ধর্ম

করোনা নিয়ে কাবা শরিফের খুতবায় শায়খ সুদাইসির আহ্বান

মহামারি করোনায় বিশ্ববাসীকে ধৈর্যের আহ্বান জানিয়েছেন পবিত্র কাবা শরিফের প্রধান ইমাম ও খতিব শায়খ আব্দুর রহমান আস-সুদাইসি। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে সবাইকে আত্মরক্ষায় সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান করেছেন। যেভাবে কুরআনুল কারিমে আত্মরক্ষা ও সাবধানতার তাগিদ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন বলেছেন-- 'হে ইমানদারগণ! তোমরা নিজেদের জন্য আত্মরক্ষার হাতিয়ার গ্রহণ কর।' (সুরা নিসা : আয়াত ৭২)- 'তোমরা নিজেদের হত্যা করো না।' (সুরা নিসা : আয়াত ২৯)- 'তোমরা নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না।' (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯৫)

Advertisement

শায়খ সুদাইসি গত ১০ জুলাই শুক্রবার কাবা শরিফের জুমআর খুতবায় মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে কল্যাণ ও সতর্কতামূল নসিহত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা বিস্তারের পর অবশ্যই আমরা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরবো। সাগরের ঢেউ যেভাবে সৈকতে ফিরে আসে। এ ভাইরাস মানবজাতির উপর রোগ -ব্যাধি ও মৃত্যুর বিশাল ও মজবুত চাদর বিছিয়েছে। বিশ্ববাসী মারাত্মক বিপদ ও অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আল্লাহ তাআলার অসংখ্য রহম ও করমে এবং বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহের কারণে এ মহামারি থেকে মানুষের আরোগ্যতা ও সুস্থতার হার বেড়ে চলছে। আলহামদুলিল্লাহ!

তবে এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত পোষণ করলে চলবে না যে, মহামারির এ সময়ে সবাইকে সব ধরনের সতর্কতা ও সাবধনতা অবলম্বন করে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। প্রতিরক্ষামূলক সব ধরনের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও তিনি নসিহত পেশ করেন।

Advertisement

দুনিয়ার সব মহামারি ও রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে যে পথ-পন্থা ও উপায়-উপকরণ গ্রহণের প্রতি ইসলামি শরিয়ত থেকে যেসব নির্দেশনা রয়েছে সেগুলোই আমাদের জন্য রক্ষাকবর হিসেবে গ্রহণের উৎসাহ রয়েছে। তাই জীবনের নিরাপত্তায় ও সুস্থতা লাভ করে পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই বাড়তি সতর্কতা। আর চাই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা এবং সতর্কতামূলক কার্যপ্রণালীর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন।

মুসলমান ভাইয়েরা! মহামারি, দুর্যোগ ইত্যাদি আসে আবার চলে যায়। যুগে যুগে বহুবার এসব মহামারি ও দুর্যোগ এসেছে এবং বিলুপ্ত হয়েছে। আল্লাহর রহমতে এগুলোর মধ্য রয়েছে সতর্কতা সংমিশ্রিত সুসংবাদ এবং চেপে বসা বিষন্নতা থেকে মুক্তি ও নাজাত। কিন্ত এই বালা- মুসিবত দুঃখ- দুর্দশা এবং শোকাকুল অবস্থা থেকে উঠে আসা আল্লাহর রহমত বরকত একমাত্র ঈমানদার ব্যক্তিরাই কেবল অনুধাবন করতে পারে।

মহামারি করোনায় আমাদের জন্য রয়েছে কিছু দৃষ্টান্ত ও শিক্ষা। আর তাহলো-

- হে ঈমানদারগণ! মহামারি করোনাকে কেন্দ্র করে আমরা কত যে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি। চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়েছে কত শিক্ষনীয় বিষয়। আবার শিক্ষা নেয়ার মত কত দৃষ্টান্ত দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এসব শিক্ষা ও পরীক্ষার শুরুতে রয়েছে একনিষ্ঠতার সঙ্গে আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষা। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, 'জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য।' (সুরা যুমার : আয়াত ৩)

Advertisement

- সৃষ্টি জগতের ও মানব জাতির মধ্যে আল্লাহর ফয়সালা ও নির্ধারণের ব্যাপারে ঈমানকে মজবুত করা এবং ইয়াকিন ও বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করা।

