ইতিহাস ঐতিহ্যের এক অন্যান্য নিদর্শন তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে এটি মিয়া মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এ মসজিদটি সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় অবস্থিত।
Advertisement
১৮৫৮-৫৯ সালে মোঘল আমলে তৎকালীন মুসলিম ধার্মিক জমিদার কাজী সালামতুল্লাহ খান বাহাদুর মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রাচীন আমলের কারুকাজ খচিত মসজিদটি সংস্কারের অভাবে হারিয়েছে তার প্রকৃত সৌন্দর্য। তবুও মসজিদটি সৌন্দর্যতত্ত্ব ও প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শনস্বরূপ স্থান দখল করে আছে আজও। তবে যথাযথ পরিচ্ছন্নতার অভাব ও অবহেলার কবলে পড়ে মসজিদটি হারিয়েছে তার প্রকৃত সৌন্দর্য।
মসজিদটিতে সকল কাজ প্রাচীন কারুকার্যখচিত হলেও সেগুলো যথাযথ পরিচ্ছন্নতা না থাকার কারণে দিনে দিনে দর্শনার্থীদের আগামনও কমে যাচ্ছে। ধর্মভীরু মানুষদের প্রার্থনাস্থল এটি।
প্রচীন ঐতিহ্যের নির্দশন এ মসজিদটিতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে মন শীতল হয়ে যায়। সত্যিই অলৌকিকত্ব রয়েছে এই স্থান জুড়ে। মসজিদের রাতের দৃশ্য আরও বেশি নজর কাড়ে।
Advertisement
মসজিদের গায়ে তারকা খচিত আলোকসমূহ এবং দিঘীর পরিপূর্ণ জ্বল দেখে মনে হয় অন্য এক পৃথিবী এখানে। মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে দাাঁড়িয়ে আছে সাতক্ষীরা মোঘল আমলে নির্মিত হাতকাটা মিয়া মসজিদ।
সবচেয়ে আর্শ্চয্যের বিষয় হলো
কথিত আছে যে, মসজিদটি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর পরই প্রধান মিস্ত্রীর দুই হাত কেটে নেয়া হয়। যাতে এ মিস্ত্রী নতুনভাবে অন্য কোনো স্থানে এই নকশা বা আকৃতিতে যেন আর কোনো মসজিদ নির্মাণ করতে না পারেন। লোক মুখে প্রচলিত এ কথাটির লিখিত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মসজিদ স্থাপনের ইতিহাস
Advertisement
ইতিহাস পর্যালোচন করলে দেখা যায়, ষোলশ’ শতাব্দীর প্রথমদিকে অর্থাৎ ১৮৫৮-৫৯ সালে মোঘল আমলে তৎকালীন মুসলিম ধার্মিক জমিদার কাজী সালামতুল্লাহ খান বাহাদুর মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।
তৎকালীন বিহারের এক বাসিন্দা মসজিদটির নকশা ও কারুকাজের জন্য প্রধান মিস্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। যেটি মোঘল মনুমেন্টস অব বাংলাদেশ নামক গ্রন্থে প্রকাশিত তথ্য দ্বারা প্রমাণিত। আবার অন্যদিকে মসজিদটির সঙ্গে সাদৃশ্য করলে কলকাতার ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
দুই একরের জায়গাজুড়ে বিশাল এক দিঘীর দক্ষিণে প্রায় এক একর জমির উপর নির্মিত মসজিদটি। এতে আছে-
- সর্বমোট ৭ টি দরজা।
- ১৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৬ টি বড় গম্বুজ।
- ৮ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ১৪টি মিনার।
- ছাদের চার কোনায় ২৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৪টি মিনার।
- মসজিদের আওতাভূক্ত এলাকায় বহু অজানা ব্যক্তিদের কবরের চিহ্ন থাকলেও সেগুলো অরক্ষিত ভাবে আছে যুগ যুগ ধরে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,
১৬৩ বছরের পুরোনা প্রাচীন ঐতিহ্যের স্বাক্ষী এ মসজিদটি সংস্কার এবং পরিচ্ছন্নতার অভাবে সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। মসজিদের বিভিন্ন পার্শ্বের দেয়ালগুলো ফাটল ধরেছে। সংরক্ষণ ও সংস্কার করা না হলে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে মোঘল আমলে নির্মিত প্রচীন এই ঐতিহ্য। হয়তো শুধু ইতিহাসে লেখা থাকবে তবে বাস্তাবে ধ্বংসাবশেষও থাকবে না।
মসজিদের কেয়ারটেকার নূরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল থেকে আগত মানুষের এখানে ভীড় জমায়। তবে এখানে আগত সব দর্শনার্থীদের নাম ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়।
তিনি আরও জানান, দক্ষিণ বঙ্গের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ এটি। সংস্কার এবং দেখাশুনো যথাযথ হলে প্রাচীন এ মসজিদের ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে। এমনিতেই সৌন্দর্য হারিয়ে যাওয়ায় দিন দিন দর্শনার্থীদের আনাগোনা কমে যাচ্ছে।
সংস্কার না হলে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে হাতটাকা মিয়া মসজিদ। প্রাচীন এ মসজিদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে খুব শিগগিরই রাষ্ট্রীয় রক্ষণাবেক্ষণ খুবই জরুরি বলে মনে করছেন দর্শনার্থী ও স্থানীয়রা।
এমএমএস/জেআইএম