বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চিত্রশালায় চলছে ১৪ দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী। রাজধানীর বাংলামোটরে কেন্দ্রের ভবনের পঞ্চমতলায় গত ৩ জুন এ প্রদর্শনী শুরু হয়। যা চলবে আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত। গত ২ জুন আলোকচিত্র চক্রের সদস্য, কোর্সের সদস্য ও শিক্ষকদের নিয়ে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন আলোকচিত্রী নাফিজ আহমেদ নাদভী। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
Advertisement
এবারের প্রদর্শনীটি আলোকচিত্র প্রশিক্ষণের অষ্টম সমাবর্তনের সদস্যদের। ‘বিজয়পুরের মৃৎশিল্প’ শিরোনামে প্রদশর্নীতে অষ্টম ব্যাচের ৫৪ জন নবীন শিল্পীর ৫৪টি আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা এবং সাপ্তাহিক ছুটির (শুক্র ও শনিবার) সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকছে।
চার মাস মেয়াদি এ আলোকচিত্র কোর্সের অষ্টম ব্যাচের কোর্স শুরু হয় গত ২১ অক্টোবর। ফটোগ্রাফি সম্পর্কে মৌলিক ধারণা দেওয়া এবং অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ফটোগ্রাফি সম্পর্কে শৈল্পিক উৎসাহ জাগানো এ চক্রের মূল লক্ষ্য। আলোকচিত্র প্রশিক্ষণের অষ্টম আবর্তনের সদস্যদের এবারে প্রয়াস ছিল কাদামাটির শিল্পের জগৎকে অনুধাবন করা, মৃৎশিল্পীর জীবন ও কর্মকে ক্যামেরায় তুলে ধরা। মাটির মণ্ড তৈরি থেকে যন্ত্রের ছাঁচে কিংবা হাতের নিখুঁত নকশায় দৃষ্টিনন্দন মাটির শিল্পকর্মে রূপান্তরিত হবার প্রক্রিয়া ও মৃৎশিল্পীদের জীবন বাস্তবতার চিত্র ফ্রেমবন্দি করেছেন ৫৪ জন নবীন আলোকচিত্রী।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম-পরিচালক (প্রোগ্রাম) এবং কোর্সটির কো-অর্ডিনেটর মেসবাহ্ উদ্দিন আহমেদ সুমন জানিয়েছেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ‘আলোর ইশকুল’ কার্যক্রমের একটি হচ্ছে ফটোগ্রাফি কোর্স। খুব দ্রুতই নবম আবর্তনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
Advertisement
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আলোর ইশকুলের ৭৫টি উৎকর্ষ চক্রের একটি ফটোগ্রাফি কোর্স। মৃৎশিল্প আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে। যে শিল্পে প্রতিটি মাটির দানায় জড়িয়ে আছে মাটিবর্তী মানুষের যাপিতজীবনের গল্প। আধুনিক সভ্যতায় শিল্পায়নের থাবায় দিন দিন বিলুপ্ত হচ্ছে এ শিল্প। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর হলো মৃৎশিল্পের গ্রাম। এখানকার পাল সম্প্রদায়ের লোকজন বহু বছর ধরে টিকিয়ে রেখেছেন অতিপ্রাচীন এ মৃৎশিল্প। এখানে গভীর ভালোবাসা আর মমতা দিয়ে নিপুণ হাতের কারুকাজের মাধ্যমে কারিগররা তৈরি করেন নানা তৈজসপত্র ও সামগ্রী।
কুমোরেরা হাতের খেলায় কাঁদামাটিতে গড়ে তোলেন একেকটি মনোমুগ্ধকর অবয়ব। কাদামাটির শিল্পরূপ। দেশ তো বটেই, দেশের বাইরে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও জাপানে যাচ্ছে মাটির তৈরি এসব পণ্য। অনেক সমস্যা ও সংকটের মধ্যেও বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে কুমিল্লার বিজয়পুরের মৃৎশিল্পীদের সংগঠন ‘রূদ্রপাল সমবায় সমিতি’। নবীন আলোকচিত্র শিল্পরা বিজয়পুরের মৃৎশিল্পীদের নানা কাজ ও জীবন বাস্তবতার চিত্র ফ্রেমবন্দি করেছেন নিপুণ প্রেমে ও দরদে।
এবারের কোর্সটি পরিচালনা করেন আলোকচিত্র প্রশিক্ষক মীর শামছুল আলম বাবু। প্রদর্শনীর কিউরেশন করেছেন আলোকচিত্রী কে এম জাহাঙ্গীর আলম। প্রতিদিন দর্শনার্থীদের সরব উপস্থিতিতে মুখরিত হয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চিত্রশালা। নবীন আলোকচিত্র শিল্পীরা বিশ্বাস করেন, তাদের যৌথ প্রদর্শনীটি প্রকৃতপক্ষেই সফল হবে দর্শকদের উপস্থিতি ও মননে। বিলুপ্ত প্রায় এ শিল্প রক্ষায় সরকার এবং ব্যক্তি-সংগঠন পর্যায় থেকেও এগিয়ে আসতে হবে।
এমকেআর/এসএএইচ
Advertisement