একুশে বইমেলা

মাঝে মাঝে বসার জায়গা রাখতে হবে: বঙ্গ রাখাল

বঙ্গ রাখাল একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক। তার জন্ম ১২ জুন ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার গোলকনগরে। তিনি লিখছেন দৈনিক, অনলাইন ও লিটল ম্যাগে। বঙ্গ রাখাল সাভার গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ঢাকা স্কুল অব ইকনোমিকস থেকে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ইকোনমিকস এবং গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র থেকে গণহত্যার ওপর পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সদস্য। তিনি সমাজসেবামূলক বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত।

Advertisement

তার উল্লেখযোগ্য বই—সংস্কৃতির দিকে ফেরা, লোক মানুষের গান ও আত্ম অন্বেষণ, মানবতাবাদী লালন জীবন অন্বেষণ, হাওয়াই ডাঙ্গার ট্রেন, মনীষা বীক্ষণ ও অন্যান্য, অগ্রন্থিত রফিক আজাদ, পাগলা কানাই ও তাঁর তত্ত্ব দর্শন, লণ্ঠনের গ্রাম, যৈবতী কন্যা ইশকুলে, কবিতার করতলে, অন্ধ যাজক, ছোটবোয়ালিয়া-জয়ন্তীনগর-বসন্তপুর গণহত্যা (অভিসন্দর্ভ)। তিনি আবুল মনসুর আহমদ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা পুরস্কার, জলধি সম্মাননা, অনুপ্রাণন সাহিত্য সম্মাননা অর্জন করেন। সম্পাদনা করেন নিহারণ নামে একটি ছোট কাগজ।

সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—

জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?বঙ্গ রাখাল: আগামী বইমেলায় সব ঠিকঠাক থাকলে আমার দুটি কবিতার বই ‘জন্মান্ধ ঘোড়া’ অনুপ্রাণন এবং ‘কে বলে দাঁড়িয়ে আছি তোমার অপেক্ষায়’ চন্দ্রবিন্দু থেকে প্রকাশিত হবে। আজকের বই থেকে প্রবন্ধের বই ‘বিপ্লবী লীলা নাগ ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ প্রকাশিত হওয়ার কথা। আবার পেপার প্রোক প্রকাশনী থেকে ‘ফকির মজনু শাহ’কে নিয়ে কিশোর উপযোগী একটি জীবনীও প্রকাশিত হওয়ার কথা। সব মিলিয়ে চারটি বই প্রকাশিত হবে বলে আশা রাখি।

Advertisement

আরও পড়ুন: বইমেলার প্রত্যেকটি প্রবেশপথ খোলা রাখা জরুরি: মোহাম্মদ অংকন 

জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান?বঙ্গ রাখাল: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা দেখতে চাই পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি। বইয়ের স্টলগুলো ক্রমিক অনুযায়ী সাজানো হলে দর্শনার্থীরা সহজেই তা খুঁজে পাবেন। পাঠক একদিক থেকে দেখতে দেখতে যেন শেষটা পর্যন্ত ঘুরে দেখতে পারেন—সেই প্রত্যাশা রাখি। মাঝে মাঝে বসার জায়গা রাখতে হবে। যেখানে ক্লান্ত পাঠক একটু বিশ্রাম নিতে পারবে। প্যাভিলিয়নগুলো থাকবে মাঝে মাঝে। সেগুলোও আবার থাকবে সুসজ্জিতভাবে বিন্যাসিত। নিরাপত্তার নামে মেলায় চলে পুলিশি তল্লাশি। তাদের এই তল্লাশি বন্ধ করতে হবে এবং তাদের আচরণ হতে হবে মানবিক। খাবারের দোকানগুলো রাখতে হবে একপাশে এবং খাবারের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে। খাবারের দোকানে দাম অনেক বেশি রাখা হয়। তাদের অতিরিক্ত দামের কথা বললে তারা বেশি টাকা দিয়ে টেন্ডার নেন বলে জানান। নারী-পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন টয়লেটের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং লিটল ম্যাগের জন্য স্বতন্ত্র্য জায়গা দিতে হবে। যেখানে সারাদেশের লিটল ম্যাগকর্মীরা তাদের প্রাণের কর্ণার নিজেদের মতো করে সাজিয়ে তুলবেন—মাতিয়ে রাখবেন। তবে এখানে বাচ্চাদের বই বা যারা প্রকাশনীর ব্যবসা করতে চান, তাদের পত্রিকা থাকলেও এখানে তাদের স্টল না দিলেই মনে করি ভালো হয়। লিটল ম্যাগ কর্নারে শুধু সারাদেশের আনাচে-কানাচের লিটল ম্যাগই স্থান পাবে।

জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসংগতি চোখে পড়েছে?বঙ্গ রাখাল: আমার দেখা বিগত বইমেলার অনেক অসংগতিই চোখে পড়েছে। কয়েক বছর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের দিকে প্রবেশের পথ ছিল। তা হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থী বা বই প্রেমিকেরা বিড়াম্বনার শিকার হয়েছেন। বইমেলায় স্টল বিন্যাস ঠিক না থাকার কারণে একদিকে স্টল সিরিয়ালে থাকলেও অন্যদিকে আবার সিরিয়াল খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্টল বিন্যাসে ত্রুটি ছিল মানুষের জন্য আরেক বিরক্তিকর ব্যাপার। খাবারের দাম ছিল আকাশ সমান। ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে প্রতিবারের মতো একই লেখককে ডাকা হয়; যা তাদের গোষ্ঠীবাজী ছাড়া আর কিছু নয়। বইমেলায় সবচেয়ে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে লিটল ম্যাগ। মেলা শুরু হওয়ার পরেও দেখা যায়, লিটল ম্যাগের জায়গায় কাজ চলছে—লাইট নেই, চেয়ার নেই। এ যেন ধনীর ঘরের কোণে গরিবের ঝুপড়ি ঘর। যা পরিষ্কার হলেই ধনী স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। তবে ইচ্ছা করে তারা আবার এদের তাড়িয়েও দিতে পারছে না।

আরও পড়ুন: গোছানো ও পরিপাটি বইমেলা চাই: রনি রেজা 

Advertisement

জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে?বঙ্গ রাখাল: প্রতিনিয়তই বই বিক্রি বাড়ছে। বই বিক্রি না বাড়লে এত নতুন নতুন প্রকাশকের জন্ম হতো না। তাহলে কেন এ ব্যবসায় মানুষ বিনিয়োগ করছে? আসলে বাজারে একটি কথা চালু আছে, বই বিক্রি হয় না। বই বিক্রি না হলে কোটি কোটি টাকার যে মেলা শেষে হিসাব দেওয়া হয়, এই টাকা কোথা থেকে আসে? লেখকদের টাকা দিয়ে প্রকাশকেরা বই করতে চান এবং তাদের যেন সম্মানি দেওয়া না লাগে—তার জন্যই তারা এমন কথা প্রচার করে থাকেন। মুরগি ধরা নামেও লেখকদের হেয়পতিপন্ন করে থাকেন কেউ কেউ। এমন অনেক কথাই বাজারে চাউর আছে। অবশ্যই আমরা আমাদের জায়গাকে ঠুনকো করে ফেলেছি। এর জন্য তো আমাদেরই ফল ভোগ করতে হবে। তবু বলবো, আগের তুলনায় অনেক মানুষ বই পড়ে এবং বই কেনে। নতুন নতুন প্রকাশকের আত্মপ্রকাশ দেখলেই আমরা বুঝতে পারি—বইয়ের বিক্রি বেড়েছে না কমেছে।

জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?বঙ্গ রাখাল: বইয়ের প্রচার তো অবশ্যই করতে হবে। বই তো একটা পণ্য আর এই পণ্য মানুষের কাছে পৌঁছতে হলে তো প্রচার করতেই হবে। তবে মনে রাখতে হবে, প্রচারের মাত্রা যেন সহনীয় মাত্রায় থাকে। এই প্রচার যেন মানুষের বিরক্তির কারণ না হয়ে ওঠে। এই প্রচারে যেন বেহায়াপনা না থাকে। বইমেলা এলেই যেমন বইয়ের স্টলের সামনে যাওয়া যায় না। কিছু কিছু মৌসুমী লেখক পারলে বই গছিয়ে দিতে পারলেই বাঁচেন। আবার কিছু লেখক আছেন, যারা মেলার সময় পরিচিত মানুষের সঙ্গে ভাব জমাতে চান কিন্তু মেলা শেষে সম্পর্কগুলো আর বিরাজমান থাকে না। শুধু কবি-সাহিত্যিকই যে আবার বইয়ের প্রচার বা মার্কেটিং করবে এমনও নয়। প্রকাশক কিংবা লেখক মিলিতভাবেই প্রচার করতে হবে এবং পাঠকের কাছে বইয়ের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। এর মধ্য থেকেই বিদগ্ধ পাঠকেরা সঠিক বইটি বেছে নেবেন। কথায় বলে, প্রচারেই প্রসার—আমি ভালো বই সম্পর্কে না জানলে কি কিনবো? সঠিক তথ্য জানা থাকলে তারা প্রতারিত হবেন না। লেখক বা প্রকাশকদের প্রতি ভ্রান্ত ধারণাও তৈরি হবে না।

আরও পড়ুন: সার্বিকভাবে বই বিক্রির পরিমাণ কমছে: অঞ্জন হাসান পবন 

জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?বঙ্গ রাখাল: আসলে লেখকের চেয়ে পাঠকই বেশি বিদগ্ধ হয়ে থাকেন। কেননা তারা পড়লেই বুঝতে পারেন—কোনটা তার সংগ্রহ করা দরকার আর কোনটা দরকার না। শুধু এ কথাই বলতে পারি, আপনারা বইমেলায় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে যাবেন। স্টলে স্টলে ঘুরে ঘুরে বই দেখবেন; পছন্দ অনুযায়ী বই সংগ্রহ করবেন এবং বই পড়বেন। অন্যকে বই পড়াবেন। তাহলেই বই কেনা এবং বইপড়ার সংস্কৃতি নিজের পরিবারের মধ্যেও গড়ে উঠবে। কারও মন রাখতে বই কিনবেন না; কিংবা কারও অনুরোধ রাখতে গিয়ে ঢেঁকি গিলবেন না।

এসইউ/জিকেএস