ভ্রমণ

একদিনেই ঘুরে আসুন রহস্যময় মেলখুম

মেলখুম ট্রেইল অপার রহস্যঘেরা এক জায়গা। পাহাড়ি ঝরনার রানি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় বেশকিছু প্রাকৃতিক ঝরনা রয়েছে। ঝরনাগুলো প্রায় একই ধরনের হলেও কিছুটা ব্যতিক্রম মেলখুম ট্রেইল। বিষয়টি অনেকেই হয়তো জানেন না। এর পরতে পরতে রয়েছে সৌন্দর্য আর রহস্যঘেরা জানা-অজানা।

Advertisement

মিরসরাই উপজেলার সোনাপাহাড় থেকে পূর্বদিকে যে রাস্তা গেছে, সেটাই মূলত ট্রেইল। ৮-৯ মিনিট হাঁটার পর একটা রেললাইন। সেটি অতিক্রম করার পর পুরোটাই মাটির রাস্তা। এই পথ ধরে ২০-২৫ মিনিট হাঁটার পর ছোট একটি কালভার্ট চোখে পড়লো। চট্টগ্রামে যত গিরি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে পরিষ্কার ও সুন্দর গিরি এটি। স্বচ্ছ পানিতে সূর্যের কিরণ লেগে বয়ে চলা গিরিটা আপনাকে বিমোহিত করবে পুরোটা পথ। আলো-ছায়ার খেলায় স্বচ্ছ পানি কখনো কখনো গাঢ় নীল বলে মনে হবে। চারপাশে চোখের সামনে উড়ে বেড়াবে ফড়িং ও প্রজাপতি। পানিতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ে এসে খুনসুটি খেলবে ছরার ছোট ছোট মাছ। এভাবে ৪৫-৫০ মিনিট হাঁটার পর সেই কাঙ্ক্ষিত মেলখুমের দেখা মিলবে।

মেলখুমে যাওয়ার পথে সবুজ শ্যামল গ্রামীণ দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। চারপাশে নানান সবজির খেত। দৃষ্টির সীমানায় উঁচু উঁচু পাহাড়। দিগন্তছোঁয়া বৃক্ষরাজি। বন্য শূকরের ছুটে চলা। গা ছমছমে পরিবেশ। আমরা ছাড়া আর কোনো জনমানবের দেখা নেই।

ছরার পানিতে নেমে যে কেউ প্রথমে অবাক হবেন। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহেও যে পানি এতটা ঠান্ডা হতে পারে, কেউ খুমে না নামলে বুঝতে পারবেন না। এই গরমের মাঝে ছরার পানি আপনাকে প্রশান্তি দেবে ঠিকই, তবে অনেক সময় অতিরিক্ত ঠান্ডাতে সর্দিও লেগে যেতে পারে।

Advertisement

আরও পড়ুন

বেঙ্গালুরু ভ্রমণে যে ৫ বিচে ঘুরে আসতে ভুলবেন না

সরু পাহাড়ের ফাঁকফোকর দিয়ে যেতে হবে। কখনো হাঁটুসমান, কখনোবা বুক ছাপিয়ে গলা পর্যন্ত পানি কেটে এগিয়ে যাওয়া লাগবে। মেলকুমের ভেতরে কোথাও কোথাও দিনের আলো চরমভাবে পরাস্ত। ভৌতিক পরিবেশ। যতই এগিয়ে যাবেন, ততই রোমাঞ্চকর অনুভূতি হতে থাকে। পায়ের নিচে পানি, পিঠ ঠেকেছে পাহাড়ের দেয়ালে, ওপরে এক ফালি আকাশ। দুই পাশের পাহাড় ওপরে গিয়ে এমনভাবে চেপে গেছে যে বিশাল আকাশটাকেই তখন ঈদের চাঁদের মতো লাগে! যেতে যেতে একসময় পানি এত বেশি যে সাঁতার দেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না।

পাহাড়ের গহীনে যাওয়াটা সহজ নয়। এছাড়া পরিবেশ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার স্বাদ তো পাবেনই। পাশাপাশি পরিষ্কার পানির সঙ্গে সঙ্গে মনোরম দৃশ্যগুলো মস্তিষ্কে একদম গেঁথে থাকবে। আপনি যখন খুমের কাছাকাছি চলে যাবেন, তখন সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।

মেলখুমে ঘুরতে গিয়ে একাধিক পর্যটক পথ হারিয়ে ফেলেন। পরে পুলিশের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। এজন্য বনবিভাগের পক্ষ থেকে পর্যটক যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু কার কথা কে শোনে? প্রতিদিন ভ্রমণপিপাসুরা ছুটছেন এ ট্রেইলে।

Advertisement

মিরসরাই বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ নওশাদ জানান ‘মেলখুম ট্রেইল বিপজ্জনক হওয়ায় সেখানে পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনেক পর্যটক সেখানে গিয়ে বিপদে পড়ছেন। এরই মধ্যে আমরা মেলখুমের বিভিন্ন প্রবেশ পথে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি, সাইনবোর্ড টাঙিয়েছি।’

এবার চলুন এই মেলখুমের কিছু ইতিহাস জেনে নেওয়া যাক। বিশেষ করে এই নামকরণ হয়েছিল কীভাবে তা খুবই মজার গল্প- কোনো এক সময়ে পাহাড়ে মেল পাতা পিষে খুমের ভেতর দেওয়া হতো, পাতার বিষে খুমের ও পাহাড়ি ছরায় মাছ মারা যেত। মেলমিশ্রিত পানি যতটুকু যেত, ততটুকুতেই মাছ মরে থাকত। এভাবে মাছ শিকারের জন্য মেলপাতা ব্যবহার করতে করতে এই এলাকার নাম হয়ে ওঠে মেলখুম।

সতর্কতা ও প্রস্তুতিযারা সাঁতার জানেন না, শ্বাসকষ্ট কিংবা ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে, তারা এই খুমে নামবেন না। কারণ খুমের পানি অনেক বেশি ঠান্ডা। মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে এই জায়গা। অবশ্যই কয়েকজন মিলে যাবেন। বেশি ভারী ব্যাগ নিয়ে যাওয়া যাবে না। মেলখুমের রাস্তায় ভালো খাবার দোকান নেই, তাই আপনার পছন্দমতো খাবার সঙ্গে নিয়ে নিতে হবে। ট্র্যাকিংয়ে স্যান্ডেল বা জুতা আবশ্যক এবং লাইফ জ্যাকেট থাকলে ভালো।

কীভাবে যাবেন?দেশের যে কোনো স্থান থেকে বাসে জোরারগঞ্জ এলাকার সোনাপাহাড় নেমে যেতে হবে। ট্রেনে করে এলেও সীতাকুণ্ড অথবা চিনকীআস্তানা রেল স্টেশন নেমে সোনাপাহাড় বাজারে আসা যায়। সেখান থেকে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে ট্রেইলে যাওয়ার রাস্তা।

কোথায় থাকবেন?এই ভ্রমণ এক দিনের, তাই থাকার দরকার পড়বে না। তবু নিতান্তই রাতে থাকতে চাইলে মিরসরাই বা সীতাকুণ্ডে হোটেল পাবেন। আরও ভালো হোটেলে থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম শহরেও চলে যেতে পারেন।

আরও পড়ুন

সীতাকুণ্ড ভ্রমণে একদিনেই ঘুরে আসুন ৩ স্থানে বিছনাকান্দি ভ্রমণের সেরা সময় কখন?

কেএসকে/এমএস