ভ্রমণ

যে দেশের মানুষ সূর্যের দেখাই পান না!

শীতকালে সূর্যের দেখা খুব কম মেলে। এ কারণে শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। দু’একদিন সূর্য না উঠলেই চারদিক অন্ধকারে ঢেকে যায়। ঠিক যেমন শ্বৈত্যপ্রবাহের সময় ঘটে। তাহলে ভেবে দেখুন, যেসব দেশের মানুষেরা সূর্যের দেখা পান না তাদের কী হয়!

Advertisement

এমনো দেশ আছে নাকি? জ্বি, বেশ কয়েকটি দেশ আছে যেখানে সূর্যের দেখা পাওয়াই ভাগ্যের বিষয়। আর সূর্য উঠলে আবার অস্ত যাওয়ার নামই নেয় না। এমনকি সেসব দেশে গভীর রাতেও সূর্যের দেখা মেলে। এসব নিশীথ সূর্যের দেশে বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা ভিড় করেন। জেনে নিন কোন কোন দেশে এমনটি দেখা যায়-

নরওয়ে

উত্তর মেরুর বরফে ঢাকা দেশ নরওয়ে। যেখানে সারা বছরই কনকনে ঠান্ডায় কাঁপে সবাই। এমন জায়গায় বেশি মানুষ ঘরতে যান না। তবে এই নিশীথ সূর্যের দেশ নরওয়েতে একবার গেলে প্রকৃতির অসাধারণ রূপের সাক্ষী হতে পারবেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, উত্তরমেরুর অরোরার খেলা বাকরুদ্ধ করে দেয় সবাইকে।

Advertisement

তবে অবাক করা বিষয় হলো, গরমের সময় এ দেশে সূর্যাস্তই হয় না, তাই এখানে সদাই গোধূলি। আবার শীতে সূর্যোদয় একেবারেই বন্ধ থাকে। তবে যে কোনো ঋতুতেই এখানকার ঠান্ডার ধারালো কামড় এড়ানো যায় না। আর্কটিক এলাকার দেশ নরওয়েতে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত রাতের বেলাতেও সূর্য দেখা যায়। তবে ঝলমলে সূর্য নয় সেই সূর্যের চেহারা অনেকটা গোধূলি বেলার মতো হয়। প্রায় ৭৬ দিন পর্যন্ত সেই সূর্য নরওয়ের আকাশে জ্বলজ্বল করে।

ওই সময় নরওয়ের হ্যামারফেস্ট ও সালবার্ডে মাত্র ৪০ মিনিটের জন্য সূর্যাস্ত হয়। অর্থাৎ সেখানে রাত হয় মাত্র ৪০ মিনিটের জন্য। বাকি সময়টা দিন। হ্যামারফেস্ট নরওয়ের সবচেয়ে উত্তরের শহর।

আইসল্যান্ড

নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আইসল্যান্ড কতটা ঠান্ডা। এ দেশের প্রায় ১০ শতাংশ দখল করে রেখেছে হিমবাহ। প্রচণ্ড ঠান্ডায় সেখানে লোকজনের বসবাসও অনেক কম। পর্যটকরা এ দেশেও খুব একটা ঘুরতে যান না। তবে আপনি যদি ঠান্ডা সহ্য করতে পারেন তাহলে সেখানে গেলে অতি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।

Advertisement

আইসল্যান্ডও কিন্তু নিশীথ সূর্যের দেশ। জুন মাসে এই নিশীথ সূর্যের সবচেয়ে ভালো দর্শন মেলে। মার্চ ও সেপ্টেম্বর মাসে এখানে দিন ও রাতের পুরোপুরি অর্ধেক অবস্থান। আর ডিসেম্বর মাসে দিনের মধ্যে ২০ ঘণ্টাই রাত। অর্থাৎ এ সময় সূর্যের দেখাই পান না সে দেশের বাসিন্দারা।

ইউকোন, কানাডা

কানাডার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ইউকোন শহরে টানা ৫০ দিন সূর্যকে দেখা যায়। সেখানে ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। একেও নিশিথসূর্যের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এটিও আর্কটিক অঞ্চলে অবস্থিত। শীতকালে আবার সাদা বরফের পাশাপাশি এখানে সদা অন্ধকার বিরাজমান। তখন মাসের পর মাস সূর্যের আলোর দেখা পান না নগরবাসীরা।

ব্যারো, আলাস্কা

আর্কটিক সার্কেলের আরেকটি দেশ হলো আলাস্কা। আর এই আলাস্কার উত্তর অংশের সবচেয়ে বড় শহর ব্যারো। অবশ্য এই নামে জনপ্রিয় হলেও এই শহরের আসল নাম উটকিয়াগভিক। নামটি বড্ড উটকো বলেই হয়তো ব্যারো নামটি বেশি জনপ্রিয় হয়েছে।

এ শহরেও মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত আকাশে সূর্য দেখা যায়। তবে নভেম্বর মাসে আর সূর্যের দেখা মেলে না। পুরো নভেম্বরেই সূর্যোদয় হয় না। তখন সারা শহর থাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন। ধরতে গেলে পুরো শীতকালই সেখানে সূর্যের দেখা পায় না শহরবাসী।

ফিনল্যান্ড

এ দেশেও শীতকাল জুড়ে থাকে অন্ধকার। ওই সময় সূর্যের দেখা পাওয়াই মুশকির। অন্যদিকে প্রায় ৭৩ দিন ধরে রাতের বেলা সূর্য দেখা যায় গ্রীষ্মকালে। তাই এ সময় সেখানকার বাসিন্দারা কম ঘুমান। বছরের বেশিরভাগ কাজই সেরে রাখেন তখন। ফিনল্যান্ডের অনেক মানুষ বসবাস করেন বরফের তৈরি বাড়ি ইগলুতে।

জেএমএস/এমএস