ফিচার

মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে সফল আল আমিন

ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস, রেল, বিমানের টিকিট সংগ্রহ করা যায়। দেশ-বিদেশে মুহূর্তেই যোগাযোগসহ আরও কত কিছু সম্ভব হয়েছে কেবল তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে। আমাদের সরকার যেমন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’র স্বপ্ন দেখে; তেমনই তরুণরাও চান তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। শুধু প্রত্যাশায় থেমে না থেকে অনেক তরুণ ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় কাজ করছেন। তেমনই একজন ডিজিটাল যোদ্ধার গল্প শোনাচ্ছেন শেখ নাসির উদ্দিন-

Advertisement

ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি তীব্র আগ্রহ ছিল আল আমিনের। মাঠে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলেও সময় পার করেছেন শৈশবে। তবে প্রযুক্তি যেন দিনদিন তাকে আসক্ত করে ফেলছিল। সারাদিন বাসার হ্যান্ডসেট নিয়ে মোবাইল গেমে পড়ে থাকা। ব্যবসায়ী বাবার কাছে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলের আবদার ল্যাপটপ। একমাত্র ছেলের আবদার ফেলতে পারেননি বাবা। তারপর ল্যাপটপ বাসায় এলো। তাতে মডেম লাগিয়ে ইন্টারনেটে ঘুরপাক শুরু। ইন্টারনেট হয়ে উঠল তার প্রযুক্তি শিক্ষক।

২০১৬ সালে মাত্র নবম শ্রেণির ছাত্র আল আমিন ভাবলেন, নিজের বিদ্যালয়কে প্রযুক্তির আওতায় আনবেন। যেই ভাবনা সেই কাজ। তৈরি করে ফেললেন ‘মাই স্কুল’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ। যার মাধ্যমে স্কুলে না গিয়েও জানা যেত আগামীকালের বাড়ির কাজ এবং ক্লাসে শিক্ষক কী পড়িয়েছেন। ছুটির দিনের নোটিশসহ প্রত্যেক শিক্ষকের সাথে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। দেশজুড়ে সারা ফেলেছিল ওই অ্যাপ।

টাঙ্গাইলের কালিহাতী সদরের মো. নায়েব আলীর ছেলে মো. আল আমিন কালিহাতী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবার। একে একে ইতোমধ্যে তৈরি করেছেন সাড়া জাগানো বেশ কিছু মোবাইল অ্যাপ।

Advertisement

২০১৭ সালে মোবাইলের মাধ্যমে ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা করতে একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেন। আর সে বছর ‘জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা’য় উপজেলা, জেলার প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে সারাদেশে প্রথম হন। এরপর ২০১৮ সালে আবার ‘বিজ্ঞান স্মার্ট সিটি প্রজেক্টের আওতায় নগর আধুনিকায়নের রূপরেখা তুলে ধরে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা’য় অংশ নিয়ে সারাদেশে প্রথম হন। সেবারও স্বর্ণপদক পান তৎকালীন নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির হাত থেকে।

এবছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে ‘করোনার প্রতিকার’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেন। যা ব্যবহারকারীকে সময়ে সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার সর্তকবার্তা দেয়। এ ছাড়া চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নম্বর ও জাতীয় স্বাস্থ্য বাতায়নের নম্বর যুক্ত রয়েছে।

শুধু করোনাভাইরাস সচেতনতা নয়, সংকটে পড়া মানুষদের অল্পমূল্যে খাদ্যসামগ্রী দিতে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি (ওএমএস) সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় আল আমিন একটি অ্যাপ তৈরি করে দিয়েছেন। এ অ্যাপের মাধ্যমে ১০ টাকা দরের ওএমএস চাল বিক্রির প্রক্রিয়াটি তদারকি করে উপজেলা প্রশাসন। কে কার কাছে চাল বিক্রি করছে, কতটুকু চাল বিক্রি হলো- এমন সব তথ্য মুহূর্তে জমা হচ্ছে উপজেলা প্রশাসনের অনলাইন সিস্টেমে। এখন সারাদেশে ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যমে চাল বিতরণের এ অ্যাপ বাস্তবায়নের কাজ করছে সরকার।

তরুণ অ্যাপ নির্মাতা আল আমিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। বাবার দেওয়া ল্যাপটপ আমাকে প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে সাহায্য করেছে। বড় হওয়ার সাথে সাথে চিন্তার জগত পাল্টাতে থাকে। তখন মাথায় কাজ করে দেশকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে কিছু দেওয়ার। তাই আমার ক্ষুদ্র উদ্ভাবন দিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আমি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে মানুষের কাজকে সহজ করছি। আর শুরুটা আমার স্কুল থেকে করি। স্কুলের বন্ধু, শিক্ষকরা ও এলাকার মানুষের অনেক প্রশংসা পাই। তাছাড়া পত্রিকা ও টেলিভিশনে আসে সেই খবর। তখন কাজের প্রতি উৎসাহ আরও বাড়ে। আমার কাজের জন্য দুইবার স্বর্ণপদক পেয়েছি। পেয়েছি অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আল আমিন বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দেশকে আরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে। কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করার ইচ্ছা আছে। আর কাজের কথা যদি বলি, তাহলে আন্তর্জাতিক মানের একটা মোবাইল অ্যাপ তৈরি করব। যাতে পৃথিবীর সব দেশ আমার তৈরি অ্যাপ ব্যবহার করতে পারে।’

এসইউ/এএ/এমকেএইচ