বিবিধ

নব বিপ্লবের সূচনা করবে প্রগতিশীল যুবসমাজ

কোটি যুবকের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক, শুদ্ধ রাজনীতির বিশুদ্ধ পুরুষ, ইতিবাচক রাজনীতির কারিগর অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ।বাংলাদেশের যুব সমাজ ও যুব রাজনীতির স্বপ্নদ্রস্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট লেখক, ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মণি’র রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরসূরি তিনি। উপ মহাদেশের সর্ববৃহৎ যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের দায়িত্ব নেন ২০১৯ সালে।

Advertisement

‘চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে থাকতে চাই’ -এমন বক্তব্যে প্রথম দিনেই যুবলীগ নেতাকর্মীদের আশা-আকাঙ্খার প্রতীকে পরিণত হন গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পেশায় জড়িত থাকা শেখ ফজলে শামস পরশ। ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সপ্তম কংগ্রেসে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান শেখ ফজলে শামস পরশ। যুবলীগ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মণির সুযোগ্য উত্তরসূরিকে চেয়ারম্যান হিসেবে পেয়ে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয় যুবলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে। রাজনীতি বিমুখ হলেও রাজনৈতিক সচেতন শেখ পরশের বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক পরিবারেই। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা যুব রাজনীতির আইকন শেখ ফজলুল হক মণির বড় সন্তান তিনি। ১৯৬৯ সালের ২ জুলাই শেখ মণি ও মাতা শেখ আরজু মণি’র ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করে আজকের এই যুব সমাজের অহংকার শেখ পরশ।

মোটেই সুখকর ছিল না শেখ পরশের বেড়ে ওঠা। মাত্র ৬ বছর বয়সে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট সেই কলংকিত রাতে হারান প্রিয় মা-বাবাকে। শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ধানমন্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কলারাডো ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরেন। তারপর ১০ বছর ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন তিনি। রাজনীতি থেকে সরাসরি দূরে থাকলেও রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় রাজনীতির শিক্ষা গ্রহণে বেগ পেতে হয়নি তাকে। তাইতো পিতার হাতে গড়া সংগঠন যুবলীগের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দিনেই যুব সমাজের মণিকোঠায় আবেগ-আপ্লুত বক্তব্যে স্থান করে নেন শেখ পরশ।

তার এই নতুন পথযাত্রায় যুক্ত হন তারুণ্য নির্ভর একঝাঁক সাবেক ছাত্রনেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যারিষ্টার, প্রকৌশলী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী অঙ্গনের প্রতিভাবান তরুণ, দেশ ও জাতির সেবায় যারা উৎসর্গ করতে চায় তাদের চিন্তা ও চেতনাকে।

Advertisement

নানামুখী পরিকল্পনার ছক এখন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ আর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের চিন্তা-চেতনায়। তাদের যোগ্য নেতৃত্বে যুবলীগ আজ আদর্শিক ও মানবিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম না থাকলেও বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংক্রমণ নতুন পথে পরিচালিত করে যুবলীগকে। সংকটে নেতৃত্বদানকারী যুবলীগ পরিণত হয় মানবিক সেবামূলক সংগঠনে।

অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির শ্রেষ্ঠ দার্শনিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি প্রতিষ্ঠা করেন আদর্শিক যুবলীগ। দীর্ঘ ৪৭ বছর পর নতুন করে তার সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ পরশের মাঝে যুবলীগ খুঁজে পায় যুবলীগের স্বপ্ন পুরুষকে। নতুন কমিটির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সাড়ে তিন বছরে যুবলীগের নেতাকর্মীরা মানবিক সহায়তার হাত বাড়ায় অসহায় ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষের পাশে। শীতবস্ত্র বিতরণ, করোনা সংকটে অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ, করোনায় মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন, রমজান মাস জুড়ে ইফতার বিতরণ, বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে, করোনা প্রতিরোধ সামগ্রী বিতরণ, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে গৃহহীনদের মাঝে ঘর উপহারসহ বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে যুবলীগকে একদিকে মানবিক যুবলীগে পরিণত হয়। অন্যদিকে বিএনপি জামাতের দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ও তাদের সহিংসতা প্রতিরোধে সাধারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে তাদের পাশে থাকতে সারা দেশব্যাপি জেলায় জেলায় শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে এবং আওয়ামী লীগের সকল নির্দেশনা পালন করে যুবলীগ আবারও প্রমাণ করছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড।

পরিবেশ সংরক্ষণে যুবলীগের নেতাকর্মীরা এখন ব্যস্ত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে। করোনাকালে তারা দেশ জুড়ে কেটে দিয়েছে কৃষকদের ধান। যে ধারা এখনো চলমান।সংকটকালে জীবন বাজি রেখে মানবিকতার যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যুবলীগ, নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবি রাখে । শুধু সাধারণ জনগণ নয়, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, শ্রমজীবী, প্রতিবন্ধী, হিজড়া ও বেদে সম্প্রদায়ের পাশে মানবিক সহায়তা হাত বাড়িয়েছে যুবলীগ।

Advertisement

যুবলীগকর্মী নূরহোসেনরা যেভাবে রাজপথে জীবন দিতে পারে, তেমনি যেকোনো সংকটে জীবন বাজি রাখতে পারে যুবলীগ আবারো তা প্রমাণিত করোনা সংকটকালে। মানবিক কাজে দেশবাসীর আস্থা অর্জনে যুবলীগ কতটা সফল হয়েছে- জাতীয় সংসদে ও বিভিন্ন সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বক্তব্যেই তা ফুটে উঠেছে।

আজ থেকে ৫২ বছর আগে আদর্শিক যুব সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্নবীজ রোপণ করেছিলেন যুবলীগ প্রতিষ্ঠাতা শেখ মণি। আজ তার গর্বিত সন্তান শেখ পরশের জাদুময়ী পরশে তা মহীরুহে পরিণত হয়েছে। জহুরী রতন চিনেন শেখ হাসিনা তা আবারো প্রমাণ করেছেন, শেখ ফজলে শামস পরশকে যুবলীগের নেতৃত্বে এনে।

যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে নাম ঘোষণার প্রথম দিনেই শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছিলেন, ‘আমার চেষ্টা থাকবে যুব সমাজ যেন আই হেটস পলিটিকস থেকে বেরিয়ে এসে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে দেশের কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখে’। তার এই সেই চেষ্টা আজ আলোর মুখ দেখেছে। হাজার হাজার মেধাবী যুবক বিভিন্ন কারণে যারা রাজনীতি বিমুখ ছিলো, তারা আজ রাজনীতিতে আগ্রহী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা আজ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে দেশের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে চায়। আর তা সব সম্ভব হয়েছে গত সাড়ে চার বছরে মানবিক যুবলীগের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ পরশের যুগোপযোগী মানবিক নেতৃত্বের কারণে।

বিভিন্ন সভা সমাবেশে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশের বক্তব্যে মানবিকমূল্যবোধ বিকাশের নির্দেশনা পায় যুবলীগের নেতাকর্মীরা। শেখ পরশ মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন বর্তমান যুবলীগের অন্যতম লক্ষ্য মানবিক ধারাকে গতিশীল করতে নেতৃত্ব দেওয়া এবং প্রতিবিপ্লবীদের প্রতিহত করে মানুষের সুখে-দুঃখে সাথী হওয়া। এ লক্ষ্যে যুবলীগ ইতোমধ্যে অনেক মানবিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে “মানবিক যুবলীগ”-এ পরিণত হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তাই আমরা দায়বদ্ধ জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। সর্বোপরি আমরা দায়বদ্ধ এদেশের মানুষের কাছে।

শেখ পরশের আহ্বান , যুবলীগের সকল নেতা-কর্মীরা মানুষের পাশে থাকবে। প্রতিটি মানুষের যেন জীবনের উন্নতি হয়, প্রতিটি ছেলে-মেয়ে লেখা-পড়া শিখে মানুষ হয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, একটা ন্যায় পরায়ণ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম গণমানুষের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষণে বিপ্লবী ভূমিকা রাখবে যুবলীগ। তার বিশ্বাস এভাবেই বাংলার আপামর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ একটা নববিপ্লবের সূচনা করবে এ দেশের প্রগতিশীল যুবসমাজ।

দেশ, জাতি ও যুবসমাজের জন্য এমন কল্যাণমুখী ভাবনার কারণে যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, আজ কোটি যুবকের প্রাণের স্পন্দন পরিণত হয়েছেম শেখ পরশ। আগামী দিনের পথচলায় তার জন্য অন্তহীন শুভকামনা।

লেখক : ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য।

এইচআর/এএসএম