সাহিত্য

সুদীপ্তা ঘোষের গুচ্ছ কবিতা

উড়ুক সোনালি চিল

Advertisement

স্বরবৃত্ত-মাত্রাবৃত্ত-অক্ষরবৃত্ত কিংবা অন্ত্যমিল পাশে ঠেলে আসুক না নতুন একটা মধ্যমিল!অসুস্থ পৃথিবীর অন্ধকার ঠেলে ঠেলে ডানায় রোদ্দুর মেখে আকাশে উড়ুক না একবার সোনালি চিল!!ঘোরে নয়, ঘুমে নয়,হৃৎপিণ্ড ক্ষত হওয়া কষ্টের গোলক ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে আসুক না মানবিক ভবিষ্যৎ, যেখানে বৃষ্টির ‘টিপ টিপ’, নদীর ‘কুল কুল’ শব্দ সমন্বয়ে উঁকি দেবে ‘ভোলগা থেকে গঙ্গার’ দিবা-নিশা... জীবনযুদ্ধে অক্লান্ত সেই প্রতীকী নারীশক্তি,কখনো বিপ্লবী মাও সেতুং কিংবা ঝু-দেং এর জহুরি চোখ। আসলে জীবন তো আজীবন কল্পনার ম্যাজিক কার্পেট হয়ে থাকতে পারে না! অথচ পৃথিবীর তাবৎ ফন্দিবাজ মানুষ কেবল ভাঙছে মিলন সেতু,বাস্তবতা আর অবাস্তবতার মাঝখানে বাঁচার অম্লজান সেই মানবিক সেতু!!তাই বুঝি সোনালি ভবিষ্যতের পথ এতটাই স্যাঁতসেঁতে!পাকাল মাছের মতো!!!

****

নিষিদ্ধপল্লির বোল

Advertisement

যন্ত্রের মতো কেউ কেউ সংসারের এপাশ ওপাশ ভাঙে, তবুও কোথাও মেলে না বিশ্বাস। সংসারে কেবলই রঙিন প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়ায়। কিন্তু সেখানেও সব খুঁটিনাটি চোখের সীমার মধ্যে আটকে রাখতে হয় তাকে। দোলাচলে দোল খায় বার বার!অবশেষে, কানে লাগে ধুরন্ধর লোকগুলোর নাটুকে আভিজাত্যের ঢোলের বাজনা বাজে তার কানে। যদি বলি চাঁচাছোলা চোখ ধাঁধানো আলোর রোশনাই গিলে খেতে থাকে, গলা অবধি এলে ডুব সাঁতার, ডুব সাঁতার! আহারে! মানুষগুলো কেমন যন্ত্রমানব! বোঝা যায় না একটুও কান্নার কোনটা আসল, কোনটা নকল,হাসি কি চোখের জলের নাকি, উদগ্র আনন্দের! আবহমানতার সাথে পাল্লা দিতে দিতে মানুষগুলোর নিরন্তর চেষ্টা সাধারণ গতি বা নতুন টেস্টামেন্টে মিশে যাওয়ার।অথচ প্রত্যেকেরই বাঁচার কি প্রগাঢ় ইচ্ছে বোঝাই থাকে পিঠে!!

আসলে মানুষের জীবনধারার কত যে রকম আছে ক’জন তা জানতে চায়? এই সব রকমের আবার রকমফেরও আছে... নেই শুধু অতি সাধারণ সাধারণ, আটপৌরে স্বপ্নের বিভিন্নতা। এটাই মানুষ আর তার যোজন যোজন পথ পাড়ি দেওয়ার সাদামাটা তত্ত্ব, অথবা মস্তিষ্কে স্বপ্নের চাষ! কখনো সে চাষ হয় আবাদি, কিংবা অনাবাদি জমিতেও। কিন্তু লক্ষ্য এক... সুখ নামক পাখিটিকে হাতের নাগালে পাওয়া।

****

স্মৃতিরা কেবল ঈগলের ডানা ছুঁইছুঁই

Advertisement

আমাদের চোখের তীক্ষ্ণতা পাঁচশ মেগাপিক্সেল। তবুও সবকিছু পড়তে না পারার কী দারুণ অভিনয়! যেন একজন প্রকৃতই নিরক্ষর।কী আশ্চর্য যন্ত্রণার এই যাপিত জীবন! কত ভুল, কত শোক, কত ব্যথা, ক্ষত করে জীবনের দুর্লভ সময়কে স্বপ্ন আর মিথ্যে ঘোরে।হরিণ চাঞ্চল্যে সব বিষ মূর্খ বিশ্বাস পিটুইটারির কোষে কোষে সাজানোর নেশা কী সাংঘাতিকভাবে থাকে জীবনের বেশি ভাগজুড়ে।

আসলে জলের শব্দ কি কখনো ঘুঙুরের শব্দ হতে পারে?

বোঝে, একদিন সে বোঝে মূর্খ মানুষের দল,যখন সে কেবল জড়ভরত হয়ে সারশূন্য শরীরের বোঝা টেনে টেনে চলে।

চোখের মেগাপিক্সেলজুড়ে তখন কেবলই মেঘ ওড়ে, শৈশব-কৈশোর-যৌবন-বার্ধক্য নিয়ে। স্মৃতিরা তখন ঈগলের ডানা ছুঁইছুঁই, যে কোনো সময় লীন হবে হয়তোবা!!!

এসইউ/জেআইএম