কৃষি ও প্রকৃতি

সবুজে বেঁচে থাকার লড়াই

রুবেল মিয়া নাহিদ

Advertisement

প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে। কেউ পাহাড় কাটছেন। কেউ নদী দখল করছেন। কেউ জল দূষণ করছেন। কেউ কাটছেন গাছ। যেন এমন মানুষের পায়ের ভারে প্রকৃতিতে ঘা সৃষ্টি হয়ে গেছে। গাছের কান্না শোনা যাচ্ছে না, তবে তা উপলব্ধিতে আসছে। বন, বৃক্ষ, জল, জলজপ্রাণী, কৃষি, মাটি, মানুষ বা জীব আজ পুরোপুরি প্ল্যাস্টিকের দূষণে।মানুষ এখন নিজের আর আগামীর প্রজন্ম রক্ষায় ব্যস্ত।

আমাদের বাঁচতে হলে প্রকৃতিকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: কৃষ্ণচূড়ার রঙে প্রকৃতি যেন নবরূপে 

Advertisement

প্রকৃতি বনাম মানুষের লড়াইটা শুরু হয়েছিল তখনই; যখন মানুষ গাছ কেটে ঘর-বাড়ি, পাহাড় কেটে রাস্তা কিংবা নদীতে বাঁধ দিয়ে নতুন নতুন সভ্যতার সূচনা করেছিল। তবে সে লড়াইটা ছিল টিকে থাকার লড়াই। বেঁচে থাকার লড়াই। তাই হয়তো নির্মল ধরিত্রীও তা মেনে নিয়েছিল কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া ছাড়াই।

এটি তখনই সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে; যখন মানুষ বনাঞ্চল উজাড় করে, শিল্প-কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে কয়লা পুড়িয়ে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের অদৃশ্য ছাদ তৈরি করেছে। আর তাতে সূর্যের তাপ (অতিবেগুনি রশ্মি) আটকে রেখে ধরিত্রীকে করে তুলেছে উষ্ণ থেকে উষ্ণতর। প্রকৃতি বনাম মানুষের লড়াইটা প্রথম খেয়াল করেছিল বিজ্ঞানীরা ১৯৫০ সালে। বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি হুমকির সম্মুখীন।

আরও পড়ুন: বৃষ্টির পানি পান করে যে পাখি 

জাতিসংঘের তথ্যমতে, প্রকৃতি ধ্বংসের বর্তমান ধারা চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ লাখ প্রজাতি বিলুপ্ত হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে হচ্ছে, তা যদি চলতে থাকে তাহলে ২০৭০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রতি তিনটির মধ্যে একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হতে পারে। গত ৫০ বছরে গড়ে ৬০ শতাংশের বেশি বন্যপ্রাণী হ্রাস পেয়েছে। সে হিসেবে গত ১০ মিলিয়ন বছরের তুলনায় বর্তমানে প্রজাতি বিলুপ্তির গড় হার ১০ থেকে ১০০ গুণ বেশি।

Advertisement

পৃথিবীব্যাপী বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভগুলো মনুষ্য কর্মকাণ্ডে অস্বাভাবিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পৃথিবীর ৭৫ শতাংশ ভূ-ভাগে মানুষ ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন করেছে। বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ সামুদ্রিক প্রতিবেশ আজ পরিবেশগত হুমকির সম্মুখীন।

আরও পড়ুন: জাতীয় পাখি দোয়েল কি বিলুপ্তির পথে? 

আমায় ফিরিয়ে দাও বন-বৃক্ষ, নদী-বিল-জল ও জলজপ্রাণী, মাটি-কৃষি এবং মানুষকে। প্রকৃতির সৃষ্টি জীব বা মানুষ ভোগের ক্ষেত্রে প্রকৃতির প্রতি অনুদার। এমনকি নিজেদের আগামী প্রজন্মের জন্যও অনুদার। কিন্তু মানুষ যদি প্রকৃতির জন্য এতটুকু সহনশীল হতো, তাহলে আজকের বিশ্বজীবের জন্য এতটুকু অমূলক হতো না। মানুষ বদলেছে। প্রকৃতিও বদলাচ্ছে।

এসইউ/জিকেএস