কৃষি ও প্রকৃতি

জাতীয় পাখি দোয়েল কি বিলুপ্তির পথে?

নিয়ামুর রশিদ শিহাব

Advertisement

বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল কি বিলুপ্তির পথে? দুই টাকার কাগজের নোটে থাকলেও সচরাচর দেখা যায় না এ পাখি। গ্রাম-গঞ্জ, মাঠ-ঘাট, বন-জঙ্গল, গাছ-লতায় নানা ধরনের পাখি দেখা গেলেও চিরচেনা সেই পাখির সংখ্যা খুবই কম। বনাঞ্চলের পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার, পাখির বিচরণক্ষেত্র নষ্ট ও খাদ্য সংকট এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্ত হতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

দোয়েল প্যাসেরিফরম (চড়ুই-প্রতিম) বর্গের অন্তর্গত একটি পাখি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Copsychus saularis। এ পাখির বাংলা নামটির সঙ্গে ফরাসি ও ওলন্দাজ নামের মিল আছে। ফরাসি ভাষায় একে বলা হয় Shama dayal এবং ওলন্দাজ ভাষায় একে বলা হয় Dayallijster। পাখিটির জগৎ Animalia, পর্ব কর্ডাটা, শ্রেণি পক্ষী, বর্গ Passeriformes, পরিবার Muscicapidae, গণ Copsychus, প্রজাতি C. saularis।

আরও পড়ুন: পরিযায়ী পাখির সমাগমে মুখর ‘চাতল বিল’

Advertisement

পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার রতনদী গ্রামের কয়েকজন প্রবীণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছর আগেও একমাত্র পাখির ডাকেই মানুষের ঘুম ভাঙতো। দোয়েল, টিয়া, ময়না, কোকিল, শালিক, চড়ুইসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখি গ্রামাঞ্চলের বিলে-ঝিলে, ঝোপ-ঝাড়ে, গাছের ডালে, বাগানে কিংবা বাড়ির আঙিনার গাছের ডালে বসে থাকতো। পাখির সুরের ধ্বনিতে মুগ্ধ করতো সবাইকে।

এ পাখির কিচির-মিচির ও শিষের শব্দ এখনো যেন তাদের কানে বাজে। সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাঁশ গাছে, আমের ডালে, সজিনা গাছে, বাড়ির ছাদে যে পাখিগুলো প্রায় সময়ই দেখা যেত, সেই পাখি এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। তবে কম সংখ্যক টিয়া, ঘুঘু, বক, কাক, মাছরাঙা, ইত্যাদি পাখি শহর, গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল মানুষের চোখে পড়ে না।

আরও পড়ুন: চোখ জুড়িয়ে যায় শিমুল ফুলে

পাখিপ্রেমীরা জানান, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। নির্বিচারে পাখি শিকার হচ্ছে। বন উজাড় করে গাছ কাটার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এতে পাখির বিচরণ কমে যাচ্ছে। তা ছাড়াও ফসলে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলেও পাখির বিচরণক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। এতেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এখনই পরিবেশ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পাখি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

Advertisement

সচেতন মহল মনে করছে, কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণসহ বন ও পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তা না হলে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখির দেখা আর মিলবে না। তাই দোয়েলসহ অন্য জাতের পাখি সংরক্ষণের জন্য সামাজিক বনায়ন সৃষ্টি করার সঙ্গে সঙ্গে পাখি শিকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।

এসইউ/জেআইএম