ফিচার

ঘ্রাণশক্তি চলে যাওয়া কি করোনার লক্ষণ?

সম্প্রতি অনেকেরই ঘ্রাণশক্তি বা খাবারের স্বাদ চলে যাওয়ার কথা শোনা যায়। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। ফলে বাধ্য হয়ে ফোনে বা মেসেঞ্জারে চিকিৎসকদের প্রশ্ন করেন, ‘আমি নাকে ঘ্রাণ পাই না বা মুখে স্বাদ পাই না। আমার কী করা উচিত?’ তাদের প্রশ্নের জবাবে বিস্তারিত জানাচ্ছেন ডা. মোস্তফা কামাল—

Advertisement

আমরা নাকে ঘ্রাণ বা গন্ধ পাই অলফেক্টরি নামক একটি নার্ভের মাধ্যমে। এটি আমাদের নাকের উপরি অংশে ছড়ানো রয়েছে। যা সরাসরি মস্তিষ্কের সাথে যুক্ত। কোনো কারণে এ নার্ভটি অকার্যকর হয়ে গেলে আমরা ঘ্রাণ বা গন্ধ পাই না। আর ঘ্রাণ না পেলে আমাদের জিহ্বার টেস্ট বাড যা স্বাদ পেতে সাহায্য করে, তা-ও অকার্যকর হয়ে যায়। ফলে একই সাথে নাকে ঘ্রাণ না পেলে মুখে স্বাদও পাই না।

এখন কী কী কারণে আমাদের এ অলফেক্টরি নার্ভ অকার্যকর বা অক্ষম বা নষ্ট হতে পারে—১. ঠান্ডা, এলার্জি থাকলে।২. নাকের ভেতরে বা সাইনাসে পলিপাস হয়ে নাকের ছিদ্র বন্ধ থাকলে।৩. কিছু ওষুধ খাওয়া, যেমন- এজিথ্রমাইসিন, এমপিসিলিন, জিটিএন, ক্যাপট্রোপিল ইত্যাদি কারণে।৪. জীবাণুনাশক ওষুষের সংস্পর্শে এলে।৫. মাথায় আঘাত পেলে।৬. নেশা জাতীয় দ্রব্য নাক দিয়ে গ্রহণ করা, যেমন- কোকেইন, হিরোইন, ইয়াবা প্রভৃতি।৭. কিছু রোগ, যেমন- আলঝেইমার, পারকিনসন ডিজিজ ইত্যাদির কারণে।৮. মুখে বা গলায় ক্যান্সার হলে রেডিও থেরাপি নিলে।৯. বয়সজনিত কারণে।১০. মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, যেমন- স্ট্রোক হলে।

এসব কোনো কারণ যদি কারো না থাকে। এমনকি কমন কোল্ড বা এলার্জির সমস্যা হওয়ার পর যদি কারো নাকের ঘ্রাণ নষ্ট হয়ে যায় কিংবা কয়েকদিন আগে জ্বর হয়ে ভালো হয়ে গেছে, পরে নাকের ঘ্রাণ নষ্ট হয়ে গেছে এমন হয়। তবে বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারীতে ধরে নিতে হবে এটি করোনাভাইরাসের জন্য হয়েছে। এ জন্য কোভিড-১৯ টেস্ট করানো উচিত।

Advertisement

অনেকে বিতর্ক করতে গিয়ে বলেন যে, ঘর থেকে বের হচ্ছেন না বা বাড়ির আশেপাশে কারো এ রোগ নেই। তো তার হবে কেমন করে? এর উত্তর হচ্ছে এমন, কোভিড-১৯ মহামারী এখন আমাদের দেশে স্টেজ-৪ (একান্ত আমার মতামত) পর্যায়ে আছে। এ স্টেজে জানাশোনা পজিটিভ কারো সংস্পর্শে আসতে হবে এমন নয়, উপসর্গ বা লক্ষণ ছাড়া অনেকেই পজিটিভ থাকেন, যা জানা যায় না।

এখন কথা হলো, যদি করোনা টেস্ট করতে না পারেন, তবে কী করা উচিত?উত্তরটা হলো, করোনা টেস্ট করানো সম্ভব না হলে নিজেকে কোভিড-১৯ এর রোগী মনে করতে হবে। সেভাবে আপনাকে চিকিৎসার আওতায় আসতে হবে। যেমন- শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা হলে, মাথা ঘোরালে, বুকে চাপচাপ অনুভূত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আর সে রকম কিছু না হলে—১. ঘরে আলাদা থাকতে হবে।২. ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।৩. হালকা গরম পানি খেতে হবে। ৪. সব সময় নাক পরিষ্কার রাখতে হবে।৫. দিনে অন্তত পাঁচবার গরম পানির ভাপ নিতে হবে।৬. বিভিন্ন সুগন্ধির স্টিমুলেশন নিতে পারেন।

তবে এ ক্ষেত্রে ভয়ের কোনো কারণ নেই। উপর্যুক্ত নিয়ম মেনে চললে সাধারণত ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই ঠিক হয়ে যাবে। সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।

লেখক: এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), মেডিকেল অফিসার (ওপিডি), শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।

Advertisement

এসইউ/এএ/এমকেএইচ