সাহিত্য

করোনাকালে বইমেলা ও প্রকাশনা শিল্প বাঁচাতে আমার ভাবনা

মো. রহমত উল্লাহ

Advertisement

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনার প্রকোপ এখনো কমেনি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশও করোনার মরণঘাতী ছোবলে আক্রান্ত। শুরু থেকেই আমাদের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক সব সেক্টরই কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে লকডাউন শিথিল হওয়ার পর প্রতিটি দেশ এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনো কোনো সেক্টর এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা নেই।

আমাদের দেশের প্রকাশনা শিল্পের অবস্থা ঠিক তেমনই। এমনিতেই হাজারও সমস্যায় জর্জরিত আমাদের প্রকাশনা শিল্প, এর মধ্যে করোনার ছোবল যেন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ অবস্থা। বিভিন্ন প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে আমরা প্রকাশনা সংশ্লিষ্টরা সম্মুখে ধাবিত হচ্ছিলাম, ঠিক সেই মুহূর্তে করোনার ছোবল আমাদের সব প্রস্তুতি লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।

Advertisement

এরই মাঝে চলে এসেছে আমাদের সবার প্রিয় অমর একুশে বইমেলা। যে মেলার জন্য আমরা প্রকাশক, লেখকসহ প্রকাশনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তারা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকি।

আসন্ন অমর একুশে বইমেলা ও করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের নাজুক অবস্থা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।

কয়েক মাস ধরে আসন্ন অমর একুশে বইমেলা নিয়ে গুঞ্জন শুনেছি বিভিন্ন মহল থেকে। সবশেষ বাংলা একাডেমি নিশ্চিত করেছে বইমেলা আয়োজনের জন্য সব ব্যবস্থা হাতে নেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বইমেলা সফল করবে বলেও জানা গেছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে বইপত্র বিক্রি না হওয়ায় প্রকাশনা শিল্পের দুরবস্থা চলছে। এরই মধ্যে বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে স্টল ভাড়া দেয়া অনেক প্রকাশকের পক্ষে কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপর রয়েছে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার ভয়। যেখানে শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, সেখানে অভিভাবক সন্তানদের নিয়ে বইমেলায় আসবেন আমার তা মনে হচ্ছে না।

Advertisement

অন্যদিকে করোনায় সজন হারানোর শোকের মিছিল প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে। চেনাজানা মানুষগুলো পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অনন্তকালের যাত্রায় শামিল হচ্ছেন। এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন প্রকাশকও মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনার প্রকোপ বাড়ছে। শীত বাড়ার সাথে সাথে করোনার প্রকোপ আরো বাড়বে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অমর একুশে বইমেলার আয়োজন করলে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য কঠোর থেকে কঠোরতর হতে হবে বলে আমি মনে করি।

মেলায় প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে একজন পাঠক-দর্শনার্থীর স্টলে যাওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। বইমেলা যেহেতু বিশাল লোকসমাগমের জায়গা; তাই এখানে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা যায়, এজন্য দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মেলার আয়োজক কমিটিতে রাখতে হবে।

স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি যেন কোনোভাবেই নিয়ম রক্ষার বিষয় না হয়, সেদিক নজর না দিলে এজন্য বড় ধরনের মাশুল দিতে হতে পারে। অমর একুশে বইমেলা যেহেতু আমাদের প্রাণের মেলা। এই মেলায় করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আমি আমাদের শেষ ভরসাস্থল জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসূরি, আমাদের প্রাণের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক দির্শেনাও আশা করছি। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তার দূরদর্শী বিচক্ষণ নির্দেশনা সঠিক সময়ে প্রদান করবেন।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেক সেক্টর প্রণোদনা পেলেও প্রকাশনা ইন্ডাস্ট্রি কোনো প্রণোদনা পায়নি। প্রকাশনা শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বই ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণে ইতিবাচক পদক্ষেপ আশা করি।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর বই ক্রয়ের প্রক্রিয়া সার্বজনীন করা গেলে প্রকাশনা শিল্প ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব বলে মনে করি।

জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সারাদেশে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বই ক্রয় করা হচ্ছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ভুলভাল নিম্নমানের বই সস্তায় বিক্রি করছে, যা আমাদের প্রজন্মকে বিকৃত ইতিহাস শেখাবে। কাজেই আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের তালিকা প্রণয়ন করবে এবং তালিকার বই ক্রয়ের নির্দেশনা থাকা জরুরি ভিত্তিতে প্রদান করবে।

বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সৃজনশীল বই দেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভেবে দেখবেন; আমি এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর লক্ষ্য উদ্দেশ্য নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধু নীতি আদর্শের চেতনা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হোক আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অঙ্গীকার।

লেখক: পরিচালক (প্রকাশনা), বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি

এমএমএফ/এমকেএইচ