কৃষি ও প্রকৃতি

ভালো আঁশ পেতে পাট জাগে করণীয়

পাটের ভালো আঁশ পেতে হলে গাছে ফুলের কুড়ি আসা মাত্রই কাটতে হবে। কাটার পর চিকন ও মোটা পাট গাছ আলাদা করে আঁটি বেঁধে পাতা ঝরিয়ে গাছের গোড়া ৩-৪ দিন ১ ফুট পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। পরে পরিষ্কার পানিতে জাগ দিতে হবে।

Advertisement

জাগ দেওয়ার জন্য খুব গভীর পানি প্রয়োজন নেই। মাঠে ঘাসের ওপর ১ ফুট থেকে দেড় ফুট পানি থাকলে সেখানেও জাগ দেওয়া যায়। তবে পাট গাছের সংখ্যা বা পরিমাণ বেশি হলে আরও গভীর পানি দরকার হয়, যাতে জাগ ডুবতে পারে।

মাঠে ঘাস থাকলে পাট গাছগুলো মাটির সংস্পর্শে আসে না, ফলে পাটের রং ভালো থাকে। ঘাস না থাকলে কিছু খড় বিছিয়ে তার ওপরও জাগ দেওয়া যায়। জাগের ওপর কচুরিপানা বা খড় বিছিয়ে দিলে খুব ভালো হয়। তবে কখনোই সরাসরি মাটি দিয়ে চাপা দেওয়া যাবে না।

জাগ দেওয়ার পর নিয়মিত গাছ পরীক্ষা করে দেখতে হয় যাতে বেশি পঁচে না যায়। আঁশ মাটিতে বসিয়ে না নিয়ে পানিতে ভাসিয়ে নেওয়া ভালো। কেননা তাতে আঁশে মাটি, কাঁকর থাকার সম্ভাবনা কমে। এরপর পরিষ্কার পানিতে ধোয়া দরকার।

Advertisement

পানির অভাব দেখা দিলে অথবা জাগ দেওয়ার জায়গা না থাকলে পাট গাছ না পচিয়ে পাট গাছের ছাল পচানো যায় এবং এতে পচন তাড়াতাড়ি শেষ হয়। এর জন্য বাঁশের খুঁটির মাথায় ইংরেজি অক্ষর ইউয়ের মতো করে কেটে তার মাঝে পাট গাছ রেখে খুব সহজে গাছ থেকে ছাল ছাড়ানো সম্ভব।

আরও পড়ুনআখ রোপণের সময় ও পদ্ধতি ঘাস চাষে প্রবাস ফেরত মনিরের মাসে আয় ৩ লাখ 

এরপর চাড়িতে বা চার কোণা গর্ত করে পাটের ছাল জাগ দেওয়া যায়। পচানোর সময় পানিতে যদি ছালের ওজনের আনুমানিক ৩৭ কেজি ওজনের জন্য ৫ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে দেওয়া যায়, তবে পচন আরও তাড়াতাড়ি হয়। তাছাড়া ১ সপ্তাহ পলিথিন বা বস্তা দিয়ে ঢেকে রেখে গোড়ার দিকটা পুনরায় ধুয়ে নিলেই আঁশ ছালমুক্ত হয় এবং আঁশের মানও ভালো হয়।

ধোয়া আঁশ কখনোই মাটির ওপর বিছিয়ে শুকাতে নেই। বাঁশের আড়া, রেলিং, ঘরের চাল ইত্যাদিতে বিছিয়ে শুকানো ভালো। মনে রাখবেন, উন্নতমানের আঁশের দাম সর্বোচ্চ এবং সব সময় এর ক্রেতা থাকে। পক্ষান্তরে নিম্নমানের অতিরিক্ত পচানো, কম পচানো, রংজ্বলা, কালচে, বাকল, কাঠি লেগে থাকা আঁশের বাজারমূল্য সব সময়ই কম হয়।

Advertisement

এরই মধ্যে পাট পচে গেলে তা আঁশ ছাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাটের আঁশ ছাড়িয়ে ভালো করে ধোয়ার পর ৪০ লিটার পানিতে ১ কেজি তেঁতুল গুলে তাতে আঁশ ৫-১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। এতে উজ্জ্বল বর্ণের পাট পাওয়া যায়।

যেসব জায়গায় জাগ দেওয়ার পানির অভাব; সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচাতে পারেন। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং পচন সময় কমে যায়। মনে রাখতে হবে, পাট কাটার সঙ্গে সঙ্গে ছালকরণ করতে হবে। তা না হলে পরে রোদে পাটগাছ শুকিয়ে গেলে ছালকরণে সমস্যা হবে।

এসইউ/