সাহিত্য

হাবিবুর রহমানের তিনটি কবিতা

কদম ফুল

Advertisement

হাসনাহেনা ফোটে কেবল রাতেগোলাপ ছিঁড়তে কাঁটা বিঁধে হাতে।শিয়াল কাঁটার ফুলটা ভীষণ ভালোতুলতে তো সেই কাঁটাই কাল হলো।

দোলনচাঁপা দুঃখ পুষে রাখেশিমুল গাছে ভূতেরা সব থাকেতখন থেকে ফুলের প্রতি ভয়ফুলগুলো সব কেমন যেন হয়।

ঘাসফুলেদের সুবাস পাই না মোটেসোনালুটা দেখতে ভালো বটে।কাঠগোলাপে ভীষণ মাথা ধরেকৃষ্ণচূড়া রক্ত হয়ে ঝরে।

Advertisement

টবে তোমার লজ্জাবতী ফোটেআমার বুকে দখিন হাওয়া ছোটে।কুসুম চিনতে হয় না এখন ভুলজুঁই-কামিনী সত্যি ভালো ফুল।

তখন থেকে ফুলের সাথে ভাবগন্ধরাজটা সত্যি লা-জবাব।বর্ষাকালে ঝিলের ভীষণ সুখলাল শালুকে রঙিন সারা বুক।

তুমি হঠাৎ কদম নিয়ে হাতেমিষ্টি হেসে যাচ্ছ অচিন পথে।ফুলটা ভালো, ভীষণ সাদাসিধেনেই কাঁটা তাও কাঁটার মতো বিঁধে।

সেদিন থেকে প্রিয় কদম ফুলআমিও এখন কদমে মশগুল।

Advertisement

****

মড়ক

মস্তিষ্কে শুকনো পাতার খেলা।পায়ের তলায় পুরোনো রক্তের ছাপ।চোখের সামনে লাশ কাটা ঘর।ছুটে আসছে গাড়ি ওপাশে শ্মশান-কবর।

শুনতে পাচ্ছো?তোমার মারণাস্ত্র কাজে আসছে না।সীমান্তের কাঁটাতার তোমার ঘরের দেওয়াল,এঘরে তুমি আর ওঘরে তোমার প্রিয়জন।তোমার কি ভয় হচ্ছে, বলো ভয় হচ্ছে?

একটি কফিন তোমার অপেক্ষায়।একটি কবর তোমার অপেক্ষায়।খানিক বাদেই আসবে লাশবাহী গাড়ি।কার বুকে ঠেকাবে মেশিনগান?কার বুকে চালাবে গুলি?

যে তোমাকে বাঁচাতে পারতোসে মরছে তোমারি পাতানো খেলায়।যুদ্ধে অথবা ক্ষুধায়।

তবু একদিন থেমে গেলে মহামারি,থামবে না জানি যুদ্ধের নেশামানুষের আহাজারি।থামবে না জানি ক্ষুধা-দারিদ্র্যথামবে না জানি ভয়।মানব কলমে দানব অতীতসেই মত কথা কয়।

জানি বেঁচে গেলে ভুলে যাবে সবমানবধর্ম এই,পৃথিবীতে আজও মানুষের চেয়ে বড় জানোয়ার নেই।

****

পরিযায়ীর সাধ মেটে না

দেখছি দূরের সুনীল আকাশ দেখছি মেঘের কালোসোনার আলো চিলের ডানায় জগত ঘুরে এলো।এমনি দিনে হঠাৎ প্রাণে বিষাদ-বীণা বাজে,একই রকম আকাশ তবু একলা কেন লাগে?কেন আমি নিজের মাঝে নিজেই ভীষণ পর?কোথায় আমার স্বর্গভূমি সোনাগাজীর চর?

সাগরজলের লোনা ঢেউ ডাকছে ফিরে আয়কেওড়া বনের সবুজ মায়া বিলীন হয়ে যায়।থেকে থেকে ফেনী নদীর ভাঙন ধরে প্রাণেপরিযায়ী জীবন বড় পোড়ায় ক্ষণে ক্ষণে।

এমনি দিনে চিলের মতো গজায় যদি ডানাঅমনি আবার আসবো ফিরে যে পথ চিরচেনা।আসবো ফিরে দখিন চরে পূর্ণিমার একরাতেকাকতাড়ুয়া ভূতের মতো হলুদ সরষে ক্ষেতে।ফিরবো আবার নিজের বাড়ি নিজের বসতঘরকেওড়া বনে শুনতে যাবো অচিন পাখির স্বর।দেখবো আবার দু’চোখজুড়ে বনফুলের দেশরাত-বিরাতে বসবো গিয়ে যেথায় পথের শেষ।চেনা সুরে পথিক বাউল ধরবে প্রাণের গানজেলের জালে রুপোর মতো সুখের বুনো তান।

চেনা পথের চেনা পথিক চেনা লোকালয়যেদিক ফিরি সবই যেন আপন মনে হয়।স্বপ্নগুলোয় নিত্যদিনই গজায় নতুন ডানারাত পোহালেই পরিযায়ীর আঁধার ঘোচে না।শেষ বিকেলে এই অভিলাষ এটুকু সাধ থাকপরিযায়ীর পরান বায়ু বঙ্গেতে ফুরাক।

এসইউ/এমএস