ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০১৫ এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশে দুর্নীতির যে চিত্র উঠে এসেছে তা অত্যন্ত হতাশাজনক। বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশে এখনও দুর্নীতি কমেনি। ২০১৪ সালের ন্যায় সদ্য বিদায়ী ২০১৫ সালেও দুর্নীতির বৈশ্বিক সূচকে একই অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এবছর ১৬৮ দেশের মধ্যে এ দেশের অবস্থান ১৩৯তম। ২০১৪ সালে ১৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৫তম। দুর্নীতির নিম্নমুখী ক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। গত বছর ছিল ১৪তম। এসব সূচক বলছে বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা এখনও উদ্বেগজনক। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয় ভুটানে। একমাত্র আফগানিস্তান ছাড়া এ অঞ্চলের সবগুলো দেশেই বাংলাদেশের তুলনায় কম দুর্নীতি হয়। এছাড়া বিশ্বে সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয় ডেনমার্কে আর বেশি হয় সোমালিয়ায়।টিআইএর রিপোর্টে কিছু পর্যবেক্ষণও উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে-যেসব কারণে আমাদের অগ্রগতি হচ্ছে না, তার মধ্যে রয়েছে, সরকার ও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু দুর্নীতি বিরোধী উদ্যোগ স্বত্ত্বেও প্রয়োগ ও চর্চার ঘাটতির ফলে প্রকটতর হয়েছে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ । দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান দুদকের কার্যকরতা ও স্বাধীনতা খর্ব করার অপপ্রয়াস যেমন অব্যাহত রয়েছে তেমনি দুদকের নিজস্ব সক্রিয়তা, দৃঢ়তা ও নিরপেক্ষতার ঘাটতি রয়েছে চলমান। এছাড়াও সরকারের নীতি কাঠামো দুর্নীতি সহায়ক, দুর্নীতিতে লাভবান ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয়দানকারী মহলের করাভূত হওয়ার ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে।’ টিআইএর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে একথা বলা যাবে না। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী দুর্নীতি কমেনি। এটা খুবই হতাশাজনক। একদিকে উন্নয়ন অগ্রগতি হচ্ছে, কিন্তু দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি সর্বজনবিদিত। এ নিয়ে কোনো জরিপ বা কোনো সংস্থার প্রতিবেদনের প্রয়োজন হয় না। গতকালই রাজধানীতে দুর্নীতি দমন কমিশন ও রাজউক এক গণশুনানির আয়োজন করে। সেখানে ভুক্তভোগীরা রাজউকের দুর্নীতির যে চিত্র তুলে ধরে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। স্বয়ং গণপূর্ত মন্ত্রীও এই দুর্নীতির কথা অস্বীকার করেন নি। এবারের টিআই রিপোর্ট নিয়েও অর্থমন্ত্রী বলেছেন রিপোর্টের সাথে বাস্তবতার মিল আছে। অর্থাৎ দুর্নীতির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন নি। এটি অবশ্যই ইতিবাচক দিক। সমস্যা স্বীকার না করলে তার সমাধান হওয়াটাও কঠিন। এখন শুধু স্বীকার করলেই হবে না, দুর্নীতির শিকড় সমূলে উপড়ে ফেলতে হলে দুর্নীতি বিরোধী সর্বাত্মক একটি কার্যক্রম চালাতে হবে। দুর্নীতিবাজ যতোই শক্তিশালী হোন না কেন তার বা তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সংসদ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরো কার্যকর করতে হবে। সর্বত্র একটি জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারলেই দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। সর্বোপরি দুর্নীতি বিরোধী একটি পরিবেশ সৃষ্টিতেও সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে যার যার অবস্থান থেকে।এইচআর/আরআইপি
Advertisement