ধর্ম

রমজানে রঙিন ফানুস নিয়ে রাস্তায় নামে কসোভোর মুসলমানরা

মহিমান্বিত মাস রমজান। এ মাসকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী রয়েছে নানা অনুষ্ঠান আর রীতি-রেওয়াজ। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় বাহারি ইফতার, ইফতারের পর তারাবিহের নামাজ পড়া ইত্যাদি ছাড়াও আনন্দ-উৎসব করার মাধ্যমেও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় রমজানের খুশির আমেজ। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চেয়েও এসব রীতি সাংস্কৃতিক উদযাপন হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। ইউরোপের বলকান অঞ্চলের দেশ কসোভো। পৃথিবীর মানচিত্রে সর্বশেষ স্বাধীন হওয়া মুসলিম রাষ্ট্র এটি। সেখানেও পালিত হয় রোজা ও রমজান। কিন্তু কীভাবে?

Advertisement

রোজা ও ঈদে চাঁদ দেখায় জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনুসরণ

রমজানের চাঁদ ও ঈদের চাঁদের ব্যাপারে কসোভোর মুসলিমরা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনুসরণ করে। সঙ্গে সঙ্গে তুরস্ক ও ইউরোপীয় ফতোয়া ও গবেষণা বোর্ডের পরামর্শ গ্রহণ করে। রমজানের আগমনে কসোভোর মুসলিমরা আনন্দে মেতে ওঠে। রঙিন ফানুস নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। ছোট-বড় সবাই পরস্পরকে অভিনন্দন জানায়।

বিশ্ব মানচিত্রে কসোভো

Advertisement

কসোভো যুদ্ধের পর সেখানে ১৩৮৯ সালে ইসলামের আগমন ঘটে। এরপর থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত তা অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে বহু ত্যাগ ও সংগ্রাম করতে হয়েছে এখানকার স্থানীয় মুসলমানদের। অবশেষে লাখ লাখ মুসলিমের রক্তের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে এ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র।

কসোভোর মুসলিম জনসংখ্যা

২০০৮ সালে সার্বিয়া থেকে স্বাধীন হওয়া কসোভোর আয়তন ১০ হাজার ৮৮৭ বর্গকিলোমিটার। রাজধানী প্রিস্টিনা। প্রধান ভাষা আলবেনীয় ও সার্বীয়। কসোভোর জনসংখ্যা ১৯ লাখ ৭ হাজার ৫৯২ জন। যার মধ্যে মুসলমান রয়েছে ৯৫.৬ শতাংশ, রোমান ক্যাথলিক ২.২, অর্থোডক্স ১.৫ ও অন্যান্য ধর্মের মানুষ রয়েছে ১ শতাংশেরও কম।

কসোভোয় ধর্মীয় কার্যক্রম

Advertisement

বিগত ৭০ বছর ধরে কসোভোর উগ্র শাসকরা ইসলামি শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সব ধরনের ধর্মীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। সার্ব বাহিনীর সৈন্যরা ধ্বংস করে দিয়েছিল প্রায় দুই শতাধিক মসজিদ। এখন সেখানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন মসজিদ-মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। আবার শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে দেওয়া হয়েছে মাদ্রাসায়ে আলাউদ্দিন নামে একটি প্রাচীন ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। নতুন করে খোলা হয়েছে একটি বিশেষায়িত ইসলামিক কলেজ। কসোভোর প্রতিটি জেলায় নির্মাণ করা হয়েছে একটি করে ইসলামিক সেন্টার ও পাঁচটি ধর্মীয় স্কুল। যেখানে শিক্ষার্থীদের ইসলাম ও আরবি ভাষা-সাহিত্য শেখানো হয়।

রমজানে কুনুতে নাজেলা পাঠ

রমজান শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগ থেকে তারা মসজিদগুলোকে মুসল্লিদের জন্য প্রস্তুত করে। স্বাধীনতার পর থেকে কসোভোর মুসলিমরা রমজান মাসে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে সম্মিলিত দোয়ার আয়োজন করে। প্রতিটি মসজিদে বিতর ও ফজরের নামাজে ‘কুনুতে নাজেলা’ পড়া হয়।

ইসলামি দরস

কসোভোর মুসলিমরা রমজানে কোরআন তেলাওয়াত, তাহাজ্জুদ, অধিক পরিমাণে সালাতুত তাসবিহ ও ধর্মীয় জ্ঞান আহরণ করে কাটাতে পছন্দ করে। জোহরের পর মসজিদে মসজিদে ইসলামি বিশ্বাস ও বিধিবিধানের দরস হয়। আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত হয় কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়ার অনুষ্ঠান। রমজানের এসব দরসে সাধারণ মুসলিমরা এতে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করে।

পরিবারের সঙ্গে রমজান

কসোভোর মুসলিমরা রমজান মাসটি পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পছন্দ করে। ইফতার ও সেহরি অবশ্যই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে করে। এশার নামাজের পর পরিবারের সব সদস্য একত্র হয়ে খোশগল্পে মত্ত হয়। এ সময় পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য তাদের পরিবারের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংগ্রামের কথা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরেন।

ইফতারে থাকে বাহারি ফলের জুস

পারিবারিক ইফতার বৈঠকে হরেক রকম ফলের জুস পরিবেশন করা হয়। সবচেয়ে বেশি পরিবেশন করা হয় আপেলের জুস। কখনও কখনও ইফতার পরবর্তী এ আড্ডা সেহরি পর্যন্তও দীর্ঘায়িত হয়। ইফতারের সময় হলে তারা ফলের জুস বা পানীয় ও খেজুর দ্বারা ইফতার করে। তারপর মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরে আবার ইফতারে শরিক হয়।

ইফতারে জনপ্রিয় খাবার বুরিক

ইফতারে কসোভোবাসীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো ‘বুরিক’। যা গরুর মাংসের কিমা দিয়ে তৈরি এক ধরনের বিশেষ খাবার।

এমএমএস/এএসএম