ভ্রমণ

সুন্দরবন ভ্রমণে কিছু বিচিত্র অভিজ্ঞতা

কাজী শাহাদাত

Advertisement

মাদারীপুর শহরে শকুনি লেক দেখার পর রাত সাড়ে ৮টায় চাঁদপুর প্রেস ক্লাব ভ্রমণ দলের তিনটি বাস যেন রুদ্ধশ্বাসে খুলনার উদ্দেশ্যে ছুটে চলল। বাস ছাড়ার আগে পরম আন্তরিকতায় বিদায় জানাতে আসেন মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম।

তিনি তার নিজ এলাকা চাঁদপুরের এতজন আপনজনকে একত্রে পেয়ে ভীষণ খুশী হয়েছেন বলে মনে হলো। তিনি মাদারীপুরে ১ বছর ১০ মাস কর্মরত থেকে জব সেটিসফেকশন উপভোগ করা বলতে যা বোঝায় সেটি যে করছেন, এমনটি তার সঙ্গে স্বল্পক্ষণের আলাপচারিতায় আন্দাজ করতে অসুবিধা হলো না।

শকুনি লেকের পাড়েই তার দ্বিতল সরকারি বাসভবন। তিনি বলেন, একটি শকুনি লেক মাদারীপুর শহর পরিবর্তন করে দিয়েছে। এখানকার এমপি, সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান মাদারীপুরের সার্বিক উন্নয়নে নিজের আত্মনিবেদনকে প্রতিনিয়ত যেভাবে স্পষ্ট করেন, তা চোখে পড়ার মতো।

Advertisement

ডা. শফিক জানান, মাদারীপুর থেকে খুলনা যেতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে রাতের বেলা ফাঁকা রাস্তায় দ্রুত গতিতে বাস চালিয়ে মাত্র ৩ ঘণ্টায় খুলনা শহরে পৌঁছে গেল। ভৈরব নদীর জেলঘাট থেকে ট্রলারযোগে দুটি জাহাজে উঠতে ভ্রমণ দলটির রাত ১২টা পার হয়ে গেল।

একটি জাহাজ ‘বনবিলাস’, অন্যটি ‘অবসর’। রাতের খাবার শেষে ঘুমাতে যাওয়ার সুযোগ ১টার আগে হয়নি। তাতে কী, সকাল ৮টার মধ্যে জাহাজ দুটি পৌঁছে গেল সুন্দরবনের বাগেরহাট জেলাস্থ হাড়বাড়িয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের কাছে। দ্রুত চা-বিস্কুট খেয়ে ট্রলারে উঠতে হলো সবাইকে।

১ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগলো সুন্দরবনের এই স্পটটি দেখতে। বনের ভেতরে কাঠের ব্রিজের মতো নির্মিত ১ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক দিয়ে বন দেখতে সময় লাগল ৫০ মিনিটেরও বেশি। হাড়বাড়িয়া থেকে জাহাজে ফিরে নাস্তার পর্ব সারতে সকাল সাড়ে ১০টা বেজে গেল। পরবর্তী স্পট হিরণ পয়েন্ট যেতে অপেক্ষা করতে হলো বিকেল ৩টা পর্যন্ত। স্ন্যাকস, গান-বাজনা, ইনডোর গেমস ও মধ্যাহ্ন ভোজে কাটলো সে সময়।

বাগেরহাটের হাড়বাড়িয়ায় যাওয়ার পর ভ্রমণ দলের অধিকাংশ সদস্যের মধ্যে অসন্তুষ্টি কাজ করছিল। কিন্তু হিরণ পয়েন্টে যাওয়ার সময় ট্রলার থেকে নিকটবর্তী বনে হরিণের বিচরণ দেখে ভ্রমণ দলের ছোট-বড় সকল সদস্য উল্লসিত হয়ে ওঠে। ট্রলার থেকে নামার পর একের পর বিভিন্ন স্থাপনা দেখে মনে হলো কষ্টকর ভ্রমণের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের সন্ধান বুঝি পাওয়া গেল।

Advertisement

প্রথমে মোংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের হিরনপয়েন্ট পাইলট বেইজের স্থাপনা চোখে পড়লো, যেখান থেকে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলোর বাংলাদেশ-অভ্যন্তরে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সুন্দরবন এলাকাস্থ বড় স্থাপনাসমূহ।

যেমন: একাধিক হেলিপ্যাড, ভিভিআইপি রেস্ট হাউস, নাবিক নিবাস ইত্যাদি। এর সীমানায় ঢুকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করা গেল বিশ্ব ঐতিহ্য ফলক, যেটি জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ১৯৯৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। এ স্থানটি সুদৃশ্য করতে এখানে বাঘ, হরিণের ভাস্কর্যসহ আরো কিছু নান্দনিক কাজ করা হয়েছে। যার ফলে এ স্থানটিতে ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যায়।

চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের আনন্দ ভ্রমণ দলটির তিনদিনের সুন্দরবন ভ্রমণের প্রথমদিনে গতকাল সর্বশেষ স্পট ছিল দুবলার চর। এটি খুলনা রেঞ্জের আওতায় সুন্দরবনের বিখ্যাত আরেকটি স্পট। সূর্যাস্তের অল্প সময় আগে গিয়ে এখানে বিদ্যমান সাগর সৈকতে ঘোরাঘুরি ও মেঘমুক্ত আকাশে চমৎকার সূর্যাস্ত উপভোগ করা গেল। দেখা গেলো ত্রিশ সহস্রাধিক জেলে অধ্যুষিত জেলেপল্লীর কিয়দংশ, যারা মাছ ধরে শুঁটকি উৎপাদনকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। চলবে...।

লেখক, প্রধান সম্পাদক দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ

এমআরএম/এএসএম