- আমাদের পবিত্র ধর্মের অন্যতম মূল্যবান বিষয় হলো মানুষের মর্যাদা ও সম্মান। স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা মানুষকে মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, 'আমি বনি আদমকে মর্যাদা দান করেছি। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৭০)

সুতরাং প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনা ও রোগ-ব্যাধি ইত্যাদি মোকাবেলায় ইসলামের সুস্পষ্ট নীতিমালাগুলো দৃষ্টান্ত সমৃদ্ধ, একক ও অনন্য। প্রতিরোধ ব্যবস্থা দিয়ে এর সূচনা করতে হবে। আর চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সতর্কতার মধ্য দিয়ে তা থেকে মুক্তির সমাপ্তি টানতে হবে।

সুতরাং মহামারি করোনার এ সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে সাবধান হয়ে চলতে হবে। প্রত্যেককেই দ্বায়িত্বশীল ও স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করতে হবে। যেখানে লাখো আক্রান্ত ও হাজারো মৃতের মিছিল সেখানে প্রতারক চক্রের কথা কান দিয়ে চোখ বুজে থাকার কোনো সুযোগ নেই। অবশ্যই সতর্কতা অবরম্বন করতে হবে।

পরিশেষে...মুসলিম উম্মাহ! বর্তমানে যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাহলো জনগণ এখনও নিজ নিজ দেশের অবস্থান সম্পর্কে অনবহিত। অথচ সমাজের জন্য তাদের অনেক দ্বায়িত্ব রয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও আইন শৃঙ্খলার ব্যাপারে।

এখনও কোনো স্থানে এমন অঞ্চল গড়ে ওঠেনি যে ভূমিতে পতপত করে উড়তে থাকবে সহিহ আকিদার ঝান্ডা। যার বসতি ও বাসকারী মেনে চলবে কুরআন- সুন্নাহের বিধান। যেখানে রাজা প্রজার মধ্যে গড়ে উঠবে অটুট বন্ধন। দৃঢ় ও মজবুত সম্পর্ক। পারষ্পরিক কোন দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাত ও বিরোধীতা থাকবে না। বরং সেখানে থাকবে সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব আর কল্যাণের আহবান। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-‘যেন তারা কাকুতি মিনতি করে।’ (সুরা আনআম : আয়াত ৪২)

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র দায়িত্বশীল। সে সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সুতরাং আমরা এ ব্যাপারে যত্নবান হবো। সাবধান ও সতর্কতা অবলম্বন করে পুনরায় জীবনের আগের গতিতে ফিরে আসবো। আর সবকিছুতে ভারসাম্য বজায় রেখে চলবো।

ভয়াবহ এই মহামারী থেকে বাঁচতে হলে এই পবিত্র ভূমি মক্কা মুকাররমার আদর্শ অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পারষ্পরিক সহযোগিতা ও সুবিন্যস্ত কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। কেননা শরীয়তের মূলনীতি হলো, প্রীতিকর বিষয় আনয়ন করা। অপ্রীতিকর বিষয় দমন করা। ক্ষতিকর বিষয় অপসারণ করা। মানুষের হেফাজত করা। তাদেরকে মহামারি ও ঝুঁকির দিকে ঠেলে না দেয়া। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-‘যে কারো জীবন রক্ষা করলো সে যেন সবার জীবনই রক্ষা করলো।' (সুরা মায়েদা : আয়াত ৩২)

সে কারণেই এই বরকতময় নগরী অন্যান্য প্রাধান্যযোগ্য বিষয়ের চেয়ে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকেই অধিকতর অগ্রগণ্য করার চেষ্টা অব্যাহ রেখে চলেছে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চেয়ে স্বাস্থ্য রক্ষার প্রতিই অনেক বেশি গুরুত্ব প্রদান করে।

আর হজ দ্বীনের একটি নিদর্শন এবং এই নগরের জন্য সম্মানের ভূষণ। হজ নিয়ে বর্তমান নির্ভুল ও ব্যতিক্রম সিদ্ধান্তটি মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বাগতম ও সমর্থন পেয়েছে।

সুতরাং আমাদের সবার উচিত নিজেদের শান্তি ও স্বাস্থ্যের হেফাজতের লক্ষ্যে এই বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্তের প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করা। এ সিদ্ধান্ত কতই না উত্তম। যারা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তারা কতই না কল্যাণকামী। যারা এর প্রতি সাড়া দিয়েছেন তারা কতই না শান্তিকামী। শুরু ও শেষের সব প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। আল্লাহ তাআলার জন্যই সব দান-প্রদানের কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া।

এমএমএস/পিআর