ধর্ম

কোরআনের ৪ উপদেশেই মিলবে জীবনের সফলতা

সব মানুষই সফলতা চায়। দুনিয়া এবং পরকালের সফলতা চায় মুমিন মুসলমান। যে কারণে কোরআনুল কারিমের ৪টি উপদেশই মানুষকে দুনিয়া ও পরকালে সফলতার পথ দেখাতে পারে। কী সেই ৪ উপদেশ?

Advertisement

শুধু দুনিয়াতে নয়, বরং পরকালেও যদি কেউ শতভাগ সফল হতে চায় তবে কোরআনের সুরা আসরের ৪টি উপদেশেই তা সম্ভব। এতে মনোযোগী হওয়া ও এর উপর আমল করা জরুরি। তাহলো-

১. ঈমান আনা

‘ঈমান’-এর অর্থ হলো বিশ্বাস। পরকালীন জীবনে সফলতা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো মহান আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। যা নাজিল হয়েছে (কোরআন) তাতেও বিশ্বাস স্থাপন করা। এ কথাই সুরা আসরে বলা হয়েছে যে-

Advertisement

وَ الۡعَصۡرِ ۙاِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَفِیۡ خُسۡرٍ اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا

উচ্চারণ: ওয়াল আসর ইন্নাল ইনসানা লাফিই খুসর। ইল্লাল্লাযিনা আমানু।’

অর্থ : সময়ের কসম, নিশ্চয়ই মানুষ চরম ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে।’  (সুরা আসর : আয়াত ১-২)

২. আমল করা

Advertisement

মানুষের মনে অনক সময় এমন অবস্থা পরিলক্ষিত হয় যে, নামাজ, রোজাসহ কোনো ইবাদত-বন্দেগিতেই ভালো লাগে না। ইবাদতে মন বসে না। তারপরও আমল-ইবাদতগুলো করতে হয়। যেহেতু আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আমলগুলো করতে বলেছেন; তাই এগুলো করে যেতে হবে। তাহলো সুরা আসরের একটি নির্দেশ-

وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ

উচ্চারণ : ‘ওয়া আমিলুস সালিহাতি।’

অর্থ : যারা ভালো কাজ করে।’ (সুরা আসর : আয়াত ৩)

মনের ইচ্ছা না থাকলেও ভালো আমল বা কাজ করে যেতে হবে। যেমনিভাবে একজন ছাত্র ভালো না লাগলেও ভালো ফলাফলের জন্য পড়তে বসে; যেমন করে চাকরিজীবি মানুষ ভালো না লাগলেও অফিস করতে যেতে হয়। ঠিক তেমনি ভালো কাজ বা ইবাদত-বন্দেগি করে যেতে হবে। তবেই নির্ধারিত সময়ের পর পাওয়া যাবে ভালো ফলাফল।

৩. পরস্পরের উপদেশ দেওয়া

ইসলাম সম্পর্কে যে যতবেশি জানবে তার ইবাদত-বন্দেগিগুলো ততো মজাদার হয়ে উঠবে। আর এদিক থেকে এগিয়ে আছেন আলেম-ওলামা তথা জ্ঞানী ব্যক্তিরা। কারণ আল্লাহ নিজেই বলেছেন-

إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاء إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ

‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু তারাই তাঁকে ভয় করে যাদের জ্ঞান আছে।’ (সুরা ফাতির : আয়াত ২৮)

যে যত বেশি জানবে এবং শিখবে; তার ইবাদত-বন্দেগির মজা ততবেশি হবে। তখন নামাজ-রোজা কারো কাছে কেবল রুটিন ওয়ার্ক হবে না বরং এই ইবাদতগুলোর মাঝে ঈমানের সুমিষ্ট স্বাদ পাওয়া যাবে। আর ভালো কথা বা আমল অন্যকে বলতে হলে আগে নিজেকে অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। তবেই অন্যকে বলা যাবে। আর এ আয়াতই মানুষকে নতুন করে ভালো হতে শেখায়। যেমনটি এসেছে কোরআনে-

وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ

উচ্চারণ : ‘ওয়াতা ওয়া সাওবিল হাক্কি।’

অর্থ : ‘একে অপরকে সঠিক উপদেশ দেয়।’ (সুরা আসর : আয়াত ৩)

৪. ধৈর্যের শিক্ষা নেওয়া

অন্ধকার যুগের শ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাকে বিশ্বস্ত ও পরোপকারী মানুষ হিসেবে সবাই জানতেন। অন্য মানুষের ভাগ্য বিনির্মাণে তিনি কাজ করে গেছেন। এটি ছিল তার ভিশন ও মিশন। আসমানি এ মিশনে তিনি ছিলেন বড়ই ধৈর্যশীল। যে কারণে তিনি সফলতার মুখ দেখেছিলেন। পেয়েছেন নতুন সম্রাজ্য, জয় করেছেন পবিত্র নগরী মক্কা। সে কাজের উপদেশই দেওয়া হয়েছে এভাবে-

وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ

উচ্চারণ : ‘ওয়াতাওয়া সাওবিস সবর।’

অর্থ : ‘একে অপরকে ধৈয্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা আসর : আয়াত ৩)

মানুষের কল্যাণে কাজ করার পথ সুপ্রশস্ত নয়। বরং তা অমসৃন। তাই চরম বিপদেও ধরতে হবে ধৈর্যের রশি। অনেক সমালোচনা-গালমন্দ শুনতে হবে, অনেক অকৃতজ্ঞ মানুষকে দেখা যাবে, অনেক সময় আর্থিক বা সামাজিক সংকটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে; তবু ধৈর্যধারণ করতে হবে। এ কারণেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘খেজুরের অর্ধেকটা দান করে হলেও নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।’ (বুখারি)

সুতরাং সুরা আসরের তিনটি আয়াতের ৪টি উপদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা দ্বারা মানুষ দুনিয়া ও পরকালের মারাত্মক ক্ষতি থেকে মুক্তি পেতে পারে। এ কারণেই ইমাম শাফেঈ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘ ‘কোনো লোকে যদি শুধু এই সুরা (সুরা আসর) নিয়ে চিন্তা করতো, সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট হতো।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের উপদেশ চারটি মেনে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের সফলতা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। সুরা আসর বুঝার এবং এর উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস