ফিচার

এক জনমে এ ঋণ শোধ হবার নয়

ইসরাইল আলী সাদেক

Advertisement

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি। সিলেট-১ আসনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আধ্যাত্মিক রাজধানীখ্যাত সিলেটের অভিভাবক। অনেক বড় মানুষ। বিশ্বজোড়া ব্যস্ততা তাঁর। এমন ব্যক্তিত্বের কাছে আমাদের মতো নার্সরা তো খুব ছোট মানুষ। এতো বড় মাপের মানুষের সান্নিধ্যে যাওয়া বা সান্নিধ্য পাওয়া আমাদের মতো নার্সিং কর্মকর্তারা চিন্তাই করতে পারি না।

কিন্তু অল্পদিনেই আমাদের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সিলেটের নার্সদের এতো বেশি আপন করে নিয়েছেন যে, আমরা এখন তাকে আমাদের পরিবারেরই একজন মনে করি। আমাদের দুঃখ, কষ্ট আর প্রয়োজনের কথা তাকে মুখ ফুটে বলার প্রয়োজন হয় না। দূরে থেকেও তিনি তা অনুধাবন করতে পারেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সীমানা পেরিয়ে করোনা নামক মহামারী যখন আমাদের বাংলাদেশে হানা দিল, তখন সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে নার্সরা স্বাভাবিকই কিছুটা ভীত ও আতঙ্কিত। এ সময়ে সিলেটের নার্সদের মাথার উপর ছায়া হয়ে দাঁড়ালেন মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নার্সিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তিনি সব উদ্যোগ নিলেন। ফোনে সাহস জোগালেন। বিপদে পাশে থাকার অভয় দিলেন। মন্ত্রী মহোদয়ের এই ভূমিকা উজ্জীবিত করে নার্সদের। সব ভয়-ভীতি আর শঙ্কা দূরে ঠেলে তারা নিয়োজিত হন মানবসেবায়।

Advertisement

মন্ত্রীর পক্ষ থেকে নার্সদের জন্য পাঠানো হয় পিপিইসহ সব ধরনের নিরাপত্তা সামগ্রী। মন্ত্রী মহোদয়ের এই আন্তরিকতাই হয়ে ওঠে আমাদের মতো নার্সদের বড় নিরাপত্তাবেষ্টনী। এরপর থেকে করোনা আক্রান্তদের সেবা দিতে দিতে ওসমানী ও শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের বহু নার্স আক্রান্ত হলেন। কিন্তু তাতে তাদের মনোবলে এক চিলতে চিড় ধরেনি।

মাননীয় মন্ত্রীর নির্দেশে তারা চালিয়ে যান সেবা কাজ। শুধু যে মন্ত্রী মহোদয় নার্সিং কর্মকর্তাদের জন্য করছেন, তা নয়। তাঁর সুযোগ্য সহধর্মিনী সমাজসেবী সেলিনা মোমেন ম্যাডামের কথা না বললে অবিচার হবে। আমাদের নার্সরা যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি হলেন, তখন নিয়মিত খোঁজ নিতে থাকেন ম্যাডাম। হাসপাতালে ভর্তি নার্সদের জন্য একাধিকবার পাঠান পুষ্টিকর খাবার ও ফল। স্যার আর ম্যাডামের এই আন্তরিকতা সিলেটের নার্সিং কর্মকর্তাদের মনের মধ্যে লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে।

গত শুক্রবার যখন আমাদের সহকর্মী নার্সিং অফিসার রুহুল আমিন ভাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান; তখন সত্যিই আমরা অনেকটা ভেঙে পড়ি। নিজেদের চোখের সামনে প্রিয় ভাইয়ের এভাবে চলে যাওয়া যেন আমরা কেউই মেনে নিতে পারছিলাম না। সেই মুহূর্তে মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় ও তাঁর সহধর্মিনী সেলিনা মোমেন ফোনে আমাদের সাহস জোগান। সান্ত্বনা দেন। খোঁজ নেন রুহুল আমিন ভাইয়ের পরিবারের। আশ্বাস দেন তাঁর পরিবারের জন্য কিছু একটা করার।

মৃত্যুর একদিন পেরোতে না পেরোতেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন, রুহুল আমিন ভাইয়ের একমাত্র ছেলের পড়ালেখার দায়িত্ব নেওয়ার। একজন নার্স হিসেবে এর চেয়ে বড় পাওয়ার আর কী আছে? দেশে কতো নার্স মারা যান। কে কার খবর রাখে? কিন্তু আমাদের মন্ত্রী মহোদয় সত্যিই বড় মানবিক মানুষ। তাঁর তুলনা কেবলই তিনি। তাঁর এই ঋণ এক জনমে শোধ হবার নয়।

Advertisement

রুহুল আমিন ভাই দেখে যাও, তোমার পরিবার একা নয়। তোমার পরিবারের পাশে অভিভাবক হিসেবে, স্বজন হিসেবে ছায়া হয়ে দাঁড়িয়েছেন আমাদের শ্রদ্ধেয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখা।

এসইউ/জেআইএম