জিকেএস