কৃষি ও প্রকৃতি

পঞ্চগড়ে ২০ টাকায় মিলছে ১ মণ শসা

পঞ্চগড়ের উপজেলা সদরের পাথর ঠাকুর এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম। তিনি বিশ কাঠার এক বিঘা জমিতে ৩০ হাজার টাকা খরচে শসা চাষ করেছেন। ভেবেছিলেন রমজান মাসে ফসল উঠলে ভালো দাম পাবেন। কিন্তু হঠাৎ করে বাজারে শসার মূল্য অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় তিনি মাত্র পঞ্চাশ টাকার শসা বিক্রি করতে পেরেছেন। এরপর আর শসা ক্ষেত থেকে তোলেননি। কৃষক রফিকুলের মতো একই অবস্থা চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন এলাকার শসা চাষিদের।

Advertisement

পঞ্চগড়ের বিভিন্ন শসার ক্ষেত থেকে ৫০ পয়সা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে শসা। অর্থাৎ ২০ টাকায় মিলছে এক মণ শসা। এদিকে ঢাকায় ১ কেজি শসার দাম ২০ টাকা। বিভিন্ন ক্ষেতে শসার বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য মূল্য না পেয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।

গত এক মাসের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে শসার দাম কেজি প্রতি ৪০ টাকা মাত্র ৫০ পয়সায় নেমে এসেছে। কয়েক হাত ঘুরে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে। চলতি মৌসুমে শসা চাষে ব্যাপক লোকসান গুনেছেন কৃষকরা। অনেকে পুঁজি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে শসার চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। রমজানের আগেও চাষিরা শসা বিক্রি করেছেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। রমজানের কয়েকদিনের মধ্যে শসার দাম কমতে থাকে।

Advertisement

বর্তমানে ক্ষেতে শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ পয়সা কেজি দরে। কৃষকের কাছ থেকে ৫০ পয়সায় শসা কিনে ব্যবসায়ীরা পাঠাচ্ছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, সিলেট, খুলনা, যশোর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। স্থানীয় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকায়।

রোববার জেলার বিভিন্ন এলাকার শসার ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ক্ষেতে শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব কৃষক রমজান মাসকে লক্ষ্য রেখে ভালো দাম পাওয়ার আশায় সময় অনুযায়ী শসার চাষ করেছেন। কিন্তু রমজানের আগেও যেখানে কৃষকরা শসা বিক্রি করেছেন কেজি প্রতি ৪০ টাকা। এখন তা নেমে আসে ৫০ পয়সা কেজি দরে।

ধারদেনা করে শসা চাষ করে এখন বড় অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। এসব চাষিদের প্রতি বিঘা জমিতে শসা চাষ করে উৎপাদন খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার কেজি। ৫০ পয়সা কেজি দরে বিক্রি করে দাম পাচ্ছেন মাত্র পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। এতে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। ক্ষেত থেকে শসা তুলতে মজুরি পর্যন্ত হচ্ছে না। এজন্য অনেক চাষির ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে শসা।

পাথর ঠাকুর এলাকার শসা চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে শসার আবাদ করে মাত্র ১৫ টাকার শসা বিক্রি করতে পেরেছি। এখন আর শসা ক্ষেতে যাই না। মূলত এবার শসার বাম্পার ফলন হওয়ায় শসার চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ অনেক বেশি। এজন্য শসার দাম একেবারে কমে গেছে।

Advertisement

একই উপজেলার বামনপাড়া এলাকার কৃষক তজমল হক বলেন, ‘কৃষকের এই দুরাবস্থা দেখার কেউ নেই। একদিনের শসা বিক্রি করে একটা কামলার দাম ওঠে না। কৃষকরা মাঠে মারা গেলেও বিষয়টি কেউ দেখছে না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা সবজি চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলব।’

তেঁতুলিয়া উপজেলার খয়খট পাড়া এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি তিন বিঘা জমিতে শসা চাষ করেছি। আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫ হাজার টাকার শসা বিক্রি করতে পেরেছি। বাকি শসা ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।

পঞ্চগড় কাঁচা বাজারের আড়তদার আসলাম উদ্দিন বলেন, বাজারে শসার আমদানি অনেক বেশি। এজন্য দাম কমে গেছে। আগে বিঘা প্রতি জমি থেকে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বস্তা শসা সংগ্রহ করা হত। ফলন ভালো হওয়ায় এখন বিঘা প্রতি একই সময়ে শসা সংগ্রহ করা হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ বস্তা। আমরা শসা দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে পারতাম। এখন জেলার বাইরেও শসার চাহিদা নেই। রমজান মাসে শসার এমন বাজার আগে দেখিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শাহ মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সাধারণত রমজানে শসা ভালো দামে বিক্রি হয়। এজন্য চাষিরা সময় মেপে শসার আবাদ করেন।

এবারও তাই হয়েছে এবং প্রতিটি ক্ষেতেই শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে শুরুতে দাম ভলো পেলেও এখন বাজার একেবারে নেমে গেছে। ক্ষেত থেকে ৫০ পয়সা কেজি দরে শসা বিক্রি করছেন কৃষকরা। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে শসার চাহিদা কিছুটা কমে যায়। তবে গরম আবহাওয়া বৃদ্ধি পেলে দাম কিছুটা বাড়তে পারে।

সফিকুল আলম/এমএমএফ/এমএস