অর্থনীতি

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে

‘মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে। সেজন্য একটু সংকোচনমূলক বাজেট হওয়া বাঞ্ছনীয়। নতুন প্রকল্পে আপাতত বিনিয়োগ না করা ভালো। কারণ সেটা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিতে পারে। আর সরকারি বিনিয়োগের গুণগতমান যতটা বাড়ানো যায়, যাতে উৎপাদশীলতা বাড়ে। মূল্যস্ফীতি সামনে রেখে আগামী বাজেট প্রণয়ন করার চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।’

Advertisement

বলছিলেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত। আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেট নিয়ে সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন এই অর্থনীতিবিদ। জানিয়েছেন, আগামী বাজেট সংকোচনমূলক করতে হবে। নতুন করে টাকা ছাপানো যাবে না। নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়াও উচিত হবে না। টাকা যাতে উৎপাদশীল খাতে বেশি ব্যয় হয়, সেজন্য অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাঈদ শিপন।

জাগো নিউজ: বর্তমান পরিস্থিতিতে আসন্ন বাজেটে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত?

জায়েদ বখত: একটা মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে। সেজন্য একটু সংকোচনমূলক বাজেট হওয়া বাঞ্ছনীয়। যেসব প্রকল্প শেষের দিকে আছে, সেগুলোতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া, নতুন প্রকল্পে আপাতত বিনিয়োগ না করা। কারণ সেটা মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দিতে পারে। আর সরকারি বিনিয়োগের গুণগতমান যতটা বাড়ানো যায়, যাতে উৎপাদশীলতা বাড়ে। মূল্যস্ফীতি সামনে রেখে আগামী বাজেট প্রণয়ন করার চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

Advertisement

জাগো নিউজ: মূল্যস্ফীতি কমাতে গিয়ে সুদের হার বেড়ে গেলে সেখানে হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে কি না?

জায়েদ বখত: সুদের হার আমার কাছে মনে হয় না এত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই মুহূর্তে বেসরকারি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত। ক্রেডিট গ্রোথ যদি প্রাইভেট সেক্টরে খুব বেশি হতো, তাহলে তখন সুদের হার বাড়িয়ে চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করার বিষয় থাকতো। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাইভেট খাতে যে ঋণ প্রবাহের টার্গেট করছে তার চেয়ে কম ঋণ প্রবাহ হচ্ছে। তাহলে আমি সুদের হার কেন বাড়াবো।

আমাদের প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দিতে হবে। এটা নতুন করে বলার কিছু না, এটা সব সময় বলা হচ্ছে, কিন্তু আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছি। করযোগ্য মানুষকে করের আওতায় আনতে হবে। কর ফাঁকি রোধ করতে হবে।

জাগো নিউজ: বাজেটে ঘাটতি কেমন রাখা উচিত?

Advertisement

জায়েদ বখত: রেভিনিউ বাজেটে তো আর ঘাটতি হয় না। ওভারঅল বাজেটে যেটা হয়, উন্নয়ন বাজেটে। উন্নয়ন বাজেটে তো ঘাটতি হবেই। উন্নয়ন বাজেটে ঘাটতি হলে সব সময় একটা ব্যবস্থা থাকে। বৈদেশি সাহায্য ঋণ ও অভ্যন্তরীণ ঋণ নিয়ে। ওভারঅল বাজেট একটু সংকোচন হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর টাকা খরচের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে, যাতে উৎপাদনে কন্ট্রিবিউট করে বেশি।

জাগো নিউজ: সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটানোর ক্ষেত্রে বৈদেশিক সাহায্য বা ঋণ বেশি নেওয়া উচিত, নাকি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ বেশি নেওয়া উচিত?আরও পড়ুন

৬৪ শতাংশ মানুষের বাজেট নিয়ে কোনো প্রত্যাশা নেই: সিপিডি  আসছে বাজেটের আকার হবে ৮ লাখ কোটি টাকা: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী  বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে কাজ করছি 

জায়েদ বখত: এটা নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর। বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে যদি কঠিন শর্ত থাকে বা সুদের হার যদি বেশি হয়, তাহলে সব সময় তো বিদেশ ভালো তা নয়। আর বেসরকারি খাতে যদি অলস অর্থ থাকে তাহলে নেবে না কেন। নতুন টাকা না ছাপানোই ভালো।

জাগো নিউজ: একদিকে রাজস্ব আয় কম, অন্যদিকে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তাও অর্জিত হয় না। রাজস্ব আয় বাড়াতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?জায়েদ বখত: প্রধান বিষয় আমাদের প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দিতে হবে। এটা নতুন করে বলার কিছু না, এটা সব সময় বলা হচ্ছে, কিন্তু আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছি। করযোগ্য মানুষকে করের আওতায় আনতে হবে। কর ফাঁকি রোধ করতে হবে। এই মুহূর্তে আমাদের রাজস্ব আয় তো খুবই নগন্য।

 শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে আমাদের যে অর্থ দরকার তার তুলনায় বরাদ্দ কম হয়। অবশ্যই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে যতটুকু বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব হবে, সেটাই আমাদের জন্য ভালো হবে।

জাগো নিউজ: সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?জায়েদ বখত: এটা তো লাগবেই। কারণ মূল্যস্ফীতি তো সহসা যাচ্ছে না। কাজেই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে যারা এটার (মূল্যস্ফীতি) অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের যতটা সম্ভব প্রটেকশন দেওয়া যায়।

জাগো নিউজ: সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকার এক কোটি পরিবারকে যে সহায়তা দিচ্ছে, সেটা কি যথেষ্ট?

জায়েদ বখত: এই কাভারেজটা আরও বাড়ানো উচিত। আর এটাকে কার্যকর করতে হবে, যাতে এখানে যারা যোগ্য না তারা যেন ঢুকতে না পরে। এটা নিশ্চিত করতে হবে।

জাগো নিউজ: শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?জায়েদ বখত: শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে আমাদের যে অর্থ দরকার তার তুলনায় বরাদ্দ কম হয়। অবশ্যই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে যতটুকু বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব হবে, সেটাই আমাদের জন্য ভালো হবে।

জাগো নিউজ: বর্তমানে ডলার সংকট রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে আগামী বাজেটে কোনো বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়ার প্রয়োজন আছে কি?

জায়েদ বখত: রপ্তানির মূল বিষয়টা হলো রপ্তানি বহুমুখীকরণ। সেটা তো আর এক বাজেট দিয়ে করা যাবে না। আর আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে সবকিছু হয় না। এখানে অন্য কিছু বিষয় আছে, প্রযুক্তির বিষয় আছে। সেদিক থেকে আমাদের দুর্বলতা রয়ে গেছে অনেকদিন ধরেই। আমরা গার্মেন্টেসের ওপর বেশি নির্ভরশীল থেকে গেছি। এমএএস/এএসএ/জিকেএস