ধর্ম

যেসব উৎসবে ইন্দোনেশিয়ায় রমজান উদযাপিত হয়

মহিমান্বিত মাস রমজান। ইন্দোনেশিয়ায় এ মাসকে ঘিরে নানা অনুষ্ঠান আর রীতির রেওয়াজ আছে। রোজা রাখা, ইফতারের পর তারাবির নামাজ পড়া ইত্যাদি ছাড়াও আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমেও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় খুশির আমেজ। ধর্মীয় আচার–অনুষ্ঠানের চেয়েও এসব রীতি সাংস্কৃতিক উদযাপন হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। মুসলিম দেশ হিসেবে অন্যতম ইন্দোনেশিয়া। ইন্দোনেশিয়ার রীতি, সংস্কৃতি ও উৎসবগুলো কী?

Advertisement

ড্রাম বাজিয়ে রমজান বরণবিশ্বের সবচেয়ে পুরনো দেশ ইন্দোনেশিয়া। তিনশ’র বেশি জাতি-গোত্র আর সাড়ে সাতশ’র মতো ভাষা রয়েছে দেশটিতে। এখানে রয়েছে ব্যাপক সাংস্কৃতিক ভিন্নতা। আরবীয়, ভারতীয়, চীনা, মালয় ও ইউরোপীয় সংস্কৃতির মিশেল রয়েছে জীবনাচরণে। ১৭ হাজার ৫০৮টি দ্বীপের সমষ্টি দেশটির জনসংখ্যা ২৫ কোটি ৫৪ লাখ। জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান। মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। সেই ইন্দোনেশিয়ায় রমজান মাস শুরু হয় উৎসবের মধ্য দিয়ে। রহমতের মাসের চাঁদ ওঠার সংবাদ প্রচার হওয়ার পর তাদের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদের পাশে কোনো খোলা জায়গায় বিশাল ড্রাম বাজিয়ে সবাই পরস্পরকে অভিনন্দন জানায়।

‘দুগদেরান’ নামক উৎসবস্থানীয় ঐতিহ্যের পাশাপাশি ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতেও দেখা যায় বৈচিত্র্য। এ কারণেই এ দেশে পবিত্র রমজান উদযাপনে পার্থক্য দেখা যায়। ইন্দোনেশিয়ার মধ্য জাভার সেমারাং শহরের বাসিন্দারা হাজার বছর ধরে ‘দুগদেরান’ নামের এক উৎসব পালন করে থাকেন। রমজান মাস শুরুর সংকেত হিসেবে প্রতি বছরই দেশটির মসজিদগুলোতে ঢাক পেটানো হয়। ‘দুগ’ শব্দটি এসেছে মসজিদের ওই ঢাকের শব্দ থেকে। এর পাশাপাশি মসজিদের কামান থেকে গোলাবারুদ ছোঁড়া হয়। ‘দার’ শব্দটি এসেছে কামানের ওই আওয়াজ থেকে। সাধারণত রমজান শুরুর দুই সপ্তাহ আগে থেকে সেমারাং শহরের বাসিন্দারা এ উৎসব পালন করে থাকেন। উৎসবে বাসিন্দারা রং-বেরঙের পোশাক পরেন, শোভাযাত্রায় অংশ নেন। ‘মিউগান ‘ উৎসবপশু জবাই করার মধ্য দিয়ে পালিত হয় ‘মিউগানা’ উৎসব। এর আরেকটি নাম ‘মাকমিউগানা’। রমজান শুরুর দিন দুই/এক দিন আগে পালন করা হয় এই রীতি। রমজান মাস শুরুর একদিন আগে সুদানিসির নৃগোষ্ঠী এ উৎসব পালন করে থাকে ‘মুংগাহান’। ‘মুংগাহান’র উৎপত্তি ‘উনগাহ’ শব্দ থেকে। যার অর্থ সামনের দিকে এগিয়ে চলা। রোজাদার যেন আগের বারের চেয়ে আরও বেশি সংযমের সঙ্গে এবারের রোজা পালন করতে পারে, এ উদ্দেশ্যেই ‘মুংগাহান’ উৎসব পালন করা হয়। বিভিন্নভাবে ‘মুংগাহান’ পালন করা হয়। যেমন—পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাওয়া, প্রতিবেশিদের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত করা। অর্থাৎ এমন কিছু করা, যেখানে পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়।

গোসল করে ও সাঁতার কেটে ‘পাদুসান’ উৎসবইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে ‘শরীর ও মনকে পরিশুদ্ধ’ করার একটি রীতি প্রচলিত আছে। আর তা করা হয় নদী, পুকুর বা সমুদ্রে গোসল করার মাধ্যমে। ইসলাম ধর্মে ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়’। এই বিশ্বাস থেকেই ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দারা এ উৎসব পালন করে থাকেন। ক্লাটেন, বোয়োলাটি, সালাতিগা ও ইয়োগিয়াকার্তার বাসিন্দারা ‘পাদুসান’ নামে এ উৎসব পালন করে। রমজান শুরুর আগে এসব অঞ্চলের বাসিন্দারা নদী অথবা পুকুরে গোসল করে ও সাঁতার কেটে ‘পাদুসান’ পালন করেন।

Advertisement

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আচারের সংমিশ্রণে ‘পাদুসান’ইন্দোনেশিয়ায় মুসলমানরা রমজান মাস আসার আগেই নিজেদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা সম্পন্ন করে থাকে। এর সঙ্গে নিজেদের বাসস্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা তো আছেই। মধ্য ও পূর্ব জাভার অনেক অঞ্চলেই ‘পাদুসান’ নামক শুদ্ধি সংস্কৃতির প্রচলন রয়েছে। (জাভানিজ ভাষায় এর অর্থ ‘স্নান করা’। এই সামাজিক আচারে জাভানিজ মুসলমানরা নিজেদের ঝরনার প্রবাহিত ধারায় পা থেকে মাথা পর্যন্ত নিমজ্জিত করে। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আচারের সংমিশ্রণে পাদুসানের উৎপত্তি। ইন্দোনেশিয়ায় ঝরনার রয়েছে গভীর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব। এটি পবিত্র মাসের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। অলি সংঘ নামের কয়েক দরবেশের মাধ্যমে এই আচার প্রসার লাভ করেছে। তারা ছিলেন এই অঞ্চলে ইসলামের প্রথম বাহক ও প্রচারক।

কলাপাতায় খাবার স্থানীয় ধর্মীয় নেতা ও বুজুর্গরা পবিত্র ঝরনা নির্ধারণ করে দিতেন এবং অন্যরা সেখানে গিয়ে নিজেদের বিশুদ্ধ করে নিতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই সুইমিংপুল, নিকটস্থ পুকুর বা বাড়িতেই নিজেদের পবিত্র করে নেন। এর উদ্দেশ্য হলো, রমজানে রোজা শুরুর আগেই শরীর ও মনকে শুদ্ধ ও পবিত্র করে তোলা। স্থানীয়রা সারাং পরে সম্মিলিতভাবে শোভাযাত্রা করে নিকটস্থ নদী, ঝরনা বা সমুদ্রে যান। এ সময় তাদের হাতে থাকে খাদ্যপূর্ণ ঝুড়ি। তারা বিশ্বাস করেন, ঝরনার পানি আসে ধরিত্রী মাতার উদর থেকে। তাই এ পানি খুব পবিত্র। তারা মুখে ও বাহুতে পানি ছিটিয়ে নিজেদের পরিষ্কার করে গোসল সম্পন্ন করেন। এরপর যোগ দেন সম্মিলিত প্রার্থনায়। প্রার্থনা শেষে বয়ে আনা খাবার কলাপাতার ওপরে সাজানো হয়। এরপর সবাই মিলে খাবার গ্রহণ করেন।

সেহরি ও ইফতারে ‘আবহাম’ ও ‘কোলাক’ইন্দোনেশিয়ায় ইফতারকে বলা হয় ‘বুকা’। যার অর্থ—শুরু করা। ইফতার আয়োজনে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো—‘আবহাম’ নামের পানীয় এবং খেজুর। খেজুরের সঙ্গে ‘কোলাক’ নামে এক প্রকার মিষ্টান্নও পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া তারা রাতের খাবারে ভাত, সবজি, মুরগি ও গরুর গোশত খেতে পছন্দ করে। তবে সেহরিতে খাবার খায় খুবই সামান্য।

রমজানের শুরুতে ‘আপেম’ উৎসবরমজানের শুরুতে সুরাবায়া শহরে ‘আপেম’ নামীয় একটি খাবার না হলে তাদের চলেই না। বলতে পারেন, রমজানে তাদের প্রতিদিনকার খাবার এটি। তবে খাবারের চেয়ে এর উদ্দেশ্য বেশি চমৎকার। ধারণা করা হয়, ‘আপেম’-এর উদ্ভব আরবি ‘আফওয়ান’ শব্দ থেকে। যার অর্থ ‘দুঃখিত’। খাবারটিকে ‘ক্ষমা’র প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। তাই পরিবার-পরিজন সবাই একসঙ্গে ‘আপেম’ খাওয়ার পর একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আগের সব ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চান। ‘আপেম’ দেখতে চিতই পিঠার মতো। নারকেল ও চালের গুড়া দিয়ে এই স্ন্যাকসটি তৈরি করা হয়।

Advertisement

রাজধানী জাকার্তায় ‘নিওরোজ’ উৎসবইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় ‘নিওরোজ’ নামের উৎসবটি পালন করা হয়। ‘নিওরোজ’ শব্দের অর্থ পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করা। তাই রমজানের আগে বাবা-মা, দাদা-দাদি, শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ অন্যান্য স্বজনদের বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পাঠানোর মাধ্যমে ‘নিওরোজ’ পালিত হয়। সাধারণত এই খাদ্যদ্রব্যের তালিকায় থাকে গোশত, কফি, দুধ, চিনি, মিষ্টি রসসহ অন্যান্য পণ্য। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে রমজান মাসের শুরুতে এ উৎসব পালন করা হয়।

নারীর তারাবিহের জামাতে অংশগ্রহণইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরা যথেষ্ট ধর্মপরায়ণ। তারা ধর্মীয় জীবনযাপন এবং সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষাদানের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। রমজানে তাদের ধর্মীয় এই স্পৃহা আরও বৃদ্ধি পায়। পুরুষের মতো নারীরাও মসজিদে তারাবির জামাতে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়।

রাতব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত উৎসবপবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে পুরো বিশ্বের মুসলিমরা রমজান মাস উদযাপন করে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার বন্টেন প্রদেশে রমজানে কোরআন পাঠের সংস্কৃতি আরেকটি ভিন্নতর। এ প্রদেশের মুসলিমরা নিজেদের প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসরণ করে তারাবির পর থেকে সেহরি পর্যন্ত অবিরত কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকে। ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের পশ্চিমাঞ্চলীয় অধিকাংশ প্রদেশে ‘মিকরান’ নামের কোরআন পাঠের এ ঐতিহ্য অদ্যাবধি চালু আছে।

সেহরির সময়ে কোরআন তেলাওয়াতের সমাপ্তিপবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের এ ঐতিহ্য বন্টেন সালতানাতের প্রাদেশিক রাজধানী সেরাংয়ে প্রথমে শুরু হয়েছিল বলে মনে করা হয়। জাভার ইসলাম প্রচারক সুনান গুনঞ্জতি ষষ্ঠদশ শতাব্দিতে শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন। ধারণা করা হয়, ‘মিকরান’ শব্দটি আরবি ভাষার একটি শব্দ। মহানবী (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ পবিত্র কোরআনের প্রথম শব্দ ছিল ‘ইকরা’ তথা পড়ো। বন্টেন সালতানাতের দ্বিতীয় শাসক সুলতান মাওলানা হাসানুদ্দিনের বংশধর আহমদ ফয়সাল আব্বাস এক বিবৃতিতে জানান, ‘প্রাচীনকালে মসজিদে শব্দ করে কোরআন তেলাওয়াত করে সেহরির সময়ের সমাপ্তি অনুমান করা হতো।’

তেলাওয়াতে অংশগ্রহণে আগ্রহী তরুণদের পরীক্ষা-নিরীক্ষাষষ্ঠদশ শতাব্দির ওয়াকফকৃত মসজিদের দুই হেক্টর ভূমির পরিদর্শক হিসেবে আব্বাসের পরিবারের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। মসজিদের ব্যবস্থাপনা পরিষদ ‘মিকরান’ তেলাওয়াতে অংশগ্রহণে আগ্রহী তরুণদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। রমজানে রাতব্যাপী কোরআন তেলাওয়াতের ঐতিহ্য ঠিক কখন থেকে শুরু হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে মসজিদে প্রোগ্রাম পরিচালনাকারী আব্বাস ও তাঁর ভাই টুবাগাস জানান, ‘বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে মিকরানের ঐতিহ্য চলে আসছে।’

কোরআন তেলাওয়াতেও লাউড স্পিকার ব্যবহাররমজানের পুরো রাতে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য সব মসজিদে ৮ থেকে ১৬ জনকে নির্বাচন করা হয়। সুন্দর কণ্ঠে তেলাওয়াতের মাধ্যমে সবার সামনে নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতা তুলে ধরার অবরিত সুযোগ পায় তরুণরা। বন্টেন প্রদেশের ধর্ম বিভাগীয় প্রধান লুকমানুল হাকিম বলেন, ‘আধুনিক যুগে মসজিদে যখন মাইক্রোফোনের ব্যবহার শুরু হয়, তখন থেকে কোরআন তেলাওয়াতেও লাউড স্পিকার ব্যবহার করা হতো। যাতে আশপাশের সবাই তেলাওয়াত শুনতে পান।’ ‘মিকরান’ পদ্ধতিতে তেলাওয়াতের ঐতিহ্য স্থানীয় সব মুসলিমের মধ্যে রমজান মাসে পুরো কোরআন পাঠের অনুপ্রেরণা তৈরি করে। এমনকি অনেকে পুরো মাসে তিন বা চার বার কোরআন পড়ার সুযোগ পান।

তের নম্বর মাসের বোনাসরমজান মাসে ইবাদত, বন্দেগি ও কল্যাণমূলক কাজে ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদের প্রতিযোগিতা চোখে পড়ার মতো। বড় বড় শহরে বসবাসকারী মুসলিমরা প্রায়শই রমজান মাসে, বিশেষ করে শেষের দিকে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যায়। রমজান মাস শেষে শ্রমিকদের দেওয়া হয় এক মাসের বেতনের সমান বিশেষ বোনাসের টাকা। ইন্দোনেশীয়রা একে ‘তের নম্বর মাসের’ বোনাস বলে থাকেন। ধনী থেকে মধ্যবিত্ত অনেকেই এ মাসে জাকাতের পাশাপাশি বাড়তি দান-খয়রাতের হাত বাড়িয়ে দেন। সেহরি ও ইফতার আয়োজনবিশ্বের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মতো ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে আশ্রিত মুসলিম অভিবাসীরাও রোজা রাখেন। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কুয়ালালাঙসা শহরের এই শরণার্থী শিবিরে বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের শতাধিক নাগরিককে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার পক্ষ থেকে এসব মানুষের জন্য ইফতার ও সেহরির আয়োজন করা হয়।

‘লেবারান’ উৎসবে আত্মীয় ও বন্ধুর কাছে ক্ষমা চাওয়াইন্দোনেশীয়রা ঈদুল ফিতরকে ‘লেবারান’ বলে থাকে। রমজান মাসের শেষ দিনে সন্ধ্যা মেলানো মাত্র ঢোল বাজানো, নাচ, গান, নামাজ আর বয়ানের ভেতর দিয়ে উৎসব শুরু হয়ে যায়। বহু ইন্দোনেশীয় ঈদের নামাজের পর ঘরে ফেরার পথে পড়শি বা বন্ধুদের বাড়ি বেড়াতে যায়। প্রায়ই সংক্ষিপ্ত এসব সফরে তাদের বিরুদ্ধে অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপার জড়িত থাকে। সত্যিই আগের বছর আহত বা কষ্ট দেওয়া হয়েছিল, এমন আত্মীয় ও বন্ধুর কাছে ক্ষমা চাওয়া এ ছুটির দিনের বৈশিষ্ট্য। ইন্দোনেশিয়ায় প্রচলিত লেবারান সম্ভাষণ হচ্ছে ‘সালামাত ঈদুল ফিতরি লাহির বাতিন’। যার অর্থ হচ্ছে ‘শুভ ঈদুল ফিতর, আমাদের সব পাপের জন্য ক্ষমা করো।’ ঈদের দিন বেশির ভাগ ইন্দোনেশীয় বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে দিন শুরু করে, তারপর বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করে।

‘জালুর পাসু’ ও ‘বালিমা কাসাই’ উৎসবরিয়াও প্রদেশে ঈদ উৎসব পালন করা হয় একটু ভিন্নভাবে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে প্রদেশের বাসিন্দারা ঐতিহ্যবাহী নৌকাগুলো নিয়ে নৌকা বাইচের আয়োজন করে। যা ‘জালুর পাসু’ নামে পরিচিত। এ নৌকা বাইচের সময় শত শত মানুষ নদীর দু'পাড়ে ভীড় জমায়। তবে উৎসবটি নৌকা বাইচ দিয়ে শুরু হলেও শেষ হয় ‘বালিমা কাসাই’ দিয়ে; অর্থাৎ নদীতে গোসল শরীর ও মনকে পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে। অনেকেই বলেন, এই গোসলের মধ্য দিয়ে তারা আত্মাকে পবিত্র করে নেয়। যেন পরের দিনগুলোতে আরও ভালোভাবে চলতে পারে।

এমএমএস/জিকেএস