ধর্ম

মুসলিম অধ্যুষিত যে দ্বীপ এখনও করোনামুক্ত!

প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। এ সংক্রমণে 'গ্লোবাল হটস্পট' হিসেবে উঠে এসেছে ভারতের নাম। ৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত সে দেশেরই লাক্ষাদ্বীপ করোনা মোকাবেলায় বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। মুসলিম প্রধান অধ্যুষিত এ দ্বীপটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের কোনো ঘটনা এখনও ঘটেনি। প্রশ্ন হলো- ভারতের মুসলিম প্রধান এই দ্বীপপুঞ্জ কীভাবে এতদিন করোনামুক্ত থাকতে পারল? খবর বিবিসি বাংলা।

Advertisement

এ সফলতা লাভের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, 'ভারতের অন্যান্য অঞ্চল এবং বিশ্বের অন্যসব দেশের তুলনায় অনেক আগে থেকেই যাতায়াতসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কড়াকড়ি আরোপ করেছিল লাক্ষাদ্বীপ প্রশাসন।

লাক্ষাদ্বীপের একমাত্র জনপ্রতিনিধি মহম্মদ ফয়জল বলেছেন, দ্বীপে বহিরাগতদের প্রবেশ আটকেই তাদের এই সাফল্য! দ্বীপটিতে প্রায় ৭০ হাজার লোক বসবাস করে। এ জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশই মুসলিম। ভারতে যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে তখনও দেশটির লাক্ষাদ্বীপ রয়েছে করোনাভাইরাসমুক্ত।

দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিদিনের কোভিড বুলেটিনে রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর তালিকায় শুধু এই একটি অঞ্চলের নামই আজ পর্যন্ত আসেনি - কারণ সেখানে এখনও কোনো করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি।

Advertisement

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, পুরো ভারত যখন মারাত্মক করোনা আতঙ্কে ভুগছে, তখন লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসন সেখানে ফের স্কুল খোলার জন্যও কেন্দ্রের অনুমতি চেয়েছে।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মহম্মদ ফয়জল বলেছেন, 'যখন জানুয়ারির শেষে কেরালায় প্রথম কোভিড রোগীর সন্ধান মেলে, আমরা প্রথমেই এ দ্বীপে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আসা বন্ধ করে দিই। এমনকি যারা এন্ট্রি পারমিট নিয়ে এখানে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতে আসেন তাদের জন্যও লাক্ষাদ্বীপের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়।'

'দ্বিতীয়ত, পুলিশ এখানে কারফিউ বা ১৪৪ ধারাও খুব কঠোরভাবে বলবৎ করেছে, লোকজনও অযথা বাড়ির বাইরে বের হয়নি। যাদের জরুরি চিকিৎসা বা বিশেষ প্রয়োজনে মূল ভূখন্ডে যেতে হয়েছে তাদের জন্য কোচিতে আমরা দুটো কোয়ারেন্টিন সেন্টারও চালু করেছি- সেখান সাতদিন কোয়ারেন্টিনে থেকে টেস্টে নেগেটিভ হলে তবেই তারা ফেরত আসার অনুমতি পেয়েছেন।'

'আর লাক্ষাদ্বীপের যেসব (প্রবাসী) স্থানীয়রা দুবাই বা আরব দেশগুলো থেকে ফিরে এসেছেন তাদের জন্যও কোচিতে দুসপ্তাহ এবং দ্বীপে ফিরেও আরও দুসপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে' জানান জনপ্রতিনিধি মহম্মদ ফয়জল।

Advertisement

তবে স্থানীয় এমপি মহম্মদ ফয়জল আরও জানান, বাসিন্দাদের জন্য কোয়ারেন্টিন সেন্টার বা হোটেলে থাকার খরচ প্রশাসন বহন করলেও নানা কড়াকড়ির কারণে দ্বীপটির অর্থনীতিতে বিরাট ধাক্কা লেগেছে। লাক্ষাদ্বীপের উপার্জনে অবশ্যই বিরাট টান পড়েছে। সেই মার্চ থেকে আমাদের পর্যটন ব্যবসাও পুরোপুরি বন্ধ।

তবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে স্থানীয় শিল্পগুলোর ওপরেই জোর দিচ্ছি লাক্ষাদ্বীপ। এখানকার দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নির্মাণ শিল্প বা মাছ ধরতে যাওয়া- এগুলোর ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই বলেও জানান তিনি।

কেরালায় করোনাভাইরাস সনাক্ত হওয়ার পর থেকেই লাক্ষাদ্বীপের স্থানীয় প্রশাসন দ্বীপকে করোনামুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কঠোর হয়েছিলেন। যার ফলে মুসলিম প্রধান অধ্যুষিত এ অঞ্চলটি এখনও করোনামুক্ত।

তাছাড়া এ দ্বীপের অন্য একটি বাড়তি সুবিধা হলো, একদিকে এখানে জনসংখ্যা কম। আবার এটি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপপুঞ্জ। এখানের অধিবাসীদের তেমন সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখারও প্রয়োজন পড়েনি।

উল্লেখ্য যে, মুসলিম প্রধান অধ্যুষিত লাক্ষাদ্বীপপুঞ্জের ৩৬টি দ্বীপের মধ্যে সব দ্বীপে লোকজন বসবাস করে না। মাত্র ১০টি দ্বীপে লোকজন বসবাস করে থাকে। এ দ্বীপে জনসংখ্যা কম থাকা এবং ভিড় না থাকাও দ্বীপটিকে করোনা আক্রান্তের হাত থেকে মুক্ত রেখেছে। তাছাড়া অন্যান্য দেশে যখন কোয়ারেন্টিনে থাকার খরচ নিজেদের বহন করতে হচ্ছে, সেখানে লাক্ষাদ্বীপের ক্ষেত্রে সরকারই সেটা দিচ্ছে- আর লোকজনও তাই থাকতে কোনও আপত্তি করছে না।

লাক্ষাদ্বীপের সঙ্গে বাকি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা হলো- কোচি থেকে বিমান পরিষেবা আর মোট সাতটি যাত্রীবাহী জাহাজের সার্ভিস। করোনাভাইরাস সনাক্ত হওয়ার শুরু দিকে এ যোগাযোগে বিপুল কড়াকাড়ি আরোপ করার ফলেই মুসলিম প্রধান অধ্যুষিত লাক্ষাদ্বীপ এখনও করোনাভাইরাসমুক্ত।

এমএমএস/জেআইএম