ভ্রমণ

শুধু বর্ষা নয়, শরতের টাঙ্গুয়ার হাওর একটু বেশিই সুন্দর

ইসতিয়াক আহমেদ

Advertisement

নয় কুঁড়ি কান্দার ছয় কুঁড়ি বিল নামে বিখ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওর। যার মূলত দুটি রূপ নিয়েই কথা হয় সব সময়। একটি বর্ষায় বৃষ্টি ভেজা হাওরের রুপ। আরেকটি শীতের শেষে বিস্তৃর্ণ ফসলের ক্ষেত্রে ছেয়ে যাওয়া রক্ত লাল শিমুল ফুলের হাওরের কথা।

তবে এই দুই রুপের মাঝেই আছে হাওরের আরেক মাতাল করা রূপ। যার কথা মূলত কেউ বলেনা কখনোই। শরতের টাঙ্গুয়ার হাওর। পরিষ্কার নীল আকাশ, স্বচ্ছ নীল পানি আর সবুজাভ প্রকৃতি আপনাকে মুগ্ধ করবে প্রতিটি মুহুর্তেই।

আরও পড়ুন: ঘুরে আসুন দেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম ‘মুনলাই’ থেকে

Advertisement

এ যাত্রায় আমরা পুরো এক বাস ঘুরুঞ্চি বেড়িতে পড়েছিলাম এ বাংলার রুপ গিলতে। রাত ১১টায় রওনা দিয়ে জ্যাম ঠেলে সুনামগঞ্জ পৌঁছায় সকাল ৯টা।

এ যাত্রায় শরতের টাঙ্গুয়া ভ্রমণের সঙ্গী টাঙ্গুয়ার হাওরের অন্যতম বড় ও সেরা হাউজবোট মনপুরা। ৮ কেবিনের এই বোটে প্রতিটি কেবিন ডোর লক সুবিধা সম্পন্ন।

আছে এটাচ ওয়াশ রুম সম্বলিত দুইটি কেবিন। এই হাউজবোটে হাই কমোড ও লো কমোড মিলিয়ে রয়েছে সর্ব মোট ৪টি ওয়াশরুম। একই সঙ্গে আছে সুবিশাল লাউঞ্জ। যেখানে বন্ধু ও পরিবার নিয়ে আড্ডা দিতে পারবেন ভরপুর।

আরও পড়ুন: অপরূপ সৌন্দর্যের আরেক নাম বাওয়াছড়া

Advertisement

মনপুরা হাউজবোটের ছাদ যেন এক সুন্দর সাজানো বাগান। গাছে ঘেরা, ও বসে আড্ডা দিতে দিতে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই হাওরের রূপ গেলার সব আয়োজন আছে এই বোটে।

হাউজ বোটে উঠেই সকালের নাশতা সারলাম চিকেন আখনি বিরিয়ানি সঙ্গে ডিম ভাজা, সালাদ, আচার দিয়ে। ভরপুর নাশতা শেষে উঠে পড়লাম আমরা হাউজবোটের ছাদে।

গরম ধোয়া ওঠা চা, শীতল ঠান্ডা বাতাস আর হাওরের রূপ সব মিলেমিশে যেন একাকার। শরতে হাওরের রূপে বিমোহিত হয়ে গলা ছেড়ে গান ধরলো কেউ কেউ।

আরও পড়ুন: যে দেশের পুরুষরা ‘বউ বাজার’ থেকে টাকা দিয়ে কেনেন বউ

যথারীতি ঘুরতে ঘুরতে চলে গেলাম আমরা ওয়াচ টাওয়ারে। টাঙ্গুয়ার হাওর ট্রিপের জলকেলি করার সব থেকে বেস্ট প্লেস এই ওয়াচ টাওয়ার। হালকা স্ন্যাক্স এর আয়োজন ছিল পানিতে নামার আগেই।

ওয়াচ টাওয়ার ঘুরে ছুটলাম আবার টেকেরঘাটের পথে। দুপুরের খাবারের আয়োজনে ছিল বড় হাওরের মাছ, দেশি মুরগির মাংস, সবজি, ডাল ও সালাদ।

এই মনপুরা হাউজবোটে পাবেন প্রায় ২৪ ঘণ্টার ইলেক্ট্রিসিটির ব্যবস্থা। তাই লাইট ফ্যান বা ডিভাইস চার্জ নিয়ে আমাদের ছিল না কোনো টেনশন।

আরও পড়ুন: ঘুরে আসুন সিলেটের সবুজ পাহাড়ের পাশে শাপলার রাজ্যে

টেকেরঘাট পৌঁছেই চলে গেলাম বিছানাকান্দির লাইট ভার্সন লাকমাছড়া ঘুরতে। ট্যাকেরঘাটের খুব কাছেই লাকমাছড়া। জাফলং আর বিছানাকান্দির মতোই জলরাশি আর পাহাড়ে ঘেরা জায়গাটি।

বিশাল আকারের সব পাথর পাবেন পুরো এলাকা জুড়ে। চারপাশে মেঘালয় পর্বতের সারি। ধাপে ধাপে নেমে আসা পাহাড়। একই সঙ্গে পাহাড়ের কোল জুড়ে সাদা ঝরনার পানি নেমে আসার, স্বচ্ছ ছড়া।

সেখান থেকে ঘুরে এসেই চলে গেলাম শহীদ সিরাজ লেকে শেষ বিকেল কাটাতে যা কি না বিখ্যাত নীলাদ্রি লেক নামেই বেশি পরিচিত।

আরও পড়ুন: ১৮ ঘণ্টা পানির নিচে থাকে যেই দ্বীপ

শরতের পরিষ্কার আকাশ, সঙ্গে বাহারি রঙের মেঘের মেলা, সবুজ প্রকৃতি, সুউচ্চ পাহাড়ের অদ্ভুত মুগ্ধতায় যে আপনি হারিয়ে যাবেন সেই গ্যারান্টি দিতেই পারি।

দিনের আলো নিভে আসলে আমরা ফিরলাম বোটে, সন্ধ্যার ছিলো চায়ের সঙ্গে নুডলসের আয়োজন। রাতে ছিল হাওরের হাঁস, বড় মাছ ভাজা, ডাল, সবজি সালাদ, ঠান্ডা কোমল পানীয়।

ভোর হতেই নৌকা পথ চলা শুরু করলো যাদুকাটার পথে। মনপুরার ছাদে বসে চা-বিস্কুটের সাথে ভোরের হালকা রোদ, ঠান্ডা ঝিরিঝিরি বাতাসে হাওরের মাঝে ছুটে চলা অনুভূতি বর্ণনা করার মতো নয়।

আরও পড়ুন: সাজেক ভ্যালিতে কীভাবে যাবেন ও কী কী দেখবেন?

আর তাই তো শুধু শীত বা বর্ষা নয়, শরতেও ঘুরতে যাওয়া উচিত টাঙ্গুয়ার হাওরে। একদম স্বচ্ছ ও নিলাভ যাদুকাটা নদী আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় হতে উৎপত্তি হয়ে এই স্থান দিয়েই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এই নদী। দেশের খনি শিল্পে এই নদীর আছে ব্যাপক অবদান।

পরের দিন সকালের নাশতা খিচুড়ি ডিম, সালাদ আচার খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম বারেক টিলার রুপ গিলতে। বারেকটিলা ভারত বাংলাদেশের সীমানা ঘেঁষা সেই স্থান যেখানে থাকে পাবেন মেঘালয় এর পাহাড়, ঝরনা আর যাদুকাটা নদীর বার্ডস আই ভিউ।

আরও পড়ুন: কম খরচে কীভাবে ঘুরবেন পান্থুমাই জলপ্রপাতে?

অতঃপর নৌকায় ফিরেই ছিল দেশি ফলের আয়োজন। মনপুরার বিস্তৃণ লাউঞ্জে এরই মধ্যেই জমে গেছে ভরপুর গানের আসর। শরতের টাঙ্গুয়ার রূপে বিমোহিত সবাই গলা ছেড়ে ধরেছে গান।

দুপুরে ছিল দেশি মুরগীর মাংস, হাওরের ছোট মাছ, ভর্তা, ডাল সবজির আরেক ভরপুর আয়োজন এই মনপুরায়। অবশেষে শরতের পরিষ্কার আকাশ, স্বচ্ছ পানি আর সবুজাভ প্রকৃতিকে বিদায় দিয়ে আমরা ফিরলাম ইট পাথরের নগরে।

জেএমএস/জেআইএম