ভ্রমণ

খাগড়াছড়িতে নতুন ঝরনার সন্ধান

পাহাড়-নদী, ঝিরি-ঝরনাময় সবুজ প্রকৃতি আর বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠীর এক অনিন্দ্য মেলবন্ধনের জনপদ খাগড়াছড়ি। পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় সবুজ অরণ্য দেশের যেকোনো অঞ্চল থেকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে এ জনপদকে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশের এ পাহাড়ি অঞ্চল পর্যটকদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এ জনপদ পর্যটকদের কাছে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি স্থানীয়দের কাছে ‘ভূস্বর্গ’।

Advertisement

খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নতুন নতুন পর্যটন স্পট। রিছাং ঝরনা, তৈদুছড়া ঝরনাসহ অসংখ্য ঝরনার পর খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার দুর্গম জনপদ কাতালমনি পাড়ায় সন্ধান মিলেছে প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার ‘তৈলাফাং ঝরনা’। সেখান থেকে আছড়ে পড়ছে তৈলাফাং ঝরনার পানি।

ঝরনাটি ইতোমধ্যে পর্যটনের সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে নতুন এ ঝরনা দেখতে দুর্গম পথ পাড়ি দিচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। নিজেরাই খোঁজ-খবর নিয়ে নিরাপত্তা ও গাইডের ব্যবস্থা করে এখানে ভ্রমণ করছেন।

সরকারি উদ্যোগে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হলে তৈলাফাং ঝরনা হয়ে উঠতে পারে পাহাড়ের অন্যতম আকর্ষণ। এমনটাই বলছেন পাশের উপজেলা পানছড়ি থেকে ঘুরতে আসা তহিদুর রহমান রুবেল। তার মতে, স্থানীয় পর্যটকদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পর্যটকদেরও নজর কাড়বে তৈলাফাং ঝরনা।

Advertisement

একাধিক পথ ধরে তৈলাফাং ঝরনায় যেতে পারবেন। খাগড়াছড়ির পানছড়ি ও মাটিরাঙ্গা থেকে সড়ক পথে পানছড়ি-তবলছড়ি সড়কের প্রিন্সিপ্যাল বাগানের একটু সামনে কাতালমনি পাড়া-ভাইবোনছড়া সংযোগ সড়কে নামতে হবে। সেখান থেকে কাতালমনি পাড়ার দূরত্ব ৬-৭ কিলোমিটার মেঠোপথ। বৃষ্টি হলে হেঁটে যেতে হবে। শুকনো মৌসুমে মোটরসাইকেলে ৪-৫ কিলোমিটার যাওয়া যাবে। সেখান থেকে ঝরনায় পৌঁছতে জয় করতে হবে ভয়ঙ্কর দুটি পাহাড়।

সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাহিন্দ্র, পিকআপ ও মোটরসাইকেলে সড়কযোগে মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি হয়ে যাওয়া যাবে তৈলাফাং ঝরনায়। পিচঢালা সড়ক থেকে হেঁটে ঝরনায় পৌঁছতে ঘণ্টা দুই সময় লাগতে পারে। সংযোগ সড়ক থেকে কাঁচা মেঠোপথ ধরে বৌদ্ধবিহার এলাকায় গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে ঝরনায় নামার পথ দেখিয়ে দেবে। যাওয়ার পথে দূর পাহাড়ে লেবু, কচু, সেগুন বাগান ও জুমের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হবেন। সবুজ পাহাড়, গভীর অরণ্য আর ঝরনাগুলো মুগ্ধ করবে যেকোনো পর্যটককে।

তৈলাফাং ঝরনাটি প্রত্যন্ত গ্রাম বলে সেখানে ভালো মানের দোকান নেই। তবে পথে দু’একটি দোকান আছে; যেখানে চা-বিস্কুট খেতে পারবেন। যাত্রাকালে খাবার, সুপেয় পানিসহ যা লাগে- সঙ্গে নিয়ে আসাই ভালো।

উঁচু পাহাড় থেকে গাছ ও লতাপাতা অবলম্বন করে ভয়কে জয় করে নিচে নামলেই দেখা মিলবে তৈলাফাং ঝরনার। এর ঠিক বিপরীতে একটু উপরের রাস্তা পেরিয়ে পাথুরে জঙ্গলের শেষে দেখা মিলবে ছোট-বড় আরও দুটি ঝিরি-ঝরনা। ঝিরির দুই পাশেই উঁচু পাথুরে পাহাড়। আছে বড় বড় পাথরখণ্ড। পাথুরে দেয়াল বেয়ে নামছে স্রোতধারা।

Advertisement

ঝরনায় ঘুরতে আসা পানছড়ির উল্টাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘তৈলাফাং ঝরনায় পৌঁছানো অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হলেও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। যাদের পাহাড়, ঝরনা ভালো লাগে; তারা নিঃসন্দেহে তৈলাফাং ঝরনা উপভোগ করবেন।’

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তৈলাফাং ঝরনা ঘুরে আসা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অরুনাঙ্কর চাকমা বলেন, ‘তৈলাফাং ঝরনার যোগাযোগব্যবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারের পক্ষ থেকে যোগযোগব্যবস্থার উন্নয়নসহ পরিকল্পিত অবকাঠামো গড়ে তোলা হলে এ ঝরনা পাহাড়ের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথকে সুগম করবে। স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে।’

মাটিরাঙ্গার তৈলাফাং ঝরনাকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তৃলা দেব বলেন, ‘ইতোমধ্যে পর্যটকদের ভ্রমণপিপাসার কথা চিন্তা করে মাটিরাঙ্গার রিছাং ঝরনায় ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে।’

স্থানীয় পর্যটন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরেজমিনে পরিদর্শন করে সম্ভাব্যতা যাচাই করে তৈলাফাং ঝরনায় যাতায়াতের জন্য সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এসইউ/এএ/এমএস