কৃষি ও প্রকৃতি

ফেনীতে রবি শস্যের ব্যাপক চাষ

ফেনীতে চলতি রবি মৌসুমে গম, চীনাবাদাম, মুগ, খেসারি ও ফেলন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। মৌসুমের শুরুতে ৬ ডিসেম্বরের বৃষ্টির ক্ষতি কাটিয়ে উঠে এখন কৃষকরা জমি চাষে নেমে পড়েছেন।

Advertisement

এবার মৌসুমের শুরুতে জেলায় রবি ফসলের চাষ বাড়াতে ১৮ হাজার কৃষককে ৮৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা ব্যয়ে হাইব্রিড বীজ ও ৪ হাজার কৃষককে ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে উপশী জাতের ধানের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও জেলায় সরিষা, মসুর, গম, ভুট্টা, সূর্যমুখী, চীনাবাদম, মুগ ও খেসারি চাষের জন্য প্রণোদনা হিসেবে ৭০ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বীজ ও সার বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। জেলা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৮৭৮ কৃষককে প্রদর্শনী দিয়েও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রদর্শনী ও প্রণোদনার আওতায় জেলায় অন্তত ৩০ হাজার কৃষক বীজ, সার ও অর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, চলতি রবি মৌসুমে জেলায় ২৬ লাখ হেক্টর জমিতে ২৫ জাতের রবি ফসল চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করে জেলা কৃষি বিভাগ। ২১ জানুয়ারি তৈরি করা প্রতিবেদনে দেখা যায় জেলার ৬ উপজেলায় এরই মধ্যে সাড়ে ২৫ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে ৬ ডিসেম্বর বৃষ্টির কারণে এবার সরিষা আবাদ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। এছাড়াও বৃষ্টির কারণে কয়েকটি ফসলের চাষ যথা সময়ে শুরু করতে পারেনি কৃষকরা।

লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া রবি ফসলের মাঝে গম ৩৫ হেক্টরের স্থলে আবাদ হয়েছে ৬১ হেক্টর। একইভাবে চীনাবাদাম ৯৫০ হেক্টরের স্থলে ৯৫২ হেক্টর, মুগ ৫৯০ হেক্টরের স্থলে ৬১৫ হেক্টর, খেসারি ৫৩৫০ হেক্টরের স্থলে ৫৩৬৭ হেক্টর, ফেলন ৪৭৯০ হেক্টরের স্থলে ৪৮৪১ হেক্টর, ধনিয়া ৭৫০ হেক্টরের স্থলে ৭৭২ হেক্টর, খিরা ৭৮০ হেক্টরের স্থলে ৭৮৯ হেক্টর চাষাবাদ করা হয়েছে। এদিকে জেলায় চলতি মৌসুমে সরিষাসহ কয়েকটি বেশ কয়েকটি ফসলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। এর মধ্যে সরিষা ২২০০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার পরিবর্তে আবাদ হয়েছে ১৮৬৭ হেক্টর। একইভাবে ভুট্টা ২৮০ হেক্টরের স্থলে ২৪০ হেক্টর, মিষ্টি আলু ৬১০ এর স্থলে ৫৬১ হেক্টর, আখ ৯০ হেক্টরের স্থলে ৮১ হেক্টর, মসুর ১৭৭০ এর স্থলে ১৫৬৬ হেক্টর, পেঁয়াজ ১৫ হেক্টরের স্থলে ১১ হেক্টরে, রসুন ১০ হেক্টরের স্থলে ৭ হেক্টর, সূর্যমুখী ২৫০ হেক্টরের স্থলে ২৪৫ হেক্টর ও কালোজিরা ৪ হেক্টরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও জেলার কোথায়ও এ ফসল আবাদ করা হয়নি।

Advertisement

তবে ফেনীর কৃষকরা এখন বোরো আবাদে পুরোপুরি ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪১১৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ও ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে উফশী জাতের ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সে আলোকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে জেলায় ৭ ভাগ অতিরিক্ত বীজতলা বসানো হয়।

গত কয়েকদিন আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় কৃষকরা রবি আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলায় ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত ২২২০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ৮২৫০ হেক্টর জমিতে উফশী ধানের চারা রোপণ শেষ হয়েছে। আগামী ১৫ থেকে ২০দিনের মধ্যেই জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফাজিলপুর এলাকার কৃষক হুদা মিয়া জানান, তিনিসহ আশপাশের কৃষকরা বিস্তৃর্ণ জমিতে সরিষার বীজ ছিটিয়েছেন। কিন্তু বৃষ্টিতে পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সে জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ জমিটি খালিই রেখে দিয়েছেন।

ফেনী সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব কুমার জানান, প্রণোদনা ও প্রদর্শনীর সহায়তা পেয়ে কৃষকরা আবাদ শুরু করলেই বৃষ্টিপাত হয়। একারণে সরিষাসহ কয়েকটি ফসলের ক্ষতির মুখে পড়ে। এসময়ের বৃষ্টিতে কয়েকটি ফসল আবাদ পিছিয়ে যায়। যার কারণে এখনো রবি ফসল আবাদ শেষ করা যায়নি। নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের ফেনী অংশের মূল্যায়ন কর্মকর্তা আবু নঈম মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জানান, জেলায় বোরো মৌসুমে উৎপাদন বাড়ানো ও নতুন নতুন ফসলের সম্ভাব্যতা যাছাইয়ের জন্য ২২ প্রকারের তেল ও মসলা জাতীয় ফসলের ৮৭৮টি জমিতে প্রদর্শনীর মাধ্যমে চাষাবাদ করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. তারিক মাহমুদুল ইসলাম জানান, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কৃষকদের মনোবল বৃদ্ধি করে উৎপাদনের দিকে ঝোঁক সৃষ্টি করতে বিভিন্ন প্রকারের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আবাদ বৃদ্ধি করতে কৃষকদের সাথে নিয়মিত মাঠ কর্মকর্তারা যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছেন। বোরো ধান ছাড়া বাকি ফসলের আবাদ মোটামোটি শেষ প্রান্তে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই বোরো ধানের আবাদ শেষ বলে প্রত্যাশা এ কর্মকর্তার।

নুর উল্লাহ কায়সার/এমএমএফ/এএসএম

Advertisement