একটি শহরকে দুই ভাগ করে দিয়েছে সুরমা নদী। এমন নদী-প্রকৃতি বাংলাদেশে খুব কম শহরে আছে। তাই সিলেট শহরের প্রাকৃতিক সুরক্ষা নদীকে ঘিরে। সুরমা রক্ষায় প্রয়োজনে সংগ্রাম করতে হবে। এমন আহ্বানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘নদীর জন্য সংগ্রামের গান।’শনিবার বিকেলে সিলেট নগরের কিনব্রিজের নিচে সুরমা নদীর চাঁদনিঘাটে উন্মুক্ত মঞ্চে নদী-সচেতনতা ও সংগ্রামের গান গেয়ে দর্শণার্থীদের নদী সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সিলেটের সাংস্কৃতিক সংগঠন নগরনাট।সোমবার (১৪ মার্চ) আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। এ দিবসকে সামনে রেখে ‘নদীর জন্য সংগ্রামের গান’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখা ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার। অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয় গত ৩ মার্চ হন্ডুরাসে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত নদী সংগ্রামের নেত্রী বেরতা কাসেরেসকে।অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বক্তৃতায় নিহত নদী সংগ্রামের নেত্রী বেরতা কারেসকে স্মরণ করে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ থেকে নদী সংগ্রাম পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়েছে। তিনি সুরমা নদীকে সিলেট নগরবাসীর জন্য পরম এক সৌভাগ্য উল্লেখ করে বলেন, সুরমা নদী রক্ষা সিলেট শহরকে প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষা করার শামিল। তাই সিলেটবাসীর জন্য নদী রক্ষার সচেতনতা কোনো গোষ্ঠীর নয়, আপামর জনতার।এনামুল হাবীব আরও বলেন, সুরমা নদীর পানি থেকেই সিলেটের মানুষের ব্যবহারের জন্য লাখ লাখ ঘন লিটার পানি পরিশোধন করে থাকে সিটি কর্পোরেশন। এই পানি নগরীর লাখো মানুষ বাসা-বাড়ি ও হোটেল-রেস্তরাঁয় ব্যবহার করে থাকেন। তাই আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে সুরমা নদীসহ সকল নদ-নদীকে দূষণ বাঁচাতে হবে।বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আবদুল করিম কিম আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসকে সামনে রেখে সপ্তাহব্যাপি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার শুরুতে তিনি সিলেটে সুরমাসহ বিভিন্ন নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা সম্প্রসারণ হওয়ায় দখল ও দূষণের আরেক নতুন কারণ হিসেবে অভিহিত করেন। নদীকেন্দ্রিক ব্যবসাকে পরিবেশ ও নদী দূষণ মুক্ত রাখার আহ্বান জানান তিনি। নদী দূষণ মুক্ত রাখতে সপ্তাহব্যাপি কর্মসূচি ঘোষণা ও আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখা ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপারের যৌথ এ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন দৈনিক সবুজ সিলেট এর ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক, জাগো নিউজের বিভাগীয় প্রতিনিধি, পরিবেশকর্মী ছামির মাহমুদ, সিলেটের পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক মোহাম্মদ আশরাফুল কবীর ও সারী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবদুল হাই আল হাদী।আলোচনা পর্বের পরপরই শুরু হয় গান। নগরনাটের সভাপতি অরূপ দাশ ও সাধারণ সম্পাদ উজ্জ্বল চক্রবর্তীর নেতৃত্বে গানের দলের সাতটি পরিবেশনা হয় নদীকে ঘিরে। এরমধ্যে সুন্দরবনের নদীপথ নিয়ে তাদের নিজস্ব গাণ দর্শকদের আপ্লুত করে।নগরনাটের শিল্পীদের পরিবেশনায় গানে গানে বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের নদী সুরমা ও কুশিয়ারার উজানে বরাক নদীতে ভারত সরকারের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাধ, ধলাই, পিয়াইন, সারী গোয়াইন, সোনাইবরদল, মনু, জুড়িসহ প্রভৃতি নদীর দখল-দূষণ অবস্থা তুলে ধরে জনসচেতনতায় প্রতিবাদে এককাট্টা হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।সপ্তাহব্যাপি কর্মসচি: আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে নদী তীরবর্তী এলাকায় আজ রোববার ও কাল সোমবার প্রচারপত্র বিলি এবং সোমবার বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নদী ও পরিবেশ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ, ছবি ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা।মঙ্গলবার সুরমা নদীর উৎসমুখ খননের দাবিতে কাজীরবাজার সেতুর ওপর অবস্থান কর্মসূচি। বুধবার সচেতনতা কার্যক্রম ও শেষ দিন ১৭ মার্চ সুরমা নদীর তীরে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাইসাইকেল র্যালি।ছামির মাহমুদ/বিএ
Advertisement