ভ্রমণ

অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণে ঘুরতে ভুলবেন না যেসব স্পট

সুজাতা জয়ধর

Advertisement

অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ অনেকের কাছেই স্বপ্নের! অবশেষে সেই স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ আমরা তিন ভাই-বোন সিডনির উদ্দেশ্যে রওনা হই। আগের দিন গিয়ে মেজদার (মি. ডেভিড অনিল হালদার) বাসায় থাকলাম।

পরের দিন ১০টায় আমরা বের হলাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। আমাদের তিনজনের সঙ্গে ৬টি লাগেজ। আমার মেজদির যথেষ্ট বয়স, প্রায় ৮০ বছর হবে। দিদির হাটুতে ব্যথা, হাটতে একটু কষ্ট, দিদি আমার হাত ধরে হাঁটলে ভরসা পান।

তাই দিদিকে কখনো হাতছাড়া করিনি। মেজদার সঙ্গে গিয়ে আমার নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে, ইমিগ্রেশন পার হয়ে এমটিবির লাউঞ্জে বসে দুপুরের খাবার খেলাম।

Advertisement

বিমান ছাড়লো ২টা বেজে ৩০মিনিটের দিকে। ৪ ঘণ্টা পর আমরা সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। ৪ ঘণ্টা বিরতির পর সেখান থেকে সাড়ে ৮টায় আবার প্লেনে উঠে সিডনির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। অস্ট্রেলিয়ার সময় অনুসারে ১০:৩০ টায় গিয়ে সেখানে পৌঁছালাম।

ভাই (সুশীলদা), মেজ বৌদি ও মেজ ভাইয়ের ছেলে’সহ নাতনি ভেনেসা আমাদেরকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানালো। এই অনুভুতিটা খুব ভালো ছিল। ছোটদার গাড়িতে করে আমরা দুই বোন তার বাসায় চলে এলাম। শুরু হলো আমাদের এক মাসের প্রোগ্রাম অনুসারে চলা। বেড়ানো, বেড়ানো আর বেড়ানো।

পরের দিন ব্লু মাউন্টেইন দেখতে গেলাম, সুন্দর পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। সেখানে মনোরম পরিবেশ বিরাজমান। এর মধ্যে ৩টি পাথরের স্তম্ভ দেখতে পেলাম, এর পেছনে একটি রূপক গল্প আছে।

গল্পটা অনেকটা এরকম, কোনো এক সময় ওই দেশের রাজার সঙ্গে অন্য দেশের রাজার যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের আগে দুই রাজার মধ্যে শর্ত হয়। যদি ওই দেশের রাজা হেরে যায় তাহলে তার তিন মেয়েকে প্রতিপক্ষ রাজার সঙ্গে বিয়ে দেবেন।

Advertisement

ভাগ্যচক্রে রাজা হেরে গেলেন, কিন্তু রাজা তার মেয়েদেরকে যুদ্ধে জিতে যাওয়া রাজার সঙ্গে বিয়ে দিতে সম্মত ছিলেন না। হেরে যাওয়া রাজা কিছুটা যাদুমন্ত্র জানতেন, তিনি তার মেয়েদেরকে জাদু করে পাথর বানিয়ে দিলেন, যাতে রাজার সঙ্গে বিয়ে দিতে না হয়।

এটাই হলো থ্রি সিস্টার্স এর গল্প। এটি হলো একটি রূপক গল্প। এটার অবশ্য অন্য ব্যাখ্যাও থাকতে পারে। আমার ছোট বৌদি ও দাদার সঙ্গে সিডনির বিখ্যাত দর্শনীয় অপেরা হাউস ও হারবার ব্রিজ দেখতে গেলাম।

আরেকদিন রাতে অপেরা হাউস দেখেছি। দিনের সৌন্দর্য একরকম, রাতের সৌর্ন্দয আরেক রকম। এটি সিডনি হারবারের উপকূলে অবস্থিত। এটি বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ও স্বতন্ত্র ভবন।

এটি রানি এলিজাবেথ ১৯৭৩ সালের ২০ অক্টোবর উদ্বোধন করেন। এর ভেতরে কয়েকটি কনসার্ট হল আছে। এটি দুর্দান্ত সৌন্দর্যের প্রতীক, যা সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়।

হারবার ব্রিজের উপরে নিচে দিয়ে আট লেনে গাড়ি চলে। সেতু, বন্দর ও কাছাকাছি সিডনি অপেরা হাউসের দৃশ্যকে ব্যাপকভাবে সিডনি ও অস্ট্রেলিয়ার একটি আইকনিক বা দৃষ্টি নন্দন স্থান বা চিত্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার রাস্তা, বাজার, সর্বত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম, সুন্দর। লোকসংখ্যা খুবই কম। অস্ট্রেলিয়া একটা মহাদেশ, সেখানে লোক সংখ্যা মাত্র ২ কোটি। ২০০ মাইল গাড়িতে যাওয়ার পরও কোনো মানুষকে রাস্তায় দেখা যায় না। এতোটাই নিরিবিলি ওই স্থান।

একদিন মেজ বৌদির সঙ্গে পাবলিক বাসে উঠলাম, কত সুন্দর নিয়ম কানুন। বয়ষ্কদের যাতায়াত, ট্রলি চেয়ার নিয়ে বাসে ওঠা’সহ নানা ধরনের ব্যবস্থা আছে।

কোন স্টপেজে নামবো, তার কাছকাছি আসলে সিটের সামনে বাটন আছে তাতে চাপ দিলে সেই স্টপেজে বাস থামবে। সেখানকার বাসেও লোক অনেক কম, মাত্র ৬-৭ জনের মতো লোক থাকে।

তারপর একদিন সিডনি থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে আমরা ৪ ভাইবোন ও ২ বৌদি মিলে সমুদ্র দেখতে গেলাম। জায়গার নাম পোর্ট ম্যাককুয়ারি। সেখানে হোটেল নর্থ পয়েন্টে দুই রাত, দুই দিন থেকে প্রকৃতিকে উপভোগ করলাম। ওখানকার ফাইভ স্টার হোটেলগুলো আমাদের দেশের হোটলের মতো না।

সেখানে রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে, তবে আসার আগে যে জিনিস যেভাবে ছিল ঠিক সেভাবেই রাখতে হবে। তা না হলে জরিমানা গুনতে হবে। সেখানে সমুদ্রে একদিন আমরা তিমি দেখতে গেলাম। সে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। অনেক বড় বড় তিমি দেখলাম বাচ্চাসহ। শিশু তিমিগুলো কিছু সময় পরপর লাফ দিয়ে উপরে ওঠে। বড়গুলো লাফ দিয়ে উপরে উঠতে পারে না। যে স্পিডবোটে আমরা মাঝ সমুদ্রে তিমি দেখতে গিয়েছিলাম, তিমিগুলো সেই স্পিডবোট থেকেও বড়। আমার ছোট বৌদি তো ভয়ে ফিরে যাবার জন্য চিৎকার করছিল।

পরের দিন আমরা ম্যাককুয়ারি থেকে কফস্ হারবার গেলাম। এটি সিডনি থেকে উত্তরে ৫৪০ কিলোমিটার দূরে। কফস্ হারবারের অর্থনীতি এক সময় কাঠ ও কৃষি নির্ভর ছিল। এক সময় এটি ব্যানানাকোস্ট নামে পরিচিত ছিল। তবে এখন এই পর্যটন শহরটি কফস কোস্ট নামে পরিচিত।

ব্যানানা কোস্টকে দর্শনার্থী সবার কাছে স্মরনিয় করে রাখার জন্য তারা বড় একটি কলা তৈরি করে রেখেছে। প্রতিদিন শত শত লোক তা দেখতে আসে।

আমার মেজ ভাইয়ের বড় ছেলে নায়থান এর ঘর ক্যালালা বিচের পাড়ে। সিডনি শহর থেকে এই সি বিচ ৩০০ কিলোমিটার দূরে। ওর ঘর থেকে বিচ দেখা যায়, অপূর্ব সে দৃশ্য।

দেশে ফেরার কয়েকদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা গেলাম ঘুরতে। আগে থেকে সেখানে হোটেল বুক করা ছিল। রাজধানী শহর ছোট, অনেক পাহাড় আর অনেক কৃত্রিম লেক। সেখানে আছে অনেক ফুলের বাগান।

অস্ট্রেলিয়াতে একমাস থাকাকালীন ৪টি রবিবার পেয়েছিলাম। প্রথম দুই রবিবার আমার ভাই যে চার্চের মেম্বার সেখানে গিয়েছিলাম। সেই চার্চের নাম- ইউনাইটিং চার্চ, সেখানে শুধু বয়স্করা, কোনো যুবক/যুবতি নেই। দাদা জানালেন, ২০ বছর পর হয়তো এ চার্চ বন্ধ হয়ে যাবে।

তৃতীয় রবিবার গেলাম, হিলসং চার্চে। সেখানে সববয়সী মানুষ ছিল। গির্জাটি গ্যালারি সিস্টেমে করা। ৫০০০ মানুষ একসঙ্গে উপসনালয় যোগ দেয়। না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না, এত মানুষ যীশুর আরাধনা/প্রশংসা করার জন্য একত্রিত হয়। রবিবার ওইদেশে সাপ্তাহিক ছুটি।

অতএব গির্জায় আসতে তো অসুবিধা নাই। এক রবিবারে ৬-৭টি বাচ্চা উৎসর্গ করা হয়। ওই চার্চে এত লোক দেখে আমার মনে পড়েছে, যীশুর ৫০০০ লোককে খাওয়ানোর কথা। ওইখানে প্রত্যেকটি চার্চে গির্জার পর চা, কফি, কেক ও বিস্কুটও খেতে দেওয়া হয়।

শেষের রবিবারে আরেকটি ব্যাপ্টিস্ট চার্চে গেলাম, সেখানে খুব সুন্দরভাবে সুশৃঙ্খলভাবে সবকিছু পরিচালিত হয়। প্রত্যেকটি চার্চে ঢোকার সময় সবাইকে স্বাগতম জানানো হয়। সবার মাঝে একটা হৃদতাপূর্ণ ব্যবহার লক্ষ্য করেছি।

জেএমএস/এমএস