ধর্ম

যে ঘরে শয়তান থাকে না

শয়তান মানুষের চিরশত্রু। যে ঘরে বা যে মজলিশে শয়তান প্রবেশ করে সে ঘর ও মজলিশের পরিবেশকে শয়তান সমূলে বিনষ্ট করে দেয়। পরিবারের সদস্যদের মাঝে শত দ্বিধা-বিভক্তি সৃষ্টি করে। ফলে মানুষের ঘর ও পরিবারে সুখ-শান্তি ও স্থিতিশীলতা থাকে না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একটি কোরআনি আমলে ঘরে শয়তান থাকে না। কী সেই আমল?

Advertisement

নিজ নিজ ঘরকে শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাজত করা জরুরি। ইসলামি জীবন-যাপনেই তা সম্ভব। হাদিসের যে আমলে নিজ নিজ ঘরকে শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাজত করা যাবে তাহলো-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

ا تجعلوا بيوتكم مَقَابر، إنَّ الشيطان يَنْفِرُ من البيت الذي تُقْرَأُ فيه سورةُ البقرة

Advertisement

‘তোমরা তোমাদের ঘরসমূহকে কবর বানাবে না। নিশ্চয়ই যে ঘরে সুরা বাকারাহ তেলাওয়াত করা হয় সে ঘর থেকে শয়তান পলায়ন করে।’ (মুসলিম)

হাদিসের ব্যাখ্যা

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু এ মর্মে সংবাদ দেন যে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরসমূহকে কবরস্থান বানাতে নিষেধ করেছেন, যাতে ঘরসমূহ যেন কবরের মতো না হয়, যেখানে নামাজ ও কোরআন পাঠ হয় না। নামাজ না থাকা অবস্থায় ঘরকে কবর বলা হয়েছে। কারণ, কবরে নামাজ আদায় করা বৈধ নয়। তারপর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও সংবাদ দেন, যে ঘরের অধিবাসীরা তাতে সুরা বাকারাহ তেলাওয়াত করে সে ঘর থেকে শয়তান পলায়ন করে। কারণ, এ সুরার তেলাওয়াতের বরকতে এবং তাতে যা রয়েছে সে অনুযায়ী আমল করার কারণে শয়তান তাদের প্রতারণা দেওয়া ও গোমরাহ করা থেকে নিরাশ হয়ে যায়।

হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, কোনো ব্যক্তি যখন নিজ ঘরে ঢুকে এবং প্রবেশ করার পর খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন (তার সহযোগীদের) বলতে থাকে, ‘(এই ঘরে) তোমাদের কোনো থাকার জায়গা নেই। আর এই ঘরে তোমাদের রাতের খাবারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। আর যদি কোনো ব্যক্তি ঘরে ঢুকে এবং প্রবেশের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করে, তখন শয়তান (তার সহযোগীদের) বলে, তোমরা তোমাদের থাকার জায়গা পেয়ে গেছো। আর সে যদি খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ না করে, তখন শয়তান (তার সহযোগীদের) বলে, ‘(এই ঘরে) তোমরা তোমাদের থাকার জায়গা ও রাতের খাবার পেয়ে গেছো।’ (মুসলিম)

Advertisement

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করার সময় দোয়া পড়া। কোনো দোয়া না পড়লে ন্যূনতম-

بِسْمِ الله

‘বিসমিল্লাহ’

পড়ে ঘরে প্রবেশ করা। তাতে শয়তান আর ঘরে ঢুকতেও পারবে না এবং খাবারেও অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘সবকিছুরই একটি চুড়া থাকে আর কোরআনের চুড়া হল সুরা আল-বাকারা। শয়তান যখন সুরা আল-বাকারার তেলাওয়াত শোনে তখন সে ঐ ঘর থেকে বের হয়ে যায়। যেখানে তা তেলওয়াত করা হয়।’ (মুসতাদরেকে হাকেম)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত ঘরে অবস্থানকালীন সময়ে সুরা বাকারা তেলাওয়াত করা। বাহির থেকে ঘরে প্রবেশ করতে মহান আল্লাহর নাম নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা। এতে ইসলামের দিকনির্দেশনা মেনে জীবন-যাপন করা। আর তাতে শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে মুমিন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। নিজ ঘরকে শয়তান থেকে মুক্ত রাখার জন্য হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম