ভ্রমণ

একদিনেই ঘুরে আসুন পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে

চট্টগ্রামে অন্যতম এক দর্শনীয় স্থান হলো পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে খুবই জনপ্রিয় স্থানটি। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। যা কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত।

Advertisement

চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পতেঙ্গা। প্রিয়জনকে নিয়ে যারা একদিনের ট্যুরে ঘুরতে যেতে চান, তাদের জন্য সেরা হতে পারে এই সমুদ্রসৈকত।

পতেঙ্গা সৈকতের চারপাশে প্রকৃতির নৈসর্গিক মনোরম দৃশ্যের হাতছানি সঙ্গে সমুদ্রপাড়ের কর্মব্যস্ততা ও বিশাল সমুদ্রের সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর মিলনমেলা।

সাগর পাড়ের বালুকা রাশি, বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ মন ভরিয়ে দেবে আপনার। দেখা পাবেন নানা বয়সী মানুষ কতই না আনন্দ করছে সেখানে। সৈকতজুড়ে চার কোণাবিশিষ্ট কংক্রিটের ব্লকগুলো দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এতে সৈকতের সৌন্দর্য অনেকটাই বেড়েছে।

Advertisement

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এর প্রচুর ক্ষতি হয়। বর্তমানে বাঁধ দিয়ে রক্ষাণাবেক্ষণ করায় সৈকতের সৌন্দর্য অনেকটা বেড়েছে। জোয়ারের সময় ঢেউয়ের আঁচড় যেন নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করে। আর সে বাঁধের উপর সবুজ ঘাস দেখলে মনে হবে যেন সবুজের কার্পেট বসানো আছে।

আরও পড়ুন• বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে গিয়ে যা দেখবেন

সঙ্গীকে নিয়ে কম খরচেই ঘুরে আসুন বাংলার দার্জিলিং

জোয়ারের সময় সিসি ব্লকের ওপর আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করে। এতসব মনোমুগ্ধকর পরিবেশের কারণে চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা সৈকতটি অন্যান্য সৈকত থেকে খানিকটা আলাদা।

Advertisement

কক্সবাজারে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত যারা যাননি কিংবা সময়ের অভাবে দেখার সুযোগ পাননি, তাদের জন্য পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত হতে পারে সবচেয়ে ভালো বিকল্প। এরই মধ্যে এই সৈকত বিশ্ব পরিচিতি পেয়েছে।

বিকেল হতে না হতেই হাজারো পর্যটক ভিড় জমায় এই সমুদ্র সৈকতে। সেখানকার পরিবেশ এতোটাই মনোমুগ্ধকর যে তীরে দাঁড়ালেই কানে বাজে সাগরের কল্লোল।

সাগড়পাড়ে দাঁড়ালেই পায়ে এসে লুটিয়ে পড়বে নীল জলরাশির অপার ঢেউ, দেখা মিলবে বিশ্বের নানা দেশের নানা পতাকাবাহী নোঙর করা সারি সারি জাহাজ।

সৈকতের পাশে ও ঝাউ বনে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান। সমুদ্রে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য আছে স্পিড বোট। সমুদ্র তীরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে সি বাইক ও ঘোড়া। ঝাউবন ঘেঁষে উত্তর দিকে একটু সামনেই রয়েছে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলি নদীর মোহনা।

বিকেলে সূর্যাস্তের দৃশ্য না দেখলে সমুদ্রসৈকতের আসল দৃশ্য দেখা মিস হবে। সূর্যাস্ত যাওয়ার দৃশ্য দেখলে মনে হবে যেন সূর্য সাগরের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। আর এমন লাল রং ধারণ করে সূর্য তখন যা অসম্ভব দৃশ্য তৈরি হয়ে যায়।

মহূর্তে আপনার মন জুড়ে যাবে। আবার সকালে যখন সূর্য উদয় হয়, তখন মনে হবে সাগর থেকে যেনো সূর্য উঠতেছে। কি ঠান্ডা মনোরম পরিবেশে অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত।যা নিজ চোখে কেউ না দেখলে বিশ্বাস করবে না।

সতর্কতা

সৈকতে ঘুরতে গিয়ে কোনো আপত্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে দল বেধে যাওয়াই ভালো। কোনো বিপদ কিংবা অভিযোগ থাকলে সৈকতের ভ্রাম্যমাণ পুলিশ ফাঁড়িতে জানাতে পারেন। আর অধিক লোকের সমাগম আছে ওই দিকে অবস্থান করাই ভালো।

সৈকতে বেড়াতে গেলে নিজস্ব ক্যামেরা নিয়ে যেতে পারেন। স্পিডবোড, নৌকা, ঘোড়া যেখানেই চড়ুন! আগে দেখে শুনে ভাড়া শুনে নিলে ভালো হয়।

কীভাবে যাবেন ও কোথায় থাকবেন?

আবার যারা ঢাকা বা দেশের অন্যান্য স্থান থেকে আসবেন পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত দেখতে তারা প্রথমে চট্টগ্রাম শহরে চলে যাওয়া ভালো। তারপর চট্টগ্রাম শহরের এ কে খান কিংবা জিইসি থেকে খুব সহজে যেতে পারেন সৈকতে।

পতেঙ্গা চট্টগ্রাম থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে। চট্টগ্রাম শহর থেকে অটো রিকশায় করে যেতে সময় লাগে ঘণ্টাখানেক। ভাড়া পড়বে ২৫০ টাকার মতো।

আর বাসে যেতে চাইলে তো কথাই নেই, বহদ্দার হাট, লালখান বাজার মোড়, জিইসি মোড়, নিউ মার্কেট, চক বাজার মোড় থেকে সরাসরি বাস পাবেন। বাসের গায়ে লেখা দেখবেন সি বিচ।

আর যারা চট্টগ্রামে বসবাসকারী তাদেরকে নতুন করে যাবার উপায় বলার দরকার নেই। সড়ক পথে যেতে চাইলে-অলংকার মোড়- এ কে খান হয়ে সরাসরি চলে যেতে পারবেন সৈকতে।

তাছাড়া সি বিচ লেখা বাসগুলোতে চেপে বসলেই হবে শুধু। আর যদি নগরীর জিইসি মোড় থেকে যেতে চান তবে ১৮০-২০০ টাকায় সিএনজি অটোরিকশা নিয়েও যেতে পারবেন।

অন্যদিকে ট্রেনে বা রেলপথে কেউ চট্টগ্রাম আসতে হলে তাকে ট্রেনে ঢাকা-চট্টগ্রামের রুটে মহানগর প্রভাতি ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে, চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ২০ মিনিটে, মহানগর গোধূলি ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ঢাকা ছাড়ে রাত ১১টায়। ভাড়া ১৬০-১১০০ টাকা।

আর যদি কেউ সেখানে রত্রিযাপন করতে চান তাহলে বেশ কিছু উন্নতমানের আবাসিক হোটেল আছে। আবাসিক হোটেলগুলো ভাড়া নিয়ে রাত কাটাতে পারেন।

জেএমএস/এএসএম