ফিচার

ধর্ষণের প্রতিবাদে ১০০ কিলোমিটার হাঁটলেন ৪ শিক্ষার্থী

শেখ নাসির উদ্দিন

Advertisement

সারাদেশে ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন ও নির্যাতন দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) দেওয়া তথ্যে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৭৫ জন নারী। দেশের এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারাদেশ।

ঠিক সে সময়ে ভিন্নধর্মী এক প্রতিবাদের আয়োজন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতিখার আলম আনন্দ, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাকলাইন উচ্ছ্বাস, অর্থনীতি বিভাগের বিডি রায়হান ও সংগীত বিভাগের আশফাক অনিক।

তারা কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার শাহবাগ পর্যন্ত দীর্ঘ ১০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে প্রতিবাদ জানান। ধর্ষণের প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জ শহরের আখড়া ব্রিজে মানববন্ধন করেছে শত শত মানুষ। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই মানববন্ধন থেকে ব্যানার হাতে ৪ শিক্ষার্থী যাত্রা শুরু করে ঢাকার উদ্দেশে।

Advertisement

তাদের বিদায় জানাতে ১ কিলোমিটার হেঁটে সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধনরত সঙ্গীরা। ১১ অক্টোবর শনিবার বিকেলে ১৫ কিলোমিটার হেঁটে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া ডাক বাংলোতে তারা রাতযাপন করেন।

পরদিন ভোরের সূর্য উঁকি দেওয়ার সাথে সাথে আবারও হাঁটা শুরু করেন তারা। দিন যত গড়ায়, রৌদ্রের তীব্রতা তত বাড়ে। পিচঢালা পথে পা ফেলে চলতে থাকেন ৪ জন। রোববার গাজীপুরের কাপাসিয়ায় স্থানীয় চায়ের দোকানে বসে চা খেতে খেতে উপস্থিত সবার মাঝে ধর্ষণ বিরোধী প্রচারপত্র বিলি ও আলোচনা করেন।

এদিন অটোরিকশা চালকদের সাথে আলোচনাও করেন। তৃতীয় দিন সোমবার রাজেন্দ্রপুর হয়ে টঙ্গী যাওয়ার পথে কিশোরী ফুটবলারকে সাথে নিয়ে নির্যাতন বিরোধী আলোচনা করা হয়। তবে স্থানীয় মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতন বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বাধা পেয়ে চলে আসে। রাতে টঙ্গী কলেজ শিক্ষার্থীদের মেসে জায়গা হয় তাদের। মঙ্গলবার সকালে টঙ্গী থেকে হাঁটা শুরু করে পদযাত্রা বিকেলে শাহবাগে পৌঁছায়।

ইফতেখার আলম আনন্দ বলেন, ‘আমরা ভিন্ন কিছু করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে ধর্ষণ বিরোধী মেসেজ দিতে পেরেছি এবং তাদের মতামত জানতে পারি। একটা ভালো কাজ করার মাধ্যমে গুটিকয়েক মানুষকে হয়তো সচেতন করতে পেরেছি। অবশ্যই একটা ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করছে।’

Advertisement

সাকলাইন উচ্ছ্বাস বলেন, ‘ধর্ষকের ফাঁসি দেওয়া, সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা এবং ধর্ষণের সম্ভাব্য জায়গাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো দরকার। যথাযথ কর্তৃপক্ষ যদি চান, তাহলে ব্যাপারটি নিশ্চিত করা যাবে। দ্রুত বিচার কাজ সম্পন্ন করতে পারলে ধর্ষণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

আরেক সহযাত্রী আশফাক অনিক বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের নামে অশ্লীল কন্টেন্ট ছড়ানো বন্ধ করা উচিত। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে সর্বস্তরের জনগণকে বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সঠিক ধারণা দেওয়া জরুরি। কারণ যাদের এগুলো বোঝানো দরকার; তারা অনেকটা দূরেই থেকে যান।’

এসইউ/এএ/জেআইএম