আহলে কিতাবের অনুসারি ইয়াহুদি-খ্রিস্টানরাও ইসলামে বিশ্বাস করে না। দুনিয়ায় এসব অবিশ্বাসীদের প্রতিও মহান আল্লাহ অনেক মহান ও দয়াময়! আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও দরিদ্র থেকে মুক্তি দিয়ে একাধিক উপায় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় এ মুক্তির বিষয়টি এভাবে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন-
Advertisement
ضُرِبَتۡ عَلَیۡهِمُ الذِّلَّۃُ اَیۡنَ مَا ثُقِفُوۡۤا اِلَّا بِحَبۡلٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ حَبۡلٍ مِّنَ النَّاسِ وَ بَآءُوۡ بِغَضَبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ ضُرِبَتۡ عَلَیۡهِمُ الۡمَسۡکَنَۃُ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ کَانُوۡا یَکۡفُرُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ وَ یَقۡتُلُوۡنَ الۡاَنۡۢبِیَآءَ بِغَیۡرِ حَقٍّ ؕ ذٰلِکَ بِمَا عَصَوۡا وَّ کَانُوۡا یَعۡتَدُوۡنَ
‘আল্লাহ ও মানুষের আশ্রয় ছাড়া যেখানেই তারা (ইয়াহুদিরা) অবস্থান করুক না কেন, সেখানেই তাদের ভাগ্যে লাঞ্ছনা নির্ধারিত করা হয়েছে, তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়েছে এবং তাদের জন্য দারিদ্র্যতা নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য যে, তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করতো এবং অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যা করতো। আর এ কারণে যে, তারা অবাধ্য হয়েছিল এবং সীমালংঘন করেছিল।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১১২)
ইসলামের যুগে ইয়াহুদি-খ্রিস্টানদের নিরাপত্তার ধরন
Advertisement
আয়াতের ব্যাখ্যায় বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে যে, ‘তারা যেখানেই থাকুক, তাদের জন্য লাঞ্ছনা অবধারিত করে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু দুই উপায়ে তারা এ লাঞ্ছনা থেকে অব্যাহতি পেতে পারে-
এক. এমন উপায়ে, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে
আল্লাহর পক্ষ থেকে উপায় এই যে, কোনো আহলে কিতাব (ইয়াহুদি-খ্রিস্টান) অমুসলিম যদি মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ না করে এবং নিজ ধর্মমতে ইবাদতে মশগুল হয়ে যায়; তবে জিহাদে মুসলমানরা তাকে হত্যা করবে না। যদিও তার কাফিরসুলভ সে ইবাদত পরকালে কোনো উপকারে আসবে না।
এমনিভাবে কোনো আহলে কিতাব (ইয়াহুদি-খ্রিস্টান) অমুসলিমরা নাবালেগ ও নারী হলে ইসলামি শরিয়তের আইনে এমনকি জিহাদেও তাদের (নারী-শিশু) হত্যা করার অনুমতি নেই। ।
Advertisement
দুই. এমন উপায়ে, যা মানুষের পক্ষ থেকে
মানুষের পক্ষ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় এই যে, আহলে কিতাব (ইয়াহুদি-খ্রিস্টানরা) অমুসলিমরা যদি মুসলমানদের সঙ্গে সন্ধিচুক্তি সম্পাদন করে, তবে ইসলামি শরিয়তের আইন অনুযায়ী তারা নিরাপদ হয়ে যাবে। তাদের হত্যা করা বৈধ নয়।
আয়াতের পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে, তারা আল্লাহর শাস্তিযোগ্য হয়েগেছে। তাদের জন্য দারিদ্র্য অবধারিত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা সাহসিকতা হারিয়ে ফেলেছে। এছাড়া জিযিয়া ও খেরাজ দিয়ে বসবাস করাও দারিদ্র্য, গলগ্রহতা এবং অধঃপতনেরই লক্ষণ।
এগুলো লাঞ্ছনা ও শাস্তি এ কারণে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশাবলী অস্বীকার করেছে এবং স্বজ্ঞানে তারা আল্লাহর পয়গাম্বরদের হত্যা করেছে।
এই লাঞ্ছনা ও শাস্তি এ কারণে যে, তারা আল্লাহর আনুগত্য করেনি বরং অবাধ্যতার সীমা অতিক্রম করেছে।
লাঞ্ছনা ও দরিদ্র থেকে মুক্তির উপায়
আল্লাহর শাস্তির ফলস্বরূপ ইয়াহুদিদের উপর যে লাঞ্ছনা ও দারিদ্যতা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা থেকে সাময়িকভাবে বাঁচার দুইটি উপায় তুলে ধরা হয়েছে।
১. তাদেরকে আল্লাহর আশ্রয়ে আসতে হবে। হয় তারা ইসলাম গ্রহণ করবে অথবা ইসলামি দেশে কর বা ট্যাক্স দিয়ে আশ্রিত হয়ে থাকা পছন্দ করবে।
২. তারা মানুষের আশ্রয় লাভ করবে। এরও দুইটি ব্যাখ্যা রয়েছে-
> ইসলামি দেশের সরকার নয়, বরং কোনো সাধারণ মুসলিম তাদের আশ্রয় দেবে। আর এই অধিকার প্রত্যেক মুসলিমের আছে এবং দেশের সরকারকে তাকিদ করা হয়েছে যে, সে যেন কোনো নিম্ন পর্যায়ের মুসলিমের দেওয়া আশ্রয়কেও প্রত্যাখ্যান না করে।
> তারা বড় কোনো অমুসলিম শক্তির সহায়তা লাভ করবে। কারণ, ‘নাস’ (মানুষ) সাধারণ শব্দ যা মুসলিম ও অমুসলিম সকলকেই শামিল করে।
ইসলাম কখনোই অন্যায়ভাবে কারো প্রতি জুলুম করে না। ইসলামে আদর্শ সুমহান ছিল আছে এবং থাকবে। কেননা ইসলামই মানুষের জন্য একমাত্র মনোনীত জীবন বিধান। শান্তির জীবন ব্যবস্থা। আয়াত নাজিলের সময়কালেও ইয়াহুদি-খ্রিস্টানদের প্রতি জুলুম করা হয়নি। বরং তাদের প্রতি মুসলমানদের অনুগ্রহ করার কথাই ঘোষিত হয়েছে। যার প্রমাণ কোরআনুল কারিমের এ আয়াত।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, আয়াত থেকে শিক্ষা নেওয়া। ইসলামের সৌন্দর্য সবার কাছে তুলে ধরা। উত্তম ও সুন্দর জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করার আহ্বান করা।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে কোরআনের সত্যতা বোঝার তাওফিক দান করুন। কোরআনের হেদায়েত গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-হাদিসের দিকনির্দেশনা ও জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম