ধর্ম

দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ

বিজয়ের আনন্দে পুরো জাতি উদ্ভাসিত হয়েছে। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকেও বিজয়ের গুরুত্ব অতি ব্যাপক। এ বিজয় লাভের জন্য মাতৃভূমি বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হয়েছে। এ জাতিকে ত্যাগ করতে হয়েছে অনেক কিছু। দিতে হয়েছে লাখো প্রাণের তাজা রক্ত।

Advertisement

ইসলাম স্বাধীনতাকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছে, তেমনি দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইসলামে দেশপ্রেমকে ঈমানের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও বিজয় উদযাপন উপলক্ষে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশও দিয়েছে ইসলাম। তাছাড়া বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হুব্বুল ওয়াত্বানে মিনাল ঈমান অর্থাৎ দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।’

নিজ জন্মভূমির প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে ভালোবাসা ছিল, তা অসাধারণ। শুধু তাই নয়, ইসলামের নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হৃদয়ে যেমন ছিল স্বদেশ প্রেম তেমনি তার সাহাবায়েকেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈনের মাঝেও বিদ্যমান ছিল এ দেশপ্রেম।

Advertisement

হিজরতের পর মদিনায় হজরত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় তাদের মনে-প্রাণে প্রিয় স্বদেশ মক্কার স্মৃতিচিহ্ন জেগে উঠেছিল। তারা জন্মভূমি মক্কার কথা স্মরণ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন।

এ অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের মনের এ দুরবস্থা দেখে প্রাণভরে দোয়া করলেন-‘হে আল্লাহ! আমরা মক্কাকে যেমন ভালোবাসি, তেমনি তার চেয়েও বেশি মদিনার ভালোবাসা আমাদের অন্তরে দান করুন।’ (বুখারি)

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ দোয়া ও ভালোবাসার নির্দশন যুগে যগে সব দেশ-জাতিগোষ্ঠী ও বর্ণের মানুষের জন্য স্বদেশ প্রেমের অনন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম প্রচারের কারণে নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করে হিজরত করেছিলেন মদিনায়। দীর্ঘ ১০ বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর সফলতার সঙ্গে নিজ জন্মভূমির স্বাধীনতা অর্জন করেন। এতে বিজয় উদযাপন করেন।

Advertisement

তিনি মক্কা থেকে মদীনার পথে হিজরতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার আগে তার মুখ ফেরালেন জন্মভূমি মক্কার দিকে। যাত্রাপথে তিনি বার বার ফিরে তাকাচ্ছিলেন মক্কার দিকে। জন্মভূমি ছেড়ে যাওয়ার ঘটনায় তাঁর চোখ থেকেও ঝরছে অশ্রু।

মক্কার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন আর বললেন-‘হে মক্কা! তুমি আমার কাছে সমস্ত স্থান থেকে অধিক প্রিয়, আমি মক্কাকেই ভালোবাসি। আমার মন মানছে না। কিন্তু তোমার লোকেরা আমাকে এখানে থাকতে দিল না, সব কিছুর মালিক তুমি। মক্কার মানুষদের ঈমানের আলোয় উজ্জ্বল কর। ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত কর।’ (মুসনাদ আহমদ ও তিরমিজি)

একটু ভেবে দেখুন!স্বদেশের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কতই না গভীর প্রেম ছিল। যে দেশের লোকেরা তার ওপর এতো জুলুম অত্যাচার করেছে, জন্মভূমি থেকে হিজরত করতে হয়েছে। তার পরেও মাতৃভূমির প্রতি কত অগাধ ভালোবাসা। একেই বলে স্বদেশপ্রেম।

দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই আহ্বান করেছেন, তখনই সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এ ডাকে সর্বোতভাবে সাড়া দিয়েছেন। তারা জানতেন, নিজেদের বিশ্বাস, আদর্শ ও ধর্মমত প্রতিষ্ঠার জন্য একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের প্রয়োজন অনেক বেশি।

সাবাহায়ে কেরাম ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যেমন আন্তরিক ছিলেন, তেমনি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন দেশপ্রেম ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষায়। মাতৃভূমির প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখুন-হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘আমি খায়বর অভিযানে খাদেম হিসেবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে গেলাম। অভিযান শেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (মদিনায়) ফিরে এলেন আর ওহুদ পাহাড় তার দৃষ্টিগোচর হলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-‘এই পাহাড় আমাদেরকে ভালোবাসে আর আমরাও একে ভালোবাসি।’ (বুখারি)

বিশ্বনবি ও শ্রেষ্ঠনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ আমল দ্বারা তার উম্মতকে বিজয়ের আনন্দ উপভোগের শিক্ষা দিয়েছেন। মক্কা বিজয়ের আনন্দে প্রথমেই তিনি ৮ রাকাআত নফল নামাজ আদায় করেছিলেন।

সুতরাং মুসলিম উম্মাহসহ সব মানুষের উচিত, নিজ জন্মভূমি ও দেশকে ভালোবাসা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, এমনকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বাধীনতার চেতনাকে হৃদয়ে জাগ্রত রাখা।

মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয়, সম্মান, আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা অর্জন ও বিজয় উদযাপনে দুনিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি যেমন অসংখ্য দাসকে নিজ খরচে মুক্ত করে স্বাধীনতা দিয়েছেন, তেমনি সমগ্র বিশ্বকে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার প্রকৃতস্বাদ।

সুতরাং বিজয়ের মাসে সবার হৃদয়ে জাগ্রত থাকুক- ‘হুব্বুল ওয়াত্বানে মিনাল ঈমান অর্থাৎ দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।’

আল্লাহ পাকের কাছে এ কামনা করি, আমাদের যেন পুণরায় দাসত্বের জীবনে জড়িয়ে পড়তে না হয়। নিজ দেশের প্রতি, দেশের সম্পদের প্রতি যেন আমাদের অনেক বেশি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। আল্লাহপাক আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস