ফিচার

হাঁড়িচাচা পাখি দেখেছেন কখনো?

হাঁড়িচাচা পাখি দেখেছেন কখনো?

একসময় অনেক গাছ-পালা ও ঝোঁপ-ঝাড় ছিল। সেখানে বিভিন্ন পাখির আনাগোনা ছিল। তখন সকাল-সন্ধ্যা পাখিদের কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত থাকতো চারিদিক। এখন জনবসতি বাড়ায় ক্রমেই কমছে ঝোঁপ-ঝাড়। এতে পাখিদের বিচরণও কমে যাচ্ছে।

Advertisement

নওগাঁ জেলা শহরের আশেপাশে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লেবু ছাড়াও আছে বড় বড় রেইন ট্রিসহ নাম না জানা অনেক গাছ। গাছগুলো জুড়ে অসংখ্য পাখির আনাগোনা। একটুখানি প্রশান্তি পেতে প্রতিদিন বিকেলে শহর থেকে খানিক দূরে নিরিবিলি স্থানে বিভিন্ন বয়সের মানুষদের আড্ডা জমে। বিভিন্ন রকম পাখি দেখে সময় কাটে।

শহরের যান্ত্রিক কোলাহলের ভেতরে শহরের বাইরে এ প্রাকৃতিক পরিবেশে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। একদিন বিকেলে শহর থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে ছোট যমুনা নদীর তীরে লখাইজানী এলাকায় সবুজ ঘাসের ওপর বসে কয়েক বন্ধু মিলে গল্প করছি।

হঠাৎ কড়াই গাছ থেকে উড়ে এসে পেয়ারা গাছের ডালে বসলো একটি অদ্ভুত সুন্দর পাখি। এদের ওড়ায় বেশ ছন্দ আছে। ফটফট শব্দে গোটা কয়েক ডানার ঝাপটা, ডানা ও লেজ ছড়িয়ে শূন্যে ভেসে চলা, আবার ডানার ঝাপটা, আবার ভাসা।

Advertisement

ওড়ার সময় দেখা যায় ডানার কয়েকটা পালক সাদাটে। লেজের মাঝের পালকও তাই। দু’পাশে কালোর মাঝে যেন ফ্রেম আঁটা। পাখিটির নাম হাঁড়িচাচা। যার ইংরেজি নাম ‘Tree pie’ কিংবা ‘Tree crow’। বৈজ্ঞানিক নাম ‘Dendrocitta vagabubda’। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাকের জ্ঞাতি ভাই এই হাঁড়িচাচাকে বেশ কিছু আঞ্চলিক নামে ডাকা হয়। যেমন- কুটুম পাখি, লেজ ঝোলা, ঢেঁকিলেজা প্রভৃতি।

হাঁড়িচাচা সুন্দর পাখি। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে একই রকম। লম্বায় লেজসহ ১৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি। শুধু লেজটাই লম্বায় প্রায় ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি। বাংলাদেশের লেজওয়ালা পাখিদের মধ্যে পাখিটি অন্যতম। এতো বড় লেজের কারণে পাখিপ্রেমীদের দৃষ্টি কাড়ে সে। হাঁড়িচাচার শরীরের পালকের রং বাদামি পাটকিলে। মাথা, গলা এবং বুকের কিছু অংশ পাটকিলে আভাযুক্ত ফিকে কালো।

হাঁড়িচাচার লেজে মোট ১২টি পালক থাকে। লম্বা লেজের মাঝের পালক দুটি বেশ লম্বা। ছোট ডানা ও লেজের রং ধূসর সাদা। বাকিগুলো কালো। লেজের অগ্রভাগ কালচে। কাকের মতো শক্ত মোটা ও ধারালো চঞ্চু। কালচে স্লেট ধূসর চঞ্চু কিছুটা চাপা ও বাঁকা। পায়ের রং গাঢ় স্লেট ধূসর। পেছনের নখযুক্ত পা একটু বড়। চোখের মণি লালচে।

শহর থেকে পল্লির অতি পরিচিত পাখি হাঁড়িচাচা। শরীরে রঙের বাহার আর আকর্ষণীয় লম্বা লেজের কারণে ব্যাপক পরিচিত এ পাখি উঠে এসেছে বাংলা সাহিত্য তথা ছড়া, গল্প, কবিতায়। তাই তো যুগে যুগে মা তার শিশু সন্তানকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে ছড়া কাটেন: ‘আয়রে পাখি লেজঝোলা/খোকন নিয়ে কর খেলা/খাবি-দাবি কলকলাবি/খোকাকে মোর ঘুম পাড়াবি।’

Advertisement

পাখিপ্রেমী প্রাণ ও প্রকৃতির সভাপতি কাজী নাজমুল বলেন, ‘মাটির ভাঙা হাঁড়ির একটি খোলা দিয়ে ইটের উপর ঘর্ষণ করলে যে শ্রুতিকটু শব্দ উৎপন্ন হয়, তার সঙ্গে এদের স্বরের সাদৃশ্য বশতই এ নাম বা বদনাম লাভ করেছে। গ্রীষ্মকালে আমাদের গ্রামে এদের আনাগোনা বেশি। তবে শীতকাল আর বর্ষাকালে যে দেখা যায় না এমন নয়।’

ছবি: আলোকচিত্রী শামীনূর রহমান

আব্বাস আলী/এসইউ/এএ/এমএস