জাগো জবস

সফলতা পেতে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় প্রয়োজন

অমিত সরদারের পড়াশোনার হাতেখড়ি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার মহেশ্বরকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বুধহাটা বিবিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং আশাশুনি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। স্নাতকের পর ভারত সরকারের ‘সার্ক সিলভার জুবিলি স্কলারশিপ’ নিয়ে নয়া দিল্লির সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে বায়োটেকনোলজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

Advertisement

বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। তার শিক্ষকতার গল্প, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও তরুণদের প্রতি পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: শিক্ষকতা পেশায় আসার গল্প শুনতে চাই—অমিত সরদার: শিক্ষকতা নিঃসন্দেহে একটি মহৎ পেশা। ছোটবেলা থেকে শিক্ষকতা পেশা আমার ভীষণ প্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর আরও একটি বিষয় আমার ভালো লাগতে শুরু করে, সেটি হলো গবেষণা। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম একজন গবেষক হওয়ায় অথবা একজন শিক্ষক হওয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু জ্ঞান বিতরণ নয়, পাশাপাশি জ্ঞান সৃজন করা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে এ দুটি স্বপ্নই পূরণ করা সম্ভব। সেই জায়গা থেকেই মূলত শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহ জন্মে।

আরও পড়ুন: শেখ রিয়াজের বিসিএস জয়ের গল্প

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনার কর্মজীবনের গল্প শুনতে চাই, কেমন উপভোগ করছেন?অমিত সরদার: শিক্ষকতা এমন একটি পেশা, যেখানে পাঠদানের পাশাপাশি গবেষণায় অবদান রাখা যায়। আগেই বলেছি, গবেষণা আমার খুবই প্রিয়। আমি সব সময়ই নতুন নতুন বিষয় জানতে ও শিখতে পছন্দ করি। শিক্ষকতা পেশায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি আমিও অনেক বিষয় শিখতে পারি। একঝাঁক মেধাবী শিক্ষার্থীর সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান বা জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগকে আমি ভীষণ উপভোগ করি। সব মিলিয়ে আমার কর্মজীবন আমি দারুণ উপভোগ করছি।

জাগো নিউজ: এতদূর আসার পেছনে কার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেতেন?অমিত সরদার: এতদূর আসার পেছনে যে দুটি মানুষ নিরন্তর আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, তারা হলেনআমার বাবা ও মা। পাশাপাশি আমার দাদা উজ্জ্বল সরদার, কাকা সহদেব দাশ এবং ভূষণ দাশ আমাকে সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন। স্কুলশিক্ষক তাপস বসাক স্যারের অবদান অনস্বীকার্য। যিনি সব সময়ই আমার পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। আমার দাদু সন্তোষ দাশ, সুনীল মন্ডল এবং পুলিন মন্ডল সব সময়ই আমাকে সাহস জুগিয়েছেন।

কিন্তু ভালো জায়গায় আসাটাই তো শেষ কথা নয়। ভালো জায়গায় গেলে দায়িত্বটাও বেড়ে যায়। সামনে এখনো অনেক কিছু করার আছে। সেই এগিয়ে চলার পথপরিক্রমায় আমার সহধর্মিণীর কাছ থেকে যে অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছি, সেটি অতুলনীয়। আমার পরিবার-পরিজন, শিক্ষকমণ্ডলী, আত্মীয়-স্বজন এবং শুভাকাঙ্ক্ষী যাদের অকৃত্রিম ভালোবাসায়, সহযোগিতায় এবং অনুপ্রেরণায় এতদূর আসতে পারা; তাদের প্রত্যেকের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

আরও পড়ুন: মারিয়ার মাসে আয় ৩০ হাজার টাকা

Advertisement

জাগো নিউজ: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা পিছিয়ে কেন বা কী কী ঘাটতি আছে?অমিত সরদার: আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পিছিয়ে থাকার নানাবিধ কারণ আছে। আমরা এখনো পর্যন্ত মুখস্থ-নির্ভর পড়াশোনা থেকে বের হতে পারিনি। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী নয়। পাশাপাশি অবকাঠামোগত এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতারও অভাব আছে। সর্বোপরি গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধারও অভাব আছে।

জাগো নিউজ: এ বিষয়ে উন্নতি করতে হলে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত?অমিত সরদার: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন মুখস্থ-নির্ভর পড়াশোনাকে নিরুৎসাহিত করে শিক্ষণ-শিখন বা টিচিং-লার্নিং পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা। পাঠ্যক্রমগুলোকে ঢেলে সাজিয়ে যুগোপযোগী করে তুলতে হবে। শিক্ষকদের প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ল্যাবরেটরিগুলোয় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য মানসম্মত গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। উন্নত দেশগুলো এগিয়ে যাওয়ার একটি বড় কারণ হলো, তারা গবেষণাকে সব সময়ই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এ কারণে গবেষণা খাতে বাজেট বৃদ্ধিসহ শিক্ষার সামগ্রিক বাজেট বৃদ্ধি করা উচিত।

জাগো নিউজ: একজন শিক্ষার্থীর সফলতা লাভের জন্য কোন কোন বিষয় অনুসরণ করা উচিত?অমিত সরদার: সফলতা লাভের আসলে কোনো শর্টকাট বা সংক্ষিপ্ত পথ নেই। সফলতা লাভের জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়। বর্তমানে সফলতা লাভের জন্য শিক্ষার্থীদের অবশ্যই দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। তথ্য ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এ ছাড়াও পড়াশোনার পাশাপাশি কো-কারিকুলার বা সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যাবলিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করা উচিত। সময়ের সঠিক সদ্ব্যবহার, ধৈর্য, পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে কাঙ্ক্ষিত সফলতা।

আরও পড়ুন: ২ হাজার টাকার মূলধনে লাখোপতি কথা

জাগো নিউজ: একজন শিক্ষক হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?অমিত সরদার: যদি নিজের কথা বলি, তাহলে শিক্ষকতায় উৎকর্ষ অর্জনের পাশাপাশি নিজেকেএকজন দক্ষ গবেষক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। পাশাপাশি আমার শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কিছু ভালো মানের গবেষক তৈরি করার স্বপ্ন দেখি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার জন্য এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে চাই। উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রয়াসে একজন গর্বিত অংশীদার হতে চাই।

এসইউ/এএসএম