ফিচার

শিশুর নিরাপত্তা খুব জরুরি

মামুন রাফী

Advertisement

একের পর এক বীভৎস কায়দায় শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। আইন-কানুন থাকার পরও শিশুদের প্রতি সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শিশুদের ওপর দৈহিক নির্যাতন হলেও নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায় না। এ জন্য আমাদের সামাজিক ও প্রচলিত নেতিবাচক আচরণগুলোকে পাল্টাতে হবে। শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে না থেকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ব্যক্তিগত ভাবেও পদক্ষেপ নিতে হবে।

বড়দের নিষ্ঠুরতার কাছে শিশুরা সবচেয়ে অসহায়। সেই নিষ্ঠুরতা অনেক সময় বাবা-মার কাছ থেকেও আসে। বাইরের মানুষ থেকেও আসে। সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে সুরক্ষা। শিশুরা নিরাপদ নয়। শিশুর নিরাপত্তা খুব জরুরি। শান্তিপূর্ণভাবে বাস করার নিরাপত্তা। স্কুলে যাওয়া-আসার নিরাপত্তা। খেলাধুলা-বিনোদনের নিরাপত্তা। মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার নিরাপত্তা। স্বাভাবিক সুস্থ জীবনযাপন করার নিরাপত্তা। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারিনি। শিশুরা নানাবিধ নির্যাতনের শিকার হলেও সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না।

পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায়, ২০২১ সালে ১৮৩টি শিশু হত্যার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। ২০২২ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯৭টিতে। তবে এই এক বছরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি—১ হাজার ৪১৯টি। যা ২০২১ সালের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। এ ছাড়া এই এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হওয়া শিশু নিয়ে সংবাদ প্রকাশও বেড়েছে প্রায় তিন গুণ—১৯৬টি।

Advertisement

আরও পড়ুন: পারিবারিক শিক্ষা কি ক্ষয়িষ্ণুতার পথে? 

এমজেএফের শিশু পরিস্থিতি প্রতিবেদন ২০২২ অনুসারে, এক বছরে ১২টি ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। সেগুলো হলো- যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, সড়ক দুর্ঘটনা, অন্য দুর্ঘটনা, অপহরণ, হত্যা, নির্যাতন, আত্মহত্যা, অপরাধে সংশ্লিষ্ট শিশু, নিখোঁজ ও পানিতে ডুবে মৃত্যু। এসব ক্ষেত্রে ২০২১ সালে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪২৬টি। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯৪ জনে। অর্থাৎ এক বছরে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর হার বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। এ ছাড়া ২০২১ সালে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছিল ৪১ হাজার ৯৫ শিশু। ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩০১ জন। যা আগের বছরের তুলনায় ৯৪ শতাংশ কম।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনার বাইরে ৩১১টি শিশু অন্য দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এই বছরে ৫৬০ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যা আগের বছরের (২০২১) তুলনায় প্রায় ৩২ শতাংশ কম। ২০২২ সালে ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে ৯৮ জন শিশু, যা আগের তুলনায় কিছুটা বেশি। এ ছাড়া ২০২২ সালে ৯৬ জন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার, ৩০ জন শিশু অপহরণ, ৬৮ জন শিশু নির্যাতন, ৩৩ জন শিশু নিখোঁজ ও ৯ জন শিশুর বিভিন্ন অপরাধে সংশ্লিষ্ট হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ সময়ে ৪৪টি শিশুর আত্মহত্যার খবর এসেছে গণমাধ্যমে।

বাবা-মার কাছে সন্তান সব সময়ের জন্যই আদরের, ভালোবাসার। কিন্তু অনেক সময় সন্তানের লালন-পালনের ক্ষেত্রে বাবা-মা মারধর করেন, যা একদমই উচিত নয়। শারীরিক নির্যাতনের ফলে শিশুর মানসিক ক্ষতি হয়। আমাদের দেশে পজিটিভ প্যারেন্টিং নিয়ে কোনো প্রশিক্ষণ নেই। এমনকি প্যারেন্টিংয়ের ব্যাপারেও নেই। আমরা শিশুকে কীভাবে লালন-পালন করব, তা অবশ্যই জানতে হবে। নিয়মিত শারীরিক আঘাত ও বকাঝকার ফলে অনেক ক্ষেত্রে শিশু মানসিকভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়ে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ময়লার স্তূপে নিদারুণ শৈশব!

শিশু নির্যাতন রোধে প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে আগে নিজে জানা, কী উপায়ে শিশুকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে পারবেন। একই সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যকেও বিস্তারিত জানাতে হবে শিশু নির্যাতন সম্পর্কে। সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও বোঝাতে হবে প্রতিরোধের উপায়গুলো। যদি শিশুর মধ্যে নির্যাতিত হওয়ার কোনো লক্ষণ পেয়ে থাকেন, তবে দেরি না করে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। যত দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, সন্তানের জন্য ততই মঙ্গলজনক হবে। শিশুদের ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে আছে। শিশুরা প্রতিহত করতে পারে না, ভয়ে ঘটনা গোপন করে। ফলে প্রতিবেশী ও স্বজনদের মাধ্যমে বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন করতে সবাইকে ভূমিকা নিতে হবে।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক।

এসইউ/