ধর্ম

নামাজে তাকবিরে তাহরিমার পরের দোয়া

নামাজ আল্লাহ ফরজ ইবাদাত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকবিরে তাহরিমা ও সুরা ফাতিহার মধ্যবর্তী সময়ে ছানা পড়তেন। ইহাকে দোয়া-ই ইস্তিফতাহও বলা হয়। যার মাধ্যমে নামাজের চাওয়া পাওয়ার ভূমিকা শুরু করা হয়। এ দোয়াকে আল্লাহর জন্য বান্দার মানপত্রও বলা যেতে পারে। পাঠকের জন্য তা তুলে ধরা হলো-সানা পড়াদো’আ ইস্তিফতাহ (ছানা) পাঠ করা সুন্নাত। হাদিসের বর্ণনা থেকে জানা যায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক দোয়ার মাধ্যমে ছানা পড়তেন। ০১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকবিরে তাহরিমা ও সুরা ফাতিহার মধ্যবর্তী সময়ে কিছুসময় চুপ থাকতেন। আমি একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লামকে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার বাবা-মা আপনার জন্য ওপর কুরবান হোক, আপনি তাকবিরে তাহরিমার পর নিরব থেকে কি বলেন? তিনি বললেন, যে আমি তখনি বলি-উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বাইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাতা-ইয়া-য়া, কামা- বা-’আদ্তা বাইনাল মাশরিক্বী ওয়াল মাগরিবি, আল্লা-হুম্মা নাক্কিনী- মিন খাতা-ইয়া-য়া কামা- ইউনাক্কাছ্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ্দানাসি, আল্লা-হুম্মাগসিলনী- মিন খাতা-ইয়া-য়া বিল মা-য়ি, ওয়াছ্ছালজি, ওয়াল বারদি।’অর্থ : ‘হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে আমার পাপগুলো থেকে এত দূরে রাখ যেমন পূর্ব ও পশ্চিম পরস্পরকে পরস্পর থেকে দূরে রেখেছ। হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে আমার পাপ হতে এমন ভাবে পরিষ্কার করে দাও, যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে আমার পাপ হতে (পবিত্র করার জন্য) পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধুয়ে পরিষ্কার করে দাও।’ (বুখারি ও মুসলিম)০২. হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাজ শুরু করতেন তখন বলতেন-উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা। (তিরমিজি, আবু দাউদ মিশকাত)অর্থ : হে আল্লাহ্! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি প্রশংসাময়, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে, আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মাবুদ নেই।০৩. হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকবিরে তাহরিমার পর এ দোয়া পড়তেন-উচ্চারণ : ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহি-য়্যা লিল্লাজি  ফাত্বারাস সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিনা। ইন্না সালাতি ওয়ানুসুকি ওয়া মাহ ইয়া-ইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রব্বিল আলামিন, লা-শারীকালাহু ওয়া বিজালিকা ওমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল−-হুম্মা আংতাল মালিকু লা- ইলা-হা ইল্লা- আংতা, আংতা রব্বি ওয়া আনা আবদুকা যালামতু নাফসি। ওয়া’তারাফতু বিযাম্বি, ফাগফিরলি জুনুবি জামিআ, আন্নালাহু ইয়াগফিরুয যুনুবা ইল্লা আংতা, ওয়াহদিনি লিইহসানিল আখলাক্বি, লাইয়াহদি লিইহসানিহা ইল্লা আংতা, ওয়াসরিফ আন্নি সাইয়্যিআহা, লা ইয়াসরিফু আন্নি সাইয়্যিআহা ইল্লা আংতা, লাব্বাইকা ওয়া সাঅ’দাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহু ফি ইয়াদাইকা ওয়াশশাররু লাইসা ইলাইকা আনা বিকা, ওয়া ইলাইকা তাবারাকতা ওয়া তাআলাইতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা। (মুসলিম, মিশকাত)অর্থ : ‘আমি আমার মুখমণ্ডল ফিরাচ্ছি তাঁর দিকে, যিনি আসমান ও যমীনসমূহ সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের অর্ন্তভূক্ত নই। নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু, আল্লাহর জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই।আর এ জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ, তুমি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তুমি আমার প্রভু আর আমি তোমার দাস। আমি আমার উপর যুলম করেছি। তাই আমি আমার অপরাধ স্বীকারকরছি। সুতরাং তুমি আমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা কর। নিশ্চয়ই তুমি ব্যতীত অন্য কেউ অপরাধ ক্ষমা করতে পারে না। আর আমাকে চালিত কর উত্তম চরিত্রের পথে, তুমি ব্যতীত অন্য কেউ উত্তম চরিত্রের পথে চালিত করতে পারে না। তুমি দূরে রাখ আমা হ’তে মন্দ আচরণকে, তুমি ব্যতীত অন্য কেউ আমাকে তোমার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত আছি তোমার নিকটে এবং প্রস্তুত আছি তোমার আদেশ পালনে। কল্যাণ সম¯ই— তোমার হাতে এবং অকল্যাণ তোমার উপর বর্তায় না। আমি তোমার সাহায্যেই প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তোমারই নিকট প্রত্যাবর্তন করব। তুমি মঙ্গলময়, তুমি উচ্চ। আমি তোমার নিকটে ক্ষমা ভিক্ষা চাচ্ছি এবং তোমার দিকে ফিরে যাচ্ছি।’সুতরাং নামাজের প্রারম্ভিক দোয়া পড়া সুন্নাত। উপরোক্ত যে কোনো একটি দোয়া পড়লেই সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে উক্ত দোয়া পড়ে নামাজের প্রস্তুতি পরিপূর্ণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : jagoislam247@gmail.comজাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।এমএমএস/এমএস

Advertisement