কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হবে যে, আল্লাহর কাছে কারো কোনো পাওনা থাকলে দাঁড়িয়ে যাও। তখন একদল লোক দাঁড়াবে; এরা কারা? কী তাদের পরিচয়? কোরআনুল কারিমে এদের সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
Advertisement
অন্যের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দেওয়া অনেক বড় গুণ। আর তা যদি হয় অত্যাচার-নিপীড়নের ক্ষমার বিষয় তবে এর প্রতিদান কী হতে পারে! মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমে মুমিন বান্দার এ গুণ ও এর বিনিময় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণা এভাবে দেন-
وَ الَّذِیۡنَ اِذَا فَعَلُوۡا فَاحِشَۃً اَوۡ ظَلَمُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ ذَکَرُوا اللّٰهَ فَاسۡتَغۡفَرُوۡا لِذُنُوۡبِهِمۡ ۪ وَ مَنۡ یَّغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ اِلَّا اللّٰهُ ۪۟ وَ لَمۡ یُصِرُّوۡا عَلٰی مَا فَعَلُوۡا وَ هُمۡ یَعۡلَمُوۡنَ
আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে বা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবে? এবং তারা যা করে ফেলে, জেনে-বুঝে তারা তা পুনরায় করতে থাকে না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৫)
Advertisement
اُولٰٓئِکَ جَزَآؤُهُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ مِّنۡ رَّبِّهِمۡ وَ جَنّٰتٌ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ وَ نِعۡمَ اَجۡرُ الۡعٰمِلِیۡنَ
এরাই তারা, যাদের প্রতিদান তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফেরাত ও জান্নাতসমূহ যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর আমলকারীদের প্রতিদান কতই না উত্তম!’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৬)
আয়াতের সার-সংক্ষেপ
দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করা বড় গুণ। আখেরাতে এর প্রতিদানও অনেক বড়। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহর তাআলার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হবে যে, আল্লাহর কাছে কারো কোনো পাওনা থাকলে দাঁড়িয়ে যাও। তখন ওইসব লোক ওঠে দাঁড়াবে, যারা দুনিয়াতে অন্যের অত্যাচার-নিপীড়ন ক্ষমা করেছিলো।’
Advertisement
অন্য হাদিসে আরো এসেছে, ‘যে ব্যক্তি জান্নাতে তার সুউচ্চ প্রাসাদ এবং মর্যাদা কামনা করবে; তার উচিত যে অত্যাচার করে, তাকে ক্ষমা করা; যে তাকে কখনো কিছু দেয় না, তাকে বখশিশ-উপঢৌকন দেয় এবং যে তার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে, তার সঙ্গে মেলামেশা করে।’
কোরআনুল কারিমের অন্য এক আয়াতে আরো সুস্পষ্ট ভাষায় অন্যায়কারীদের প্রতি অনুগ্রহ করার মহান চরিত্র শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এর বিনিময়ে শত্রুও মিত্রতে পরিণত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ لَا تَسۡتَوِی الۡحَسَنَۃُ وَ لَا السَّیِّئَۃُ ؕ اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ هِیَ اَحۡسَنُ فَاِذَا الَّذِیۡ بَیۡنَکَ وَ بَیۡنَهٗ عَدَاوَۃٌ کَاَنَّهٗ وَلِیٌّ حَمِیۡمٌ
‘ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। উৎকৃষ্ট দ্বারা মন্দ প্রতিহত করো; তাহলে যাদের সঙ্গে তোমার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত।’ (সুরা ফুসসিলাত : আয়াত ৩৪)
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এমনই উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন চরিত্র শেখানো হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে নবির প্রতি নির্দেশ ছিল এমন-
‘যে আপনার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে, আপনি তার সঙ্গে মেলামেশা রাখুন। যে আপনার প্রতি জুলুম করে, আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন। যে আপনার সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করে, আপনি তার প্রতি অনুগ্রহ করুন।’
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান ও মান অনেক উর্ধ্বে। তাঁর সুমহান শিক্ষার বরকতে আল্লাহ তাআলা তাঁর অনুসারীদের মধ্যেও এ চরিত্র ও গুণাবলী সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। (মারেফুল কোরআন)
ক্ষমার ধরণ
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো এক ব্যক্তি গুনাহ করার পর বললো, হে আল্লাহ! আমি গুনাহ করেছি সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং এটা জেনেছে যে, তার একজন রব আছে যিনি তার গুনাহ মাফ করবে ও তাকে পাকড়াও করবে; আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। তারপর সে আবার আরেকটি গুনাহ করে আবারও বললা, হে রব! আমি গুনাহ করেছি সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং এটা জেনেছে যে, তার একজন রব আছে যিনি তার গুনাহ মাফ করবে ও তাকে পাকড়াও করবে; আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। তারপর সে আবার আরেকটি গুনাহ করে আবারো বলল, হে রব! আমি গুনাহ করেছি সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং এটা জেনেছে যে, তার একজন রব আছে যিনি তার গুনাহ মাফ করবে ও তাকে পাকড়াও করবে; আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম, সে যাই করুক না কেন।’ (বুখারি, মুসলিম)
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাকে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু হাদিস শুনিয়েছে। আর আবু বকর সত্য বলেছে। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘কোনো লোক যদি গুনাহ করে, তারপর পাক-পবিত্র হয় এবং নামাজ আদায় করে, এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। তারপর তিনি উপরোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বললেন, ‘তোমরা দয়া করো, তোমাদেরকেও রহমত করা হবে; তোমরা ক্ষমা করে দাও আল্লাহও তোমাদের ক্ষমা করবেন; যারা কোনো কথা না শোনার জন্য নিজেদের বন্ধ করে নিয়েছে তাদের জন্য ধ্বংস, যারা অন্যায় করার পর জেনে-বুঝে বারবার করে তাদের জন্যও ধ্বংস।’ (মুসনাদে আহমাদ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে নেককার বান্দায় পরিণত হওয়ার তাওফিক দান করুন। কোরআনের এ আয়াতের উপরযথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